ঈদে কক্সবাজার পর্যটকে মুখরিত

ctn1ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্য শহর হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার সমুদ্রে সৈকত এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত। ঢাকার গুলশানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ঘটনা পরবর্তী নানা সংশয় ও আতঙ্ক থাকলেও তার কোনো প্রভাবই পড়েনি পর্যটকদের মাঝে।

ঈদের আগে পর্যটক আগমন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কা থাকলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকে ভরপুর সৈকত শহর কক্সবাজার। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও খুশি। অপরদিকে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদেরও সমুদ্রপাড়ে আনন্দে মাতোয়ারা দেখা গেছে।

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সজাগ রয়েছে। এছাড়াও ১০টি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের তল্লাশি চৌকি রয়েছে। সমুদ্র অবস্থানরত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে ৫০ জন লাইফগার্ড কর্মী।

ctn3

শুক্রবার বিকেলে বিশ্বের দ্বীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, সী-ইন পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। এসব পর্যটকরা সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি বালিয়াড়ীতে নানাভাবে উল্লাস করছে। সমুদ্র সৈকতে উল্লাস প্রকাশ করা পর্যটক, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, গুলশান বা শোলাকিয়া যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এর প্রভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়েনি। তারা ঈদের আনন্দ সঠিকভাবে উপভোগ করতে চান। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতেই তিনি বোনকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছেন।

সাভার থেকে আসা সাজ্জাদ হাসান-রুবায়েত রহমান দম্পতির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দেশে জঙ্গিবাদ আছে এমন বিশ্বাস তাদের এখনো হয়নি। তাই এতে তারা আতঙ্কিতও নন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলো আনন্দ উপভোগ করার স্থান। তাদের সন্তান ইমতিয়াজ ও রুহি এখানে আনন্দ উপভোগ করছেন পুরোদমে।

শিশু ইমতিয়াজ ও রুহি জানান, ঈদ ও স্কুল বন্ধের ছুটিতে মা-বাবার সঙ্গে ভালই আনন্দ উপভোগ করেছেন। কক্সবাজার ভ্রমনে এসে সমুদ্র সৈকত, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী বেড়ানোর অনুভূতি খুবই মজার।

ctn2

ঢাকা থেকে আসা ইয়াছমিন আকতার কক্সবাজারে ভ্রমণে আনন্দের কথা জানান, দেশে ধর্মান্ধদের সৃষ্ট সংঘাত মানুষের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিতে পারেনি। মানুষ এতে ভয় পেলে ঘর থেকে বের হত না। কক্সবাজারে আগত বিপুল পর্যটক প্রমাণ করে মানুষ তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না।

সমুদ্রেস্নানরত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লাইফগার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানান, সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক কাজ করছে ৫০ জন লাইফগার্ড কর্মী। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পাঁচজন, ইয়াছিন লাইফগার্ডের পাঁচজন, সী-সেইভ লাইফগার্ডের ২৫ জন, রবি লাইফগার্ডের ১৫ জন। সমুদ্র স্নানরতদের সতর্ক করায় এ পর্যন্ত কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসাইন জানিয়েছেন, দেশে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় নানা আতঙ্কে ঈদে পর্যটক আসবে কিনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন শঙ্কা ছিলো। কিন্তু এসব আশঙ্কা উড়িয়ে কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা ঠিকই এসেছেন। কক্সবাজারের ৪ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজের সকল কক্ষ বুকিং রয়েছে।

ctn5

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ফটোগ্রাফার, ভ্রাম্যমাণ হকারদের মধ্যে কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, ঈদের দিন থেকে সৈকতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে। এতে তাদের ব্যবসা ভালই হচ্ছে।

সৈকত পাড়ের বিচ মার্কেটের ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসায় বিক্রি হচ্ছে বেশি। ঈদ পরবর্তী ব্যবসা ভাল হওয়ায় তারাও অনেক খুশি।

পর্যটক আসা মানেই তাদের দোকানে সাজিয়ে রাখা নানা পণ্য বিক্রি হওয়া। বেশি পরিমাণ পণ্য বিক্রি মানে বেশি লাভ হওয়া। পর্যটক আগমন মানে ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ। এমনটাই জানালেন বিচ মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) রায়হান কাজেমী জানান, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সজাগ রয়েছে। সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সী-ইন পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, মাদ্রাসা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, জাম্বুর মোড়, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও ইনানীতে ট্যুরিস্ট পুলিশের তল্লাশি চৌকি রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত পর্যটকদের নিয়ে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।


শেয়ার করুন