কামারুজ্জামানের বিচার ত্রুটিপূর্ণ, ফাঁসি বন্ধ করুন : জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন

আমাদের সময়.কম:
জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জমানের বিচার ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে তার ফাঁসি বন্ধ করার আহিবান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন । গতকাল ৮ এপ্রিল জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই আহবান জানানো হয় । বিবৃতিতে বলা হয়, এর আগেও বলা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়াটিতে অনেক অসঙ্গতি আছে । এমনকি ঐ বিচারের অনেক আইন আন্তর্জাতিক মানদ-ের মধ্যেও পড়ে না। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন আরও উল্লেখ করেন, মৃত্যুদ- বাতিলের পিটশনটি ভালো ভাবে না বিবেচনা করেই বাতিল করা হয় ।
বিবৃতিতে, সকল ধরনের মৃত্যুদ- থেকে বের হয়ে আসতে বাংলাদেশ সরকারকে আবারোও আহবান জানান হয় ।
আমরা অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মোহাম্মাদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। কামারুজ্জামানকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছে। এই গোটা বিচার প্রক্রিয়া নিয়েই অনেক প্রশ্ন এবং অভিযোগ রয়েছে। এই বিচারের মোটেও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ইতোপূর্বেও বাংলাদেশ সরকারকে এই ধরনের বিচারে মৃত্যুদন্ডের মত চুড়ান্ত শাস্তি বাস্তবায়ন না করার আহবান জানিয়েছিল কেননা কথিত এই মানবতা বিরোধী বিচারটি আসলে অসংগতিতে পরিপূর্ন। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ট্রাইবুনাল এই পর্যন্ত ১৬টি রায় দিয়েছে তার মধ্যে ১৪টিতেই বাংলাদেশের বিরোধী দল তথা বিএনপি ও জামায়াতের ১৪ জন নেতাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। বিরোধী এই সব নেতাকে গনহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং অন্যন্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের মে মাসে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয় এবং আপীল বিভাগ ২০১৪ সালের নভেম্বরে এসে সেই মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখে। তিনি সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৫ মার্চ একটি রিভিউ পিটিশন দায়ের করেন কিন্তু আপীল বিভাগ সেই রিভিউ আবেদনের মেরিট বিবেচনায় না নিয়ে তা খারিজ করে দেয়।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনেন্ট অন পলিটিকাল এন্ড সিভিল রাইটসে সাক্ষরকারী একটি দেশ। সেটাকে বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন মনে করে মৃত্যুদন্ডের মত রায় বাস্তবায়ন করার জন্য স্বচ্ছ ও মানসম্মত বিচার হলো মুল শর্ত। যদি কোন বিচার নিয়ে প্রশ্ন থাকার পরও অভিযুক্তকে মৃত্যুদন্ডের মত শাস্তি দেয়া হয় তাহলে তা হবে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন।
জাতিসংঘ যে কোন ধরনের অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রেই মৃত্যুদন্ড প্রদানের ঘোর বিরোধী। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের মৃত্যুদন্ডাদেশের উপর স্থগিতাদেশ আরোপ করার আহবান জানাই এবং মৃত্যুদন্ডাদেশের মত অমানবিক শাস্তিকে যে সকল দেশ বাতিল করেছে তার সাথে সহমত প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।


শেয়ার করুন