কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ: আহত ৫

imagesচীফ রিপোর্টার, সিটিএন:

হোস্টেলের ফরম বিতরণ নিয়ে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্রে করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ (কমেক) ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচ’জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সোমবার দুপুর ২টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, ২য় বর্ষের ছাত্র সুদীপ্ত ঘোষ, ৩য় বর্ষের মোহাম্মদ হোসাইন ও মোস্তফা ইমন এবং ৪র্থ বর্ষের নোমান ও গালিব। আহতের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কলেজ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বিকাল ৫ টায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডেকেছে অধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল করিম। অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ জানুয়ারি সোমবার ৮ম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান ছিল। কিছুটা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল তাই সকাল থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে একটি পুলিশ ফোর্স নিয়োজিত ছিল। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ায় পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে চলে যায়। এরপর কলেজের কিছু ছাত্রদেরকে হোস্টেলের ফরম বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ফরম বিতরণের সময় পুলিশ চলে যাওয়ার সুযোগে কতিপয় একজন ডাক্তারের ইন্ধনে ইর্ন্টানি চিকিৎসক রিপনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নামধারী একটি গ্রুপ তাদেরকে ফরম বিতরণে বাঁধা দেয়। এসময় কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে রিপনের গ্রুপের সাথে তানিম গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তারা আহত হয়। পরে দ্রুত পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

তিনি আরো জানান, ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ বক্তব্য দেয়ার জন্য তার কাছে কয়েকবার ধর্ণা দিচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে মেডিকেলে কলেজে ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকায় তিনি তাদের কাউকেই বক্তব্য দিতে দেননি। এরই রেশ ধরে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া এই ঘটনার প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে সদস্য বিদায়ী ডাঃ অরূপ দত্ত বাপ্পী। কারণ ওই ডাক্তার চাইনা কক্সবাজার মেডিকেলে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে পড়াশোনা করুক। তাই তিনি বদলী হওয়ার পরেও নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে আড়ালে থেকে এসব ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে এ ঘটনার বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।

সূত্রে জানা গেছে, গত কিছুদিন আগে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক রিপনের নেতৃত্বাধীন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়। ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর থেকেই রিপন ও তানিমের আলাদা দুটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রায় সময়ই এই দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটিসহ নানা ধরণের দ্বন্দ লেগে থাকে। সর্বশেষ সোমবার সরাসির সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এ দুই গ্রুপ।
একটি সূত্রের দাবী, সরকারী সিদ্ধান্ত ও নিয়মের বাইরে গিয়ে ডাঃ অরূপ দত্ত বাপ্পীর বদলী ঠেকাতে রিপনের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কমিটি মিছিল মিটিং, প্রতিবাদ সভা উচ্চ পর্যায়ে তদবীরসহ নানা ধরণের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার কারণে জেলা ছাত্রলীগ মেডিকেল কলেজের এই কমিটি বাতিল ঘোষণা করে। এরপর থেকেই মূলত ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়।

ইন্টার্নি চিকিৎসক রিপন চৌধুরীর জানান, ৮ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশনে যোগ দেয়ার সময় ৪র্থ বর্ষের ব্যাচের ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান হাঁটার পথ আগলে রাখার অজুহাত তুলে সুদীপ্তকে বকা দেন। সুদীপ্ত এর প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান ও একই ব্যাচের তানিম মিলে হাতে রিং পরে সুদীপ্তকে মারতে শুরু করে। এই সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে মো: হোসেনকেও বেদম মারধর করে। এতে দু’জনই আহত হয়। পরে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যাম্পাসে এসে দেখা যায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে গেছে।
তিনি তার বিরুদ্ধে হোস্টেলের ফরম কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি সাধারণ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের নেক্কারজনক ঘটনার পূণরাবৃত্তি না ঘটার জন্য সংশ্লিষ্ঠ সকলকে অনুরোধ করেন।

৪র্থ বর্ষের ছাত্র তানিম জানান, ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করায় রিপন চরম ক্ষিপ্ত। সে ওই কমিটিকে ব্যবহার করে ডাঃ অরূপ দত্ত বাপ্পীর বদলী ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই অনৈতিক মিশনে তারা চরম ব্যর্থ হয়েছে। তাই মেডিকেল কলেজকে অশান্ত করে তুলার জন্য এ ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী তার।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী জানান, সংঘর্ষের ঘটনা খবর পাওয়ার সাথে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনার পর পরই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জানতে পেরেিেছ আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিকেলে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করেছেন। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। এছাড়া বর্তমানে ক্যাম্পাসে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।


শেয়ার করুন