এলাকাবাসীর মাঝে আতংক

কালারমারছড়া বিট পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য

a5c41ac248a3e5b1e68c6582153bc50b-5745b91da8b55নিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ফাঁড়ি পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ডাকাতির অভিযোগে রাজনৈতিক দলের কর্মী, সাধারণ কেটে খাওয়া নিরীহ লোকজনসহ অজ্ঞাতানামা আসামী গ্রেফতারের নামে পুলিশ বেপরোয়া ঘুষবাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে। নিরীহ মানুষদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে ধরে এনে চাহিদামতো অর্থ দিতে না পারলে একাধিক ডাকাতি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে ভূক্তভোগিরা অভিযোগ করেছেন। এত গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ১০ জুলাই কালারমারছড়া দুই ডাকাত দলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাত নিহত ও অস্ত্র গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। কালারমারছড়া মাঝের পাড়া পাহাড়ী এলাকায় স্থানীয় বিবাদমান দুই ডাকাতদল ফরিদুল আলম ও আরোকটি ডাকাত গ্রুপের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ফরিদুল আলম (৪০) কালারমারছড়া মাঝের পাড়া গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৪ টার দিকে মাঝের পাড়া পাহাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে পরস্পর বিরোধি বক্তব্য পাওয়া গেছে, অপরদিকে ফরিদুল আলমের ভাই মনির আহমদ জানান, ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দুই বিবদামান ডাকাত গ্রুপের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় আমার ভাই মারা যায় বলে পুলিশ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানায়। মুলত পুলিশ আটক করে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা সাজিয়ে আমার ভাই ফরিদকে গুলিবিদ্ধ করে নিহত করে। কিন্তু পুলিশ বলছে ডাকাতের গুলিতে ফরিদ মারা গেছে। কালারমারছড়া ডাকাত ফরিদ হত্যার ঘটনায় ১২ জুলাই মঙ্গলবার রাতে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ১৪ জনের নাম উল্লোখ করে আরো ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় নিরীহ লোকজনের মধ্যে আসামী করা অভিযোগ উঠেছে। উক্ত মামলায় কালারমারছড়া উত্তরনলবিল মাঝের পাড়ার শফিউল আলমের পুত্র জমির উদ্দিনকে হয়রানী মূলক আসামী করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন তার পরিবার। সচেতন মহল বলছে পুলিশ এ মামলাকে পুঁজি করে আটক বাণিজ্য করার ভয়ে সাধারণ মানুষ গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে।
অপরদিকে নিরপরাধ পথচারী লোকজনকে অহেতুক আটক করে বিট ক্যাম্পে নিয়ে এসে হত্যা, ডাকাতি,নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বেপরোয়াভাবে আটক বানিজ্যর অভিযোগও রয়েছে। এ আটক বানিজ্য চরম আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার সাধারণ লোকজন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তরুণ আ.লীগ নেতা জাকারিয়া জানান, থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কালামারছড়া টেকপাড়া এলাকার মৃত উকিল আহমদের পুত্র কালাজাঙ্গীর ও নোনাছড়ি গ্রামের মোঃ আলী, মাইজপাড়া এলাকার লিটনসহসহ বিভিন্ন হত্যা, ডাকাতি মামলার আসামী কালারমারছড়া পুলিশ বিটের ১’শ গজের মধ্যে প্রকাশ্য চলাফেরা করলে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছেনা। কালারমারছড়া পুলিশের আইসি বোরহানের সাথে এসব সন্ত্রাসীদের সাথে গোপনে মহরম দহরম সর্ম্পক থাকায় তাই তাদেরকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অপর দিকে বলতে গেলে উওর মহেশখালী বাসী এখন চরম আতংক ও জিম্মি অবস্থায় রয়েছে কালারমারছড়া পুলিশ বিটের আইসি বোরহানের কাছে। আর এসব বিষয়ে তদারকি করেন কালারমারছড়া বিটের ইনর্চাজ এস আই বোরহান নিজেই।
প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, এস.আই বোরহান এ বিটে যোগদান করার পর থেকে, হাবিলদার, নায়েক, তিন কনষ্টেবল নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন আসামী ধরার নাম করে অভিযানও টহল দায়িত্ব পালন করতে গেলে বিটে ফেরার পথে এ সিন্ডিকেট বিভিন্ন এলাকা হতে আসামীদের সাথে দৈনিক ৪/৫জন নিরপরাধ নিরহ পথচারী, এবং বাড়ী ঘরের হানা দিয়ে সাধারণ লোকজনদের বিটে আটক করে নিয়ে আসে। এর পর দালাদের মাধ্যমে আটককৃতদের বাড়ী ঘরের অভিবাভকদের ফোন করে বিটে নিয়ে আসে। বিটে এলেই চলে দরকষাকষি জনপ্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে প্রস্তাব করে এস. আই বোরহানসহ এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। দাবীকৃত টাকা দিতে না পারলে হত্যা ,ডাকাতি, নারী নির্যাতন মারা-মারি মামলা ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানে হয়। এর পর আত্মীয়রা যে যার মত জনপ্রতি ৭/৮ হাজার টাকা দিয়ে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। মহেশখালী উপজেলার বর্তমান সবচেয়ে বেশি আটক বাণিজ্য হচ্ছে কালারমারছড়া উত্তর ঝাপুয়া, মাঝের পাড়া, উত্তরনলবিলা-চালিয়াতলী। এ এলাকার সাধারণ মানুষ এখন পুলিশ দেখলে ভয়ে পালিয়ে যায়। আর যারা থাকে তারাও সন্ধ্যা হলে দরজা বন্ধ করে ঘর হতে বের হতে চায় না। কারন যাদের বাড়ীতে আসামী নাই সম্মানি ব্যক্তিদের বাড়ীতে অভিযান চালায় পুলিশ। উপজেলা যুবলীগের নেতা আজিমুল হাসান জানান, এস আই বোরহান আ.লীগের নেতাদের উপর গভীর ভাব জমালেও বি,এনপি সমর্থিত সন্ত্রাসীদের সাথে রয়েছে গোপনে গভীর সম্পক। যুবলীগ নেতা মুজিব উল্লাহ বাদল, এস আই পরশ কুমার ত্রিপুরা, জবলসহ জাফর হত্যার আসামীদের না ধরে পুলিশ প্রতিদিন নিরপরাধ নিরীহ লোকজনদের ধরে নিয়ে এসে বিটে আটক বাণিজ্য করে অভিযোগ রয়েছে। কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা সম্প্রতি কালারমারছড়ার নুনাছড়ি, আধাঁর ঘোনা, আফজলিয়া পাড়া, উওরনলবিলা,হতে আবছার, লেডুমিয়া, আমির হোসেন, বদি আলম, রেজাউল করিম, রিদুয়ান, ফরিদ, সেলিম নামে ১০/১২জন নিরপরাধ নিরহ ব্যক্তিকে আটক করে বিটে নিয়ে আসে। এই সময় তাদেরকে বিভিন্ন সাজানো মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়া জনপ্রতি ৫/৭ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলে সে সময় ব্যাপক রব উঠে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্ত ভোগি জানিয়েছেন।
অপরদিকে সন্ধ্যা হলে মহেশখালীতে স্থল পথের প্রবেশদ্বার কালারমারছড়া চালিয়াতলী-শাপলাপুর সড়কে অঘোষিতভাবে চেকপোষ্ট বসিয়ে মালবাহি পানের গাড়ী, লবণের গাড়ী, জীপ, মাইক্রো, বাস মহেশখালী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার সময় এবং মহেশখালীতে প্রবেশ করলে এসব গাড়ী আটক করে প্রতি গাড়ী ৩/৪শ” টাকা করে চাঁদা আদায় করে তার পর গাড়ী ছেড়ে দেয় বলে ব্যবসায়ারী জানিয়েছেন। কোন গাড়ীর ড্রাইবার পুলিশ বিটের চাঁদা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে তাদের উপর নেমে আসে চরম শাররীক ও মানসিক নির্যাতন। ব্যবসায়ারী অভিযোগ করে বলেন, এই কালারমারছড়া বিট ক্যাম্প প্রতিষ্টিত হওয়ায় এলাকাবাসীর কাছে স্বস্থি ফিরে আসছিল কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তার উল্টো। আমাদের এই জানমালের নিরাপত্তার নিয়োজিত এই পুলিশকে আমাদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসতে হয়। আমরা চাঁদা না দিলে আমাদের দোকান পাট পানের বাজারে এসে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকিসহ মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করো। এখানো নিরবে চললে নিয়মিত পুলিশের চাঁদাবাজি এবং আটক বানিজ্যের মহোৎসব। তাই আমরা পুলিশি হয়রানী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার জরুলী হস্তেক্ষেপ কামনা করি।


শেয়ার করুন