কিডনির সবচেয়ে বড় শত্রু ‘ভেজাল খাদ্য’

কিডনির প্রতীকী চিত্র

প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে প্রতিবছর কিডনিজনিত রোগে মারা যাচ্ছে কমপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষ। এ হিসেবে কিডনি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ জন। দুর্ভাগ্য যে, শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি কিডনি রোগীর মৃত্যু হয় বিনা চিকিৎসায়।

 এ রোগের চিকিৎসা এতই ব্যয়বহুল যে, এদেশে শতকরা পাঁচ ভাগ লোকেরও সাধ্য নেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাবার। তাই কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় রোগের কারণ ও রোগ সনাক্ত করে প্রতিরোধে সচেষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারী সেবাও সহজলভ্য করতে হবে। আশার কথা, প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা গেলে এই রোগ চিকিৎসাযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য।

 ৮০ ভাগ অকেজো হওয়ার পর রোগীরা জানতে পারেন যে, তার কিডনি অকেজো হচ্ছে। দেশে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন ডাক্তার আছেন যারা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে জানেন। যেসব হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা করে সেগুলো বেশিরভাগ সরকারি। এতে সন্তোষজনক অর্থ না পাওয়ায় ওইসব ডাক্তার কিডনি অপারেশনে উৎসাহী হন না। কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হলেও বাঁচার একমাত্র উপায় ডায়ালাইসিস। কিন্তু এর খরচ বেশি হওয়ায় শতকরা ১০ জন দীর্ঘমেয়াদি কিডনিরোগী চিকিৎসা চালাতে পারেন না।

 বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি বিকলের প্রধান কারণ নেফ্রাইটিস। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য। প্যারাসিট্যামল ছাড়া সব ধরনের এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রথম করণীয় প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করা। এরপর মাইক্রো এলবোমিন পরীক্ষা করতে হবে।

 কিডনির জন্য বড় সমস্যা ভেজাল খাদ্য। ভেজাল খাদ্যর জন্যই আমাদের দেশে এই রোগের হার উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক বেশি। ডায়ারিয়া, বমি, প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ, দূর্ঘটনাজনিত কারণে রক্ষক্ষরণ, হারবাল-হোমিও-কবিরাজি ওষুধ সেবন, নিয়ন্ত্রণহীন বেদনানাশক ওষুধ সেবন, ম্যালিরিয়া, ডেঙ্গু, সাপ-বিচ্ছু-পোকা-মাকড়ের কামড় ও ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে আকস্মিক কিডনি বিকল হয়।

 খাদ্যে ভেজালের কারণে অসহায় জনগণ। আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে বহু যুগ আগে থেকেই। তবে যত দিন যাচ্ছে ততই ভেজাল মেশানোর ব্যাপকতা বাড়ছে। আগে খাদ্যে ভেজাল বলতে দুধে পানি মেশানোকেই বুঝাতো। এ দুধে পানি মেশানোয় প্রতারণা ছিল, কিন্তু স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ছিলনা। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর মধ্য থেকে অপ-বিজ্ঞানকে খুঁজে বের করছে এবং এই অপ-বিজ্ঞানকে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কাজে ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, তারা নকল খাদ্য উপাদানও বের করছে। এগুলোতে প্রতারণাতো রয়েছেই, তার চেয়ে বেশি রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আজকের বাংলাদেশে মানুষ খাদ্য সামগ্রীর নকল-ভেজালের কারণে অত্যন্ত অসহায়।

 খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে নানাভাবে। যেমন- পচনরোধে ব্যবহৃত ফরমালিন এখন মাছ, দুধ, মিষ্টি ও ফলে মেশানো হচ্ছে। আবার বাহারি কৃত্রিম রং মেশানো হচ্ছে সবজি, ফল ও মিষ্টিতে। গুঁড়া-মশলায় মেশানো হচ্ছে ইটের গুড়ো ও কৃত্রিম রং। খাদ্য ও পানীয়তেও স্বাস্থ্য ক্ষতিকর কৃত্রিম রং মেশানো হচ্ছে। আম, পেঁপে, কলা, টমেটো প্রভৃতি কৃত্রিমভাবে পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথ্রেল ইত্যাদি। শুটকি মাছে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর কীটনাশক ডিডিটি।

 খাদ্যে ভেজালে রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। ফরমালিন অত্যন্ত বিষাক্ত। নিয়মিত ফরমালিন যুক্ত খাবার খেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিডনি, লিভার ও পাকস্থলির ক্ষতি হয়। কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার খেলে ক্যান্সারতো হতেই পারে। ক্ষতি হয় লিভার, কিডনি, হৃৎপিন্ড ও অস্থিমজ্জারও। পাকানোর জন্য ব্যবহৃত কার্বাইড ও ইথ্রেলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও ক্ষতি করে লিভার ও কিডনির। ডিডিটি একটি নিষিদ্ধ কীটনাশক, এর প্রভাবে দেহে ক্যান্সারসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।


শেয়ার করুন