কি করবে জামায়াত?

1361549103Jamaat-logo-newউত্থান-পতনের দীর্ঘ পরিক্রমা। মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতা। নানা কৌশলে এগিয়ে যাওয়া। মন্ত্রিত্ব্বের স্বাদ। এ সবই এখন অতীত। দল হিসেবে ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কর সময় পার করছে জামায়াত। শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। দুই নেতার ফাঁসি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। বাকিরা অপেক্ষায়। কী করবে জামায়াত? বিলীন হয়ে যাবে। নাকি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের প্রেসক্রিপশন অনুসরণে গড়ে তুলবে নতুন দল? জামায়াত নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার আহমেদ জামাল-
জামায়াত কি ইতিহাসের দেনা পরিশোধ করছে? এ প্রশ্ন এখন জ্বলন্ত। মুক্তিসংগ্রামের মহান দিনগুলোতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত। স্বাধীনতার পর পরই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে আবার দ্রুত পাল্টে যায় দৃশ্যপট। একপর্যায়ে ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। একদলীয় বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করে দেশ। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরই সুযোগে ১৯৭৬ সালের ২৪শে আগস্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রব্বানী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (ওউখ) নামে একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম গড়ে তোলেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০৭টি, আওয়ামী লীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়। ইসলামিক ডেমোক্র্যাটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতের ৬ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতের এটাই প্রথম উপস্থিতি।
১৯৭৯ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭শে মে ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে জামায়াতে ইসলামীর কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। আব্বাস আলী খানের ডাকা এ সম্মেলনে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। সেই গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ২৭শে মে থেকে চার দফা পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্বভার নেন আব্বাস আলী খান। ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর রাজনীতিতে অনেকটা তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটে জামায়াতের। ৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় যায় বিএনপি। তখন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠে আন্দোলন। একপর্যায়ে গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে তার নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় বিএনপি সরকার। যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গোলাম আযম নাগরিকত্ব ফিরে পান। ১৯৯৬ সালে মাগুরা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। শুরু হয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের যুগপথ আন্দোলন। এ আন্দোলনের ফলে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐকমত্যের সরকার। এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি অনেকটাই হারিয়ে যায়। পাঁচ বছরের মাথায় আবার আন্দোলন। এবার আওয়ামী লীগকে ছেড়ে বিএনপির সঙ্গী হয় জামায়াত। গঠিত হয় চারদলীয় জোট সরকার। মন্ত্রিসভায় স্থান হয় জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। মেয়াদ শেষে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা পদে রেখে নির্বাচনে যেতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এবার গঠন করা হয় মহাজোট। এ জোটের আন্দোলনের একপর্যায়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাসমর্থিত একটি সরকার। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দুই বছরের মাথায় বিদায় নেয় ১/১১-এর সরকার। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। তবে ১/১১ সরকারের সময় ফিরে আসে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই বক্তব্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢালেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত হয় যুদ্ধাপরাধের বিচারের অঙ্গীকার। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ২৯শে জুন গ্রেপ্তার করা হয় মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং আলী আহসান মুজাহিদকে। এর পর একে একে গ্রেপ্তার হন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম, গোলাম আযম ও মীর কাসেম আলী। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। কারাবন্দি অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন গোলাম আযম। এ পর্যায়ে জামায়াতের পুরো শীর্ষ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য ৭১ সালের ভূমিকাকে মুখ্য বিষয় বলে মনে করেন অনেকেই। দলটির তরুণ নেতৃত্বের ধারণাও তেমন। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল কি না- এমন প্রশ্নের সরাসরি হ্যাঁ সূচক জবাব দেন দলটির একাধিক তরুণ নেতা। তাদের মতে, এটাই জামায়াতের জন্য বোঝা এবং দলটির রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা। দলটির একটি দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, গ্রেপ্তারের আগে আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে ৭১-এর ভূমিকাকে ‘আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক এ সিদ্ধান্তের ফলে তারা কোন অপরাধ করেননি, এমনটি দাবি করেন। ওই সময় বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকও ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনার কথা বলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকার জন্য অনুশোচনা কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা করলে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া যেত বলে মনে করেন জামায়াতের অনেক তরুণ নেতা। ৭১-এর ভূমিকার জন্য যাদের দোষারোপ করা হয়, দলের শীর্ষ পদে তাদের দীর্ঘদিন থাকার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জামায়াতের অনেকের মতে, এ নেতারা একটানা ১৬-১৭ বছর নেতৃত্বে না থাকলে হয়তোবা এ পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না।
তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার দেনা এখন পরিশোধ করছে জামায়াত। আটক নেতাদের কারাগার থেকে বের করে আনতে একের পর এক অনুসরণ করা হয়েছে ভুল নীতি। এমনকি প্রকাশ্যে পুলিশের ওপর হামলাও চালিয়েছেন জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। কয়েক শ নেতাকর্মীর প্রাণ, পঙ্গুত্ব আর কারাবরণের মাধ্যমে যে ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছে। পাঁচ বছরের বেশি শীর্ষ নেতাদের শূন্যতায় ভুগছে জামায়াত। মধ্যবয়সী একডজন নতুন মুখ হাল ধরে আছে দলটির। ‘ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব’ নিয়ে তারা চালাচ্ছেন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে কোণঠাসা দলটিকে। তবে আর কত দিন চলবে এভাবে, কিংবা কত দিন চালানো যাবে সে প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন অনেকেই। কারণ এর আগে নিবন্ধন জটিলতায় রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকির মুখে জামায়াত। প্রথম সারির দুই নেতার ফাঁসি কার্যকর এবং আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেলের মৃত্যুদ-াদেশ দলের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পরিচালিত হয় জামায়াত। এ ২২ জনের মধ্য থেকে মাওলানা এ কে এম ইউসুফ, অধ্যাপক নাজির আহমাদ, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা এখন মরহুম। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস সুবহান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এটিএম আজহারুল ইসলাম ও মীর কাসেম আলী এখন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ বাকি ১২ সদস্য আছেন আত্মগোপনে। এ অবস্থায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মহানগর, জেলা-উপজেলায় পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবয়সী নেতারাই। যাদের বেশির ভাগের বয়স ৪০-৫০-এর মধ্যে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যায়ক্রমে জামায়াতের ১০ শীর্ষ নেতা কারারুদ্ধ হন। এতে নেতৃত্বের শূন্যতা কাটাতে ফ্রন্টলাইনে আসেন এসব নেতা। তাদের প্রায় সবাই ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। দলটির দায়িত্বশীল এক তরুণ নেতার মতে, শীর্ষ নেতৃত্বের শূন্যতা থাকলেও গত পাঁচ বছর জামায়াতে নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত নেতারা প্রমাণ করেছেন জামায়াত আদর্শনির্ভর, ব্যক্তিনির্ভর নয়। বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে খানিকটা সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষে মানুষে মতপার্থক্য হতে পারে, থাকতে পারে। কিন্তু তা বিভক্তি পর্যায়ে গড়ানোর কোন লক্ষণ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় নতুন নেতাদের কেউ মঞ্চ-ময়দানে নেই। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে আছেন তারা। অন্যদিকে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে আছে জামায়াত। তার পরও রাজনৈতিক মাঠে টিকে থাকতে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে দলটির বর্তমান নেতৃত্ব। বিশেষ করে দলের নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনি প্রক্রিয়া ও মাঠের রাজনীতি অব্যাহত রেখে দলের কেন্দ্র থেকে জেলা-মহানগরে অপেক্ষাকৃত নবীন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল বা দলের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে দমন-পীড়ন নেমে আসবে- এটা অনেকটা নিশ্চিত জেনেই প্রস্তুত ছিলেন নীতিনির্ধারকরা। সেই প্রস্তুতি থেকেই উঠে আসেন এই নবীনরা। এদিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর তাদের বিশ্বাস জামায়াতের নিবন্ধন টিকে যাবে। তবে কোন কারণে আপিল বিভাগের রায় বিপক্ষে গেলে বিকল্প হিসেবে কয়েকটি উপায় ঠিক করে রেখেছে দলটি। যেমন শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল হলে নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাওয়া যাবে না। সে চিন্তা মাথায় রেখেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে তাদের। সে ক্ষেত্রে বিএনপি জোটে থেকে প্রয়োজনে নিজেদের আসনে স্বতন্ত্রভাবেই ১৯ দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করবে। এজন্য সিনিয়র নেতা অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহর নেতৃত্বে জামায়াত সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকাও ঠিক করে রেখেছে। হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখলে নির্বাচন কমিশনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আবারও তারা জামায়াতের নামেই নিবন্ধন পাওয়ার চেষ্টা করবেন। যদি তা সম্ভব না হয় তখন নতুন কোন নামে দলের নিবন্ধন নেয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমমনা ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন কোন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হতে পারে। সংশ্লিরা বলেন, দলের সব শীর্ষ নেতা রাজনীতি ও নির্বাচনে যদি অযোগ্য ঘোষিত হন, সে ব্যাপারেও করণীয় ঠিক করে রেখেছে জামায়াত। অবশিষ্ট সিনিয়র ও নবীন নেতৃত্বের সমন্বয়ে দলকে পুনর্গঠিত করা হবে। তাদের মতে, দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিউদ্দিন আহমাদ ছাড়া বর্তমান নেতৃত্বের বেশির ভাগই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। দলের বর্তমান ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ৯০-এর দশকে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ডা. সৈয়দ আবদুুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম, সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। একইভাবে দলের মহানগর শাখাগুলোতেও ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা নেতৃত্বে চলে এসেছেন। ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। আরেক নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুুল হালিমও ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল। ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুলও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তারা একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদেরও সদস্য। ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম উদ্দিন, বর্তমানে কারাগারে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও সাবেক শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। এর বাইরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড শাখাতেও শিবিরের সাবেক নেতারা দায়িত্বে আছেন। চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা শামসুল ইসলাম। একইভাবে খুলনা মহানগরী আমীর আবুল কালাম আযাদ শিবিরের অর্থ সম্পাদক ছিলেন। রাজশাহী মহানগরী আমীর অধ্যাপক আতাউর রহমানও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সিলেট মহানগরী আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া বরিশাল মহানগরী আমীর অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, রংপুর মহানগরী আমীর অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বেলাল ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কক্সবাজার জেলা আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান ছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। সংশ্লিষ্টরা জানান, শেষ পর্যন্ত যদি দলটির নিবন্ধন বাতিল হয় এবং শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ের কারণে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ আমীরের দায়িত্ব পেতে পারেন। ইতিমধ্যে নায়েবে আমীর হয়েছেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ ছাড়া ডা. শফিকুর রহমান, রফীউদ্দিন আহমাদ, অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহসহ কয়েকজন সিনিয়র নায়েবে আমীর হতে পারেন। প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম কিংবা বর্তমান ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খানের মধ্যে যে কেউ হতে পারেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল। অবশ্য এ দুজন ছাড়াও অতীতে শিবিরের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব পালনে পরীক্ষিত এমন যে কেউ সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নামও শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর হামিদুর রহমান আযাদ, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল হালিম, সিলেট মহানগরী আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, চবির সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, রাজশাহী মহানগরী আমীর আতাউর রহমানও কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হতে পারেন। দলের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি হতে পারেন মতিউর রহমান আকন্দ। তেমনটি হলে ঢাকা মহনগরীর আমীর হতে পারেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল। কক্সবাজার জেলা আমীর ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহজাহানকে দেয়া হতে পারে চট্টগ্রাম মহানগরীর দায়িত্বে। রাজশাহীর নেতৃত্ব তুলে দেয়া হতে পারে শিবিরের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ইমাজ উদ্দিনের হাতে। এ ছাড়া শিবিরের সাবেক সভাপতি এনামুল হক মঞ্জু, মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সেলিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জাহিদুর রহমান, ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক পেতে পারেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ। এর আগে দলটির ১৫টি সাব-কমিটি সারাদেশ সফর করে রুকনদের সঙ্গে বৈঠক করে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলের করণীয় বিষয়ে মতামত নিয়েছে। দলের এ ক্রান্তিকালে রুকন সম্মেলন ও শূরা সদস্যদের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন-পরিবর্ধন সম্ভব হচ্ছে না। তাই রুকন ও মজলিসে শূরা সদস্যদের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দলটি। ফলে যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন দায়িত্বশীলরা। তবে চলমান বিপর্যয় আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেই জামায়াতের সংশ্লিষ্টদের ধারণা। মানবজমিন


শেয়ার করুন