করোনার জোয়ারে কি জননীর সবকিছু ভেসে যাবে!

জয়নাল আবেদিন জয়ঃ

সরকার যদি করোনার ফ্রি টেস্ট এবং পরীক্ষা যদি বন্ধ করে দেয়। তাহলে আমাদের এই বাঙালি জাতি কখনো নিজ নিজ অর্থায়নে স্যাম্পল টেস্ট করতে যাবেনা। যা দেশ আরো ঝুকিপূর্ণ দিকে চলে যাচ্ছে।

করোনা নামক এই জোয়ার ঠেকাতে হলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা। যতজনকে পরীক্ষা করার সামর্থ্য আমাদের আছে ততজনকে পরীক্ষা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঠিক একথাই বারবার আমাদের বলে যাচ্ছে। পরীক্ষা,পরীক্ষা ও পরীক্ষা,চিহ্নিত করো, আলাদা করো, চিহ্নিত করো, আলাদা করো।

করোনা রোগের বিস্তারের গতি মানুষ দেখতেছে এবং থ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেইজিং অফিসকে চীন একটা অজানা রোগের কথা জানিয়েছিল গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে। আজ জুনের ২৮ তারিখ কিন্তু এ রোগ সারা দুনিয়া তছনছ করে ফেললো। এবং প্রায় কোটি মানুষের দেহের মধ্যে পা দিতে ফেললো।

তার মোকাবিলার জন্য এখন সেনাবাহিনী তলব করতে হচ্ছে। দেশে সমস্ত কিছু অচল করে মানুষকে ঘরের ভেতর দিনরাত কাটাতে বাধ্য করছে।

সরকার তার মোকাবিলার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিচ্ছে। সরকার প্রধানরা সারাক্ষণ টেলিভিশনের সামনে এসে মানুষকে প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করছে। পার্লামেন্টে সকল দল একমত হয়ে আইন পাস করতেছে। দেশে কত ধরনের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করল এমনকি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল থেকে শুরু করল আরো কত কি?

সারা দুনিয়া ক্রিকেটের স্কোর বোর্ডের মতো করোনার স্কোর বোর্ড দেখছে। অতীতে কোনো বিশ্বযুদ্ধও মানুষকে এত ভাবিয়ে তুলতে পারেনি। অথচ মাত্র ৩-৪ মাসের ব্যাপার। দুনিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে কোটি কোটি মানুষকে করোনা কাবু করে ফেলেছে।যার মধ্যে এখন আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছুই ছুই। যে দেশেই ঢুকছে সে দেশকেই নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে করোনা।
করোনা এক দেশে ঢুকার পরপর সে কত শতাংশ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় সেটা এখন সব দেশই হারে হারে টের পাচ্ছে স্পষ্টভাবেবুঝা যায়।এখন পৃথিবীর সব মানুষই করোনা নামক ভাইরাস সাথে পরিচিত।

এশিয়ার অনেক অনেক দেশগুলো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রান্তদের শনাক্ত করেছে এবং তাদেরকে অন্যদের থেকে দূরে রেখেছে (আইসোলেইশন)কিংবা (হোম কোয়ারেন্টাইন)।
এই মুহূর্তে জাতি সমস্ত সরকারি, বেসরকারি, সামাজিক, আন্তর্জাতিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে বা এসেছে।, তারা যদি আবার থেমে যায় তাহলে করোনার এই স্কোরবোর্ড কখনো ঠেকিয়ে রাখতে পারবো না। জোয়ারের ঠেলায় সবকিছু ভেসে যাবে।

এটা সোজা হিসাব। এ শিক্ষা আমরা ‘জুতা আবিষ্কারের’ কাহিনী থেকে অনেক আগেই পেয়েছি। আমি যদি ধুলা থেকে নিজের পা-কে মুক্ত রাখতে চাই তাহলে সারা দেশ থেকে ধুলা পরিষ্কার করার কাজে লাগতে পারি, অথবা নিজের পায়ে জুতা পরতে পারি। আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সকলের কাছ থেকে দূরে রাখতে পারি, অথবা আমরা সবাই তার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারি। প্রথমটাই সোজা কাজ, যখন আক্রান্ত ব্যক্তি মাত্র কয়েকজন, আর আক্রান্ত হতে পারে যারা তাদের সংখ্যা কয়েক কোটি। কয়েকজনকে পৃথক করে রাখতে পারলে কয়েক কোটি লোক বেঁচে যায়।

এ রোগ বিদেশ থেকে এসেছে। যখন এটা ঠেকানো খুবই সহজ ছিল সেটা আমরা করতে পারি নি। এখন এ দৈত্য বোতল থেকে বেরিয়ে গেছে। জাতির সবকিছু দিয়ে একে ঠেকাতে হবে।

উপদেশ দেয়া এক জিনিস আর উপদেশ পালন করার জন্য দেশব্যাপী প্রচণ্ড তাগিদ সৃষ্টি করা তা আরেকজিনিস। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা। আমার নিজেকে বাঁচানোর, আমার পরিবারের সদস্যদের বাঁচানোর, আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদেরকে বাঁচানোর প্রতি কি আমরা এতই অনাগ্রহী? নাকি আমরা যা কিছু আমাদের চারপাশে ঘটছে সব কিছুকে ‘ফেইক নিউজ’ ধরে নিয়ে স্বস্তি অনুভব করতে চাচ্ছি।

আশা করি দেশের তরুণরা এ মহাদুর্যোগের দিনে কারো দিকে না-তাকিয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসবে।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত সঠিক কাজ হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা বাসায় পড়া লেখার কতটা সুযোগ পাচ্ছে তা আমি নিজেই একজন ছাত্র হিসেবে বুঝতেছি।ছাত্র কিংবা জাতির ভবিষ্যৎ হিসেবে আমাদের জরুরি যতটা সম্ভব মানুষকে যেকোন মাধ্যমে সুরক্ষায় মহামারী থেকে দূরে রাখা।এবং যতটুকু পারি একমাত্র কাজ হবে মানুষকে বাঁচানো। পরিস্থিতি ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।

একমাত্র ডাক্তার,পুলিশ,র‍্যাব,বিজিবি,সেনাবাহিনী ইত্যাদি কিছু প্রশাসনিক মানুষ এমন ভাবে কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষ কে দিন রাত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যা জাতির কখনো ভুলার মত নয়।

দেশের তরুণঃ-তরুণরা শুরু করবে নিজ নিজ প্রস্তুতি নিয়ে, সংগঠন তৈরি করে, করণীয় কাজের তালিকা বানিয়ে, সম্ভাব্য সকল পরিস্থিতি মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়ে।

শুরুতে তাদের কাজ হবে এলাকার সকল পরিবারকে নিজ নিজ বাড়িতে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা নিয়ে। পরিবারের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজেনেয়া। যা এখন মানবতার দিক দিয়ে অনেক সেচ্ছাসেবী সংগঠন মাহামারির পর গঠন হয়েছে দেখা যাচ্ছে এবং সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এরকম কাজে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কিংবা পৃথকভাবে তরুণগোষ্ঠি, এনজিও-রা, সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহও এগিয়ে আসতে পারবে।যা এই মহামারিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
অন্য দেশের তুলনায় আমরা বাঙ্গালী জাতি খুব কঠিন দূর্যোগের মুখোমুখি। এ মহাদুর্যোগ আমাদের জাতীয় জীবনের সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যেতে পারে।

প্রস্তুতিটা আমাদের সবসময় থাকতে হবে, এবং সেটা চরম দুর্যোগকে কল্পনা তা মাথায় রাখতে হবে। কোনো পর্যায়ে আমাদের যদি রেজাল্ট কোন সময় পজিটিভ তখন আমাদের কিছু উপায়ে পরিবর্তন করে তা আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে আগে থেকে। যেন আমাদেরকে অপ্রস্তুত হতে না হয়।

আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। যুদ্ধের সময় যেমন সারা দেশব্যাপী যুদ্ধ হয় তখন কোথাও কোথাও শত্রুকে পরাভূত করে ‘মুক্ত এলাকা’ সৃষ্টি করা হয়। করোনার যুদ্ধেও আমরা এরকম ‘করোনামুক্ত’ এলাকা তৈরি করতে পারি। সেটা একটা পাড়া হোক,গ্রাম হোক, কিংবা আরো বড় কোনো এলাকা হোক।

এর মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রধান অস্ত্রগুলি হচ্ছে সুরক্ষিত এবং দূরত্ব। যা এই অস্ত্র দিয়ে করোনা নামক একটি শত্রুর মোকাবিলা করা যায়। এ মহাপ্লাবনের মোকাবিলাও আমরা শক্তি, সাহসএবং শৃঙ্খলা দিয়ে জয় করবো।

মহাদুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে জানে বাঁচালাম কিন্তু বাঁচতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হলাম। সারা পৃথিবীর অর্থনীতি প্রায় ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। এর শেষ কোথা পর্যন্ত গড়াবে? মাঝখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি উঠে দাড়াবার কোনো শক্তি পাবে কিনা।

এখন থেকে এসব নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে না। যখন করোনাপর্বের শেষে পৃথিবী পুন:জন্ম হবে তখন এ চিন্তার প্রয়োজন হবে।

করোনার দৈত্য বোতল থেকে বের হয়ে গেছে। এ দৈত্য কি পৃথিবী খাবে? তাকে যখন বোতলে হবে অথবা সে স্বেচ্ছায় বোতলে ফিরে যাবে তখন পৃথিবীর যাত্রা, বাংলাদেশের যাত্রা কোথা থেকে শুরু হবে?

জয়নাল আবেদিন জয়
উচ্চ মাধ্যমিক ২০১৯-২০২০
কক্সবাজার সরকারি কলেজ।


শেয়ার করুন