কলেজ গেটে টেবিল বসিয়ে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

1445445749সিটিএন ডেস্ক:

কলেজ গেটে টেবিল বসিয়ে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজিঢাকা কলেজে অনার্সে ভর্তির আবেদনপত্র জমা দিতে আসা সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদা তুলছেন কলেজটির ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা। প্রত্যেক ভর্তিচ্ছুর কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন তারা। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী ছাত্র ও তাদের অভিভাবকরা। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ঢাকার বাইরে থেকে আসা দরিদ্র শিক্ষার্থীরা। তিন স্তরে এ চাঁদাবাজি চলছে। অন্যদিকে চোখের সামনে এ ধরনের অপকর্ম দেখেও নীরব কলেজ কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিন ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটক দিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ফাইল নিয়ে ঢুকলেই তাকে টানাহ্যাঁচড়া করছেন কলেজের তথাকথিত ‘বড় ভাইরা’। গেটের ভেতরে ৮-১০টি গ্র“পে ভাগ হয়ে চেয়ার-টেবিল নিয়ে রীতিমতো অফিস খুলে বসেছেন তারা। সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় ভর্তিচ্ছুদের। এরপর কাগজপত্র দেখে দেওয়ার কথা বলে ভয় দেখানো হয় তাদের। এক সময় ‘তিনিই সবকিছু ঠিক করে দিয়েছেন’ দাবি করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন টেবিলে বসা ছাত্রলীগকর্মীরা। এভাবে প্রথম ধাপ পার হতেই দ্বিতীয় চেকপোস্টের বড় ভাইদের হাতে পড়তে হয় ভর্তিচ্ছুদের। তারা মোবাইল ব্যাংকিং শিওর ক্যাশে আবেদন ফরমের ২৫০ টাকা রিচার্জ করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে নিচ্ছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এরপরই রয়েছে তৃতীয় চেকপোস্ট। কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা নেয়। এরপর অফিস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু টেবিল নিয়ে বসা ছাত্রলীগকর্মীরা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আবেদনপত্রগুলো তাদের জিম্মায় নিচ্ছেন।
এ সময় ভর্তিচ্ছুদের বলা হয়, তারা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। সেক্ষেত্রে কলেজের স্টাফদের একটি সিন্ডিকেট সহায়তা করে থাকে বলে জানান ‘বড় ভাইরা’। এসব স্টাফ অফিস সময়ের পরও নিয়ম ভেঙে ফরম জমা করেন। এ ধাপে ছাত্রদের গুনতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এই ধাপের টাকার ভাগ ওই স্টাফদের পকেটেও যায়।
এ রকম তিন স্তরে বাড়তি চাঁদা দিয়ে আবেদন ফরম জমা দেওয়া এক শিক্ষার্থী দীপ্ত রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমার সব কাগজ ঠিকই ছিল। তারপরও তা চেক করার কথা বলে দুই দফায় ৩৭০ টাকা নিয়েছেন কলেজের ‘বড় ভাইরা’। ভর্তিচ্ছু আরও অনেকেই একই অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে সংগঠনের কর্মী ফারুক নিহত হওয়ার পর ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তারপরও বর্তমানে ১২ থেকে ১৪টি গ্র“পে বিভক্ত ছাত্রলীগের আধিপত্য বজায় রয়েছে কলেজটিতে। মাদারীপুর ব্লকের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি হেমায়েত খান, যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ জুয়েল ও ময়মনসিংহ ব্লকের নেতৃত্ব দেওয়া প্রচার সম্পাদক সোহেল ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব টাকার ভাগ যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট অনেকের পকেটেই।
মনি নামে এক ‘বড় ভাই’ গেটে দাঁড়িয়ে ভর্তিচ্ছুদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিলেন। তিনি ইয়াসিন গ্র“পের। পরিচয় গোপন করে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিস খোলা-বন্ধ কোনো ব্যাপার নয়। সন্ধ্যার পরও ফরম জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারব। ছাত্র নিয়ে আইসেন।’ আরেক বড় ভাই এ সময় এক ভর্তিচ্ছুকে বলছিলেন, ‘ঢাকা কলেজে ভর্তি হবা টাকা দিবা না। তা হবে না।’
শাহরিয়ার হোসেন ও তৌফিকুল ইসলাম নামে দুই অভিভাবক বলেন, এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা স্রেফ চাঁদাবাজি। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।
এই চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডা. তুহিন আফরোজা আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।
তবে এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ঝামেলামুক্ত করতে এবার অনলাইনে আবেদনের পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্র জমা দিতে গিয়েও যদি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সেটা খুবই দুঃখজনক। ছাত্র সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে নৈতিকতাবিবর্জিত কিছু মানুষ এমন চাঁদাবাজি করলে সেটা মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি আরও জানান, গতকাল পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারা দেশের কলেজগুলোয় ৫ লাখ ১৭ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে।
পুলিশের ধানম-ি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রুহুল আমিন সাগর আমাদের সময়কে বলেন, এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে কিংবা ভুক্তভোগী ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ফুয়াদ হাসান পল্পব বলেন, ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকার কারণে কথিত ছাত্রনেতা এসব অপকর্ম করছে। ভর্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসের জুনিয়রদের দিয়ে এসব করানো হচ্ছে। এর প্রতিকার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। দৈনিক আমাদের সময়


শেয়ার করুন