কলেজ ছাত্র সুজনের আর্তনাদ-“আমাকে বাঁচাও”

cgc sumonমিনার হাসান:
১৬ ডিসেম্বর, বাঙ্গালি জাতির এক অবিস্মরণীয় দিন। সকল অত্যাচার, শোষণের বাঁধ ভেঙ্গে পৃথিবীর বুকে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ নামের একটি দেশ।১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ সকালবেলা, কক্সবাজার সদর উপজেলার পি.এম.খালী ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নুরুল ইসলামের বাড়ির ভাঙ্গা ছাউনির কোণ দিয়ে, বিজয় মাখানো রক্তিম লাল সূর্যের মিষ্টি, মৃদু আলোক রশ্মি তার চোখে পড়েছে, উঠে পড়লেন তাড়াতাড়ি। চোখ কষতে কষতে উঠানের এক প্রান্তে পড়ে থাকা লাঙ্গল-কুদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মাঠের দিকে। বিজয় দিবস মানে কি? তেমন কিছু বুঝেন না নুরুল ইসলাম। স্মৃতিশোধে গিয়ে ফুল দেওয়া, আলোচনা সভা ইত্যাদি টিভিতে দেখেছেন তিনি। কিন্তু এসব, তার করা সম্ভব নয়। মাঠে না গেলে যে, তার পরিবারের আহার জোটবে না। তার প্রিয় ছেলেমেয়ে কে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে পারবে না। ছোট একটি কুড়েঁ ঘরে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী শম্পা বেগমকে নিয়ে সুখী পরিবার নুরুল ইসলামের। বড় ছেলে নুর সুজন কক্সবাজার সরকারি কলেজে ইংরেজী বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে, ছোট ছেলে মুদির দোকানে চাকরী ও মেয়েটি ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। তাই বড় ছেলে সুজনের বড় স্বপ্ন, পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হবে যে। তার বাবা কে ভোরে আর মাঠে যেতে হবে না। মাকে ছেড়া শাঁড়ী আর পড়তে হবে না। ভাই ও বোনকে নিয়ে সুন্দর একটি বাড়ি করে থকবে সুজন। কিন্তু সব স্বপ্ন সত্যি হয় না। সব বিজয়ের সকাল সবার জন্য বিজয় বয়ে আনেনা। সুজন আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালে। তার চোখ আর স্বপ্ন দেখেনা, কিন্তু চিৎকার দিয়ে বলে ’আমাকে বাচাঁও’। গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে প্রতিদিনের মত কলেজে গিয়ে ছিল নুর সুজন। বিজয় দিবস উপলক্ষে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছিল কলেজে। একটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে সুজন। খেলাকে কেন্দ্র করে, কলেজের অন্য কিছু ছাত্রের সাতে কথা কাটাকাটি হয় তার,। এক পর্যায়ে কয়েকজন কলেজ ভবনে ছুরিকাগাত করে সুজনকে। গুরুতর আহত অবস্থায় কলেজের সহপাঠি ও শিক্ষরা প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় সুজনকে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি আছে সুজন। অবস্থা আশংখ্যাজনক, কয়েকবার অপারেশন হয়েছে ইতিমধ্যে। কিডনীতে পচঁন ধরেছে, দরকার কয়েক লক্ষ টাকা। নিঃস্ব পরিবারটি এখন ঘোরছে মানুষের ধারে ধারে । খবর নিয়ে জানা গেল ’’মামলা হয়নি এখনো। পিতা নুরুল ইসলাম জানান আমি গরিব মানুষ চিকিৎসার টাকা নেই, মামলা কি ভাবে করুম। ঝামেলাই যাইতে চাই না আমার ছেলে কে বাচাঁতে চাই” বলে কান্না করছিলেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হল এতগুলো ছাত্রের সামনে দিন-দুপুরে সুজনকে আঘাত করা হল, কলেজে একটি মানববন্ধন হল না। কলেজ প্রসাশন কোন আইনগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করল না। এমন হাজারো প্রশ্ন, ৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের সবুজ ক্যাম্পাসকে, যে দুষ্কৃাতীকারীরা রক্তাক্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া কি প্রয়োজন নেই? যে ছাত্ররা আগামীর নেতৃত্ব, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া কলেজের কি দায়িত্ব ছিলনা? জানিনা, সুজন বেঁেচ থকবে কি ? থকবে না। আল্লাহ্ তারঁ নিয়ন্ত্রক। কিন্তু আমাদের বিবেক, আমাদের কি ক্ষমা করবে? হয়ত সুজন বিজয়ের স্বাদ পাবে, আমরা হব পরাজিত। ৫২,৬৯,৭১ সালে জেগে উঠেছিল ছাত্র সমাজ, বাংলাদেশ বির্নিমানে ছাত্রদের ভ’মিকা অপরীসীম। তাই ছাত্র সমাজ আবার জাগ্রত হোক অন্যায়ের বিরোদ্ধ। আর ভেঙ্গে যেন না যায় একজন সুজনেরও স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় সু-শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে আমার বাংলায়,। বিদ্রোহী কবির কন্ঠে আবার বাজোক-
মহাবিদ্রোহী রণ ক্নান্ত
 আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপিড়িতের ক্রন্দন রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবেনা

অত্যাচারের কড়গ- কৃপাণ ভীম রণভূনে রণীবেনা।


শেয়ার করুন