কন্যা শিশুর প্রতিপালনে বেহেশত নিশ্চিত

Dia_Azzawi_Image_400146299বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের সমাজেও মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তান আকাঙ্ক্ষিত। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত বলে কথা নেই, সব সংসারেই কন্যা শিশুর জন্ম এক নিরানন্দের বিষয়। প্রথমটি মেয়ে হলে পরের সন্তানটি অবশ্যই ছেলে হতে হবে এই আকাঙ্ক্ষা থাকে পরিবারের সবার। এমনই বাস্তবতায় প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হলো- ‘জাতীয় কন্যা শিশু দিবস।’

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্য‍ৎ ও জাতির কর্ণধার। শিশুরা বড় হয়ে একদিন দেশ গড়বে, হোক না সে পুরুষ শিশু, অথবা কন্যা শিশু। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কন্যা শিশুরা সবদিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার। দরিদ্রতার প্রথম শিকার হয় কন্যা শিশুরা। দরিদ্র পরিবারের কন্যা শিশুরা গার্মেন্টস ও বাসা-বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

কন্যা শিশুদের ক্ষেত্রে শিশু পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পাচারকৃত কন্যা শিশুদের একটি বড় অংশকে যৌন বৃত্তিমূলক কাজেও ব্যবহার করা হয়। পুষ্টিহীনতা, শিক্ষার অভাব, শিশু শ্রম, বাল্যবিয়ে এসবই কন্যা শিশুর প্রতি আমাদের এই সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

আমরা জানি, শিশুদের ভালোভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব তাদের পিতা-মাতার। কিন্তু আজকাল কিছু পিতা-মাতা শুধু ছেলে শিশুদের ভরণ-পোষণ এবং লালন-পালনকে দায়িত্ব আর কন্যা শিশুকে পরিবারের বোঝা বলে মনে করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও অনেক মুসলিম পরিবার বিষয়টির প্রতি তেমন গুরুত্বই দেয় না। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ক্ষেত্রবিশেষ কন্যা শিশুদের প্রতি কৃত আচরণের প্রেক্ষিতে মনে হয় আমাদের সমাজ যেন ফিরে গেছে সেই ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে!

ইসলামপূর্ব যুগে কন্যা শিশুদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হতো। এর বর্ণনা পবিত্র কোরআনে কারিমে এসেছে এভাবে, ‘আর তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার খবর দেওয়া হয়, তার মুখমন্ডল কালিমায় আচ্ছন্ন হয় এবং সে হয়ে পড়ে মর্মাহত। প্রাপ্ত সংবাদের গ্লানি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে আত্মগোপন করে লোক চক্ষুর অন্তরালে। (এবং ভাবতে থাকে) গ্লানি সত্বেও কন্যাটিকে সে রক্ষা করবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? দেখ কত মন্দ তাদের বিচার।’

ইসলাম এ অবস্থার অবসানে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইসলাম কন্যা সন্তান হত্যার প্রাচীন প্রথাকে প্রচণ্ডভাবে নিন্দা করে করে ঘোষণা করে, ‘তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের (কন্যা সন্তানদের) হত্যা করো না। তোমাদেরকে এবং তাদেরকে আমিই রিজিক দিয়ে থাকি।’ -সূরা বনি ইসরাঈল: ৩১

কন্যা সন্তানের জন্ম কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটা আল্লাহতায়ালার সিদ্ধান্ত। সুতরাং এটা নিয়ে ভিন্ন কোনো চিন্তা করার অর্থ হলো- আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা। আর আল্লাহর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মানুষ নিশ্চিত ধ্বংসকেই ডেকে আনে।

কন্যা সন্তান লালন-পালনের বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির কন্যা সন্তান আছে, সে যদি তাকে জীবন্ত প্রোথিত না করে, তাকে অপমান লাঞ্চিত না করে এবং পুত্র সন্তানদের প্রতি তার তুলনায় অধিক গুরুত্ব না দেয়, তা হলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’

নবী করিম (সা.) আরও বলেন, যদি একটি পরিবারে একের পর এক মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং পিতামাতা যদি মেয়েদের যত্ন ও স্নেহের সঙ্গে প্রতিপালন করে তবে মেয়েরা পিতামাতাকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করবে।’ –আহমদ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যদি কোনো ব্যক্তি তার দু’টি কন্যাকে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে, তা হলে সে এবং আমি কিয়ামতে এমনভাবে আগমন করব যেমন আমার দু’টি আঙ্গুল একত্র আছে। -মুসলিম

ইসলামে নারীর অবস্থান শুধুমাত্র পুরুষের সমানই নয়, বরং মাতৃত্ব, সম্মান ও সম্ভ্রমের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সদাচার পাবার অগ্রাধিকারী কে? জবাবে তিনি বলেন, তোমার মাতা। লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। লোকটি আবার বললেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা। লোকটি চতুর্থবার জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? জবাবে এবার তিনি বললেন, তোমার পিতা। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক হাদিসে কন্যা শিশুদের প্রসঙ্গে প্রচুর বাণী প্রদান করেছেন। ওই সব বাণীর কিছু হলো-

‘তোমাদের সন্তানদের মধ্যে মেয়েরাই উত্তম।’

‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম- যার প্রথম সন্তান মেয়ে।’

‘যে ব্যক্তি একটি কন্যা সন্তানের ভরণ -পোষণ করেছে তার জন্য বেহেশত নির্ধারিত হয়ে গেছে।’

এভাবেই মানবতার ধর্ম ইসলাম কন্যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের পথকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ইসলাম মনে করে, একটি উন্নত ও যথাযথ মর্যাদাশীল জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ওই জাতির মায়েদের ওপর। আর আজকের কন্যারাই তো আগামীর মা।


শেয়ার করুন