কবরের আজাব কী সত্য?

ctg4bd_1339426939_4-576704_434893383201409_1306704036_nসিটিএন ডেস্ক:
আখেরাত সত্য। আখেরাতের প্রতি ঈমান আনাও প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক। জান্নাত, জাহান্নাম, হাউজে কাউসার, পুনরুত্থান, হাশরের ময়দান, বিচার ও হিসাব নিকাশ, হাউজে কাউসার, পুলসিরাত ও শাফায়াতের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে কবরের আযাবও রয়েছে।
কবরের আজাবের কথা কোরআনুল কারিমে ইঙ্গিতে বলা হলেও হাদিসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। একবার এক ইহুদী নারী আয়েশা রা: এর নিকটে যেয়ে কবরের আযাবের কথা জিজ্ঞাসা করল, আয়েশা রা: বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কবরের আযাব থেকে হেফাজত করুন। তারপর বললেন, আমি রাসূলে মাকবুল সা. কে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ কবরের আজাব সত্য। আয়েশা রা: বলেন, এর পর থেকে আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সা. প্রতি নামাযের পর কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। (সহীহ বুখারি)
হযরত আনাস রা: সূত্রে রাসুল সা. বলেন, তোমরা ভয়ে মৃতদের দাফন করবে না- এ আশঙ্ক যদি আমার না হত, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম তিনি যেন তোমাদের কবরের আযাব শুনিয়ে দেন। (সহিহ মুসলিম)
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মৃতদেরকে কবরে (তাদের অপরাধের কারনে) আযাব দেয়া হয়, এমন কি পশু-পাখিও তাদের চিৎকার শুনতে পায়। (আল মু’জামুত তাবরানী আল কাবীর)
হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, কোন বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয়, অত:পর তার সঙ্গীরা ফিরে যায়, এমনকি ওই মৃত ব্যক্তি তাদের চলন্ত অবস্থায় জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। তখন তার নিকট দুজন ফেরেস্তা আগমন করে, অত:পর তারা তাকে উঠিয়ে বসায় এবং জিজ্ঞাসা করে, মুহাম্মদ সা: কে? তখন মৃত ব্যক্তি মুমিন হলে বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, তুমি তোমার জাহান্নামের স্থানটি দেখে নাও। আল্লাহ তায়ালা এটাকে জান্নাতের বিনিময়ে তোমার জন্য পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবীজি সা: বলেন তখন সেই ব্যক্তি উভয় স্থানটি দেখতে পায়। আর যদি মৃত ব্যক্তি কাফের বা মুনাফিক হয়, তাহলে সে বলতে থাকে, আমি কিছুই জানি না। লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হয় তুমি কিছুই জানার চেষ্টা কর নাই, এবং কিছুই পড় নাই। অত:পর লোহার হাতুড়ি বা মুগুর দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করা হয় ফলে সে এত জোরে চিৎকার করে যে, জ্বীন ও মানব জাতি ছাড়া আশ পাশের সবাই তা শুনতে পায়। (সহিহ বুখারি)
কবরের পরীক্ষার প্রতি ঈমান আনার পাশাপাশি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী, কবরের আজাব ও নেয়ামতসমূহের ওপরও আমাদের ঈমান আনতে হবে।
কবরের আজাবের ব্যাপারে কোরানের দলিল
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘অতঃপর তাদের ষড়যন্ত্রের অশুভ পরিণাম থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন আর ফির‘আউনের অনুসারীদের ঘিরে ফেলল কঠিন আজাব। তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে উপিস্থত করা হয়’ – (সূরা গাফের , ৪৫)।
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে ফেরআউনকে দু’প্রকার আজাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
প্রথমত, সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে উপস্থিত করা হয়, ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে উপিস্থত করা হয়’-এ আয়াতাংশটি যার প্রতি ইঙ্গিত করছে।
মৃত্যুর পরের আজাবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন , ‘আর যদি তুমি দেখতে, যখন জালিমরা মৃত্যু কষ্টে থাকে, এমতাবস্থায় ফেরেশতারা তাদের হাত প্রসারিত করে আছে (তারা বলে), ‘তোমাদের জান বের কর। আজ তোমাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে লাঞ্ছনার আজাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তোমরা তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহংকার করতে’ (সূরা আল আনআম , ৯৩)।
অপর আয়াতে বলেন, ‘অতঃপর তাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন ফেরেশতারা তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশসমূহে আঘাত করতে করতে তাদের জীবনাবসান ঘটাবে?’ (সূরা মুহাম্মাদ , ২৭)।
ইমাম নববী র. সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মাযহাব হলো, কবরের আযাবের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস করা। কবরের আজাব সম্পর্কে কোরান সুন্নাহর অনেক প্রমাণ রয়েছে।
কবরের আযাব সংক্রান্ত সহিহ মুসলিমের একটি ঘটনা
যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বনী নাজ্জারের একটি বাগানে একটি গাধীর ওপর আরোহিত ছিলেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। গাধীটি হঠাৎ এমনভাবে পথ থেকে দূরে চলে গেল যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফেলে দেয়ার উপক্রম করল। দেখা গেল যে সেখানে ছয়জন অথবা পাঁচজন অথবা চারজনের একটি কবর রয়েছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ কবরগুলোতে কারা শায়িত আছে, তোমরা কি কেউ চেন? এক ব্যক্তি বলল, আমি চিনি। তিনি বললেন, এরা কবে মারা গিয়েছে?
লোকটি বলল, এরা মুশরিক অবস্থায় মারা গিয়েছে। তিনি বললেন, এই উম্মতকে কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমার যদি আশঙ্কা না হত যে, তোমরা ভয়ে মারা যাবে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যাতে তিনি তোমাদের কবরের আজাব শোনান যেভাবে আমি শুনি। এরপর তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে প্রার্থনা কর । তারা বললেন, আমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে প্রার্থনা করি। তিনি বললেন, তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফেতনা থেকে প্রার্থণা কর। তারা বললেন, আমরা প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য ফেতনা থেকে প্রার্থণা করি। তিনি বললেন, দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা কর। তারা বললেন, আমরা দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি । (মুসলিম)
ইবনে আববাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, এ কবরবাসীদ্বয়ের আজাব হচ্ছে। অবশ্য বড় কোনো পাপের কারণে তাদের আজাব হচ্ছে না। এরপর তিনি বললেন, হ্যাঁ, এদের একজন গীবত করত। আর অন্যজন তার পেশাব গায়ে-কাপড়ে লেগে যাওয়া থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। (বুখারি ও মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মারা যায় তখন সকাল- বিকাল তার স্থানটি দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তবে জান্নাতবাসীদের মধ্যে। আর যদি জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তবে জাহান্নামবাসীদে মধ্যে। অতঃপর তাকে বলা হয়, এটা তোমার স্থান কিয়ামত পর্যন্ত।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কবরের আজাব ও নিয়ামতের বিস্তারিত ধরন কী, কীভাবে মৃতব্যক্তির মধ্যে রূহ ফিরে আসে, ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ হাদিসে যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকুতে বিশ্বাস করাই আমাদের কর্তব্য এবং এর ওপর অতিরিক্ত কিছু বাড়িয়ে বিশ্বাস করা বৈধ নয়।


শেয়ার করুন