করোনায় প্রবাসীরা কষ্টের এক ফেরীওয়ালা

নূর মোহাম্মদ রানাঃ

বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রমিক প্রেরণকারী একটি দেশ,প্রতিবছর এদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ কর্মসংস্হানের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পেশায় চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আসছে, যা বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ।

কিন্তু এই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী বৃহৎ জনগোষ্টিই আজ বাধ্য হয়েই যাপন করছেন মানবেতর জীবন
তারা প্রবাসী কিংবা অভিবাসী শ্রমিক – যাই বলিনা কেন তাঁরাও মানুষ, আমাদের ভাই-বোন, আত্মীয়- পরিজন,, তাদেরও বিশ্বজনীন স্বীকৃত অধিকার রয়েছে – ১৯৯০ সনের আন্তর্জাতিক সনদের আলোকে অভিবাসী শ্রমিক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এমন একটি রাষ্ট্রে আয়সৃষ্টিকারী কাজে নিয়োজিত আছেন অথবা ছিলেন যার তিনি নাগরিক নন এই সংজ্ঞাটি উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনূভব করলাম এই কারণে যে এই সংজ্ঞাটির আওতা ব্যাপক, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মানবিক ব্যাপক আয়োজনে আমাদের প্রবাসীরা সুফল পাচ্ছেন না, উক্ত সংজ্ঞার বিশাল ব্যাপকতা এই ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা না করেও বলা যায় কনভেনশনটি অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের প্রতি সমভাবে মানবাধিকার প্রয়োগের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কী দেখছি আমরা,
এই বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে গোটা দুনিয়া জুড়ে যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে প্রবাসীরা তা কল্পনাতীত, যদিও এই সমস্যা আমাদের একার নয় এই দুর্যোগ বিশ্বব্যাপী হলেও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্র এবং তার নাগরিকগনই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বেশি, আর সেই প্রবাসী তো নয় যেন কষ্টের ফেরিওয়ালা কর্মহীন প্রবাস জীবন কতো যে যন্ত্রণার তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। কতটা সাধনা আর ত্যাগের বিনিময়ে কর্মের আশায় বিদেশ যাওয়া, সেই বিদেশে যখনই কর্মহীন প্রবাসী তখন তার কষ্টের অন্ত থাকে না,
কাজ নেই মানে বেতন নেই আর বেতন না থাকার মানে হচ্ছে দূর্ভাগ্যের পথে যাত্রা শুরু।
খাদ্যের জোগান যেমন অপরিহার্য, আছে থাকার সমস্যা, বাসাভাড়া যেন খাদ্যের চেয়েও জরুরি, পরিচিত কাউকেই যখনই ফোন করি – শুনি তাদের চরম দুঃখদুর্দশার কথা,
সাবেক ছাত্রনেতা প্রিয় অনুজ মহিউদ্দিনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়, কথা বলে যা অনুমান করি আসলে প্রবাসীর কষ্ট গুলো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এই লকডাউনে শুধুমাত্র আর্থিক এবং পারিবারিক চিন্তায় অনেক প্রবাসী মারা গিয়েছে,
চিকিৎসা নেই , খাদ্য নেই, দেশে আসারও সুযোগ নেই, একটি কষ্টের চেয়ে অন্যটি যেন আরো বড়ো,,
মোহাম্মদ করিম দুবাই ও মোহাম্মদ আলমগীর কাতার প্রবাসী এর সাথে কথা বলে যেটুকু জানলাম শতো সমস্যায় জর্জরিত প্রবাসীরা-যাদের ভিসা জটিলতা রয়েছে তারা বেশি বিপদে আছেন,
চাকরি নেই, বেতন নেই, অবৈধভাবে থাকার ফলে আইনী সহায়তা পাওয়ারও সুযোগ নেই,
এই করোনা পরিস্থিতিতে কোনো কোনো দেশে বাংলাদেশ সরকার খাদ্য সহায়তা পৌঁছনোর কথা শুনেছি কিন্তু তা কেউ পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না। খাদ্য,চিকিৎসা, ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা,লাশ দেশে আনার ব্যাপারে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের অসহযোগিতার অভিযোগ অনেক পুরোনো, এই ব্যাপারে সরকারের আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এমতাবস্থায় সরকার যদি প্রবাসীদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশ পিছিয়ে যাবে কয়েক যুগ।আর সেই বিবেচনায় আমাদের ভাবনাও বেশি সময়ের সাথে বেড়ে চলা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন উন্নয়ন -অগ্রযাত্রার চাকা, লকডাউনের মতো কঠোর-কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি আজ মানব জাতি, সবকিছু ছেড়ে জীবন রক্ষায় যেন একমাত্র ব্রত, এরই সাথে যোগ হলো ক্ষুধা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ, এই কঠিন চ্যালেঞ্জ নতুন নয় তবুও এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ তার নিজের পরিবার পরিজনবর্গের প্রাণ বাচাতে নিতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি ত্রাণ নির্ভর হয়ে পড়েছে অসহায় হতদরিদ্র মানুষ, যেভাবেই হোক জীবন রক্ষার সংগ্রাম স্বদেশে একরকম – কিন্তু ব্যতিক্রম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনরা, যারা কঠোর পরিশ্রম করে সচল রেখেছেন আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা, তারা শ্রমিক বলেই হয়তো প্রতিনিয়োত অবজ্ঞা অবহেলার স্বীকার, দেশের বাইরে যেমন দেশেও তারা শুরু থেকেই প্রতারিত হয়, যেমনটি এখন বলার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকটি বৈধ নাকি অবৈধ আচ্ছা তর্কের খাতিরে যদি বলি শ্রমিকটি ‘ অবৈধ ‘ তবুও আমি বলবো ঐ প্রবাসী শ্রমিক প্রতারণার স্বীকার কীভাবে,
দেশে এক শ্রেণির অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের দালালদের দ্বারা প্রতিনিয়োত প্রতারিত হওয়ার খবর নতুন নয়, বিদেশ গিয়েও বঞ্চিত নির্যাতিত হচ্ছেন ঐসব প্রবাসী শ্রমিক। এসব কিছুর মূলে হয়তো একজন প্রবাসীর অসচেতনতা বা অজ্ঞতা ছিল, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যের অভাব যে ছিল না সেকথা বলা যাচ্ছে না, যদি তাই হয় সঠিক তথ্যের অভাবের বিষয়টিও আমাদের ভাবা উচিত গুরুত্বের সাথে।
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই এই প্রতারণা ও বঞ্চনা বন্ধ করা সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন, যদিও সরকারের পাশাপাশি ওয়ারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন সহ বেশ কিছু বেসরকারী সংগঠন অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে – তৃণমূল পর্যায়ে জনসাধারণের সম্পৃক্ততায় বিভিন্ন কর্মসূচি এবং গনসচেতনতামূলক পরামর্শ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

এতো কিছুর পরেও একজন প্রবাসীর মানবিক মর্যাদা টুকু সেভাবে রক্ষা না হওয়া সত্যিই দুঃখজনক
একজন মানুষ তার মা-বাবা, আত্মীয় – পরিজন ছেড়ে অন্যত্র সম্পূর্ণ অচেনা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয় কেন, এই কেন’র উত্তর খুঁজতে হয়তো আমাদের যেতে হবে কোনো গবেষণায় হ্যাঁ সেখানেও গবেষকরা দুইটি ফ্যাক্টর খুঁজে পেয়েছেন ‘পুশ ‘এবং ‘পুল’ ফ্যাক্টর সেই গবেষণামূলক ফ্যাক্টরের ধারে কাছে না গিয়েও বলা যায় – যুগ যুগ ধরে অর্থনৈতিক, সামাজিক


শেয়ার করুন