কক্সবাজার ও বান্দরবান জলসীমা দিয়ে প্রবেশ করছে ইয়াবা

নিয়ন্ত্রণ করছে ৭৬৪ ব্যবসায়ী

yaba-tablet-153451-0

বলরাম দাশ অনুপম:

কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন জলসীমা পয়েন্ট দিয়ে বানের পানির মতো মিয়ানমার থেকে দেশে প্রবেশ করছে ইয়াবা। প্রবেশের পর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ঘাতক এই ইয়াবা। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সী তরুন-তরুনীই শুধু নয় ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীদের একাংশও এখন ইয়াবা আসক্ত। সহজলভ্য হওয়ায় দিন দিন আশংকাজনকহারে বাড়ছে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা। ফলে ইয়াবার ভয়াবহ এই আগ্রাসনে উদ্বিগ্ন পরিবার ও সমাজ। আর কঠোর নজরদারির মাঝেও ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ইয়াবা পাচার রোধে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এর মাঝেও অভিযান অব্যাহত রেখেছে নৌ-বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ ৭ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩ টায় র‌্যাবের অভিযানে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়স্থ হোটেল এলিন পার্ক থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও একই দিন সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে ঢাকা মেট্টো ১১-২৩৪৩ নম্বরের প্রিমিয়ার সিমেন্টের একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে ২১ লক্ষ টাকা মূল্যের ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারী টেকনাফের হ্নীলা থেকে বিজিবি ৭০ হাজার পিস ও চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে একটি ট্রলার থেকে ১৫ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করে নৌ-বাহিনী। এর আগে এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের গভীর সাগর থেকে ৩ লাখ পিস ইয়াবাসহ ৪ পাচারকারীকে আটক করে র‌্যাব। তবে এসব অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার হলেও বরাবরের মতোই গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর জন্য অনেকে অবশ্যই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অবহেলা ও সহযোগিতার অভিযোগ তুলেন। আর ইয়াবা উদ্ধারের সময় যেসব চুনো-পুটিদের আটক করা হয় তাদেরও বেশিদিন আটকে রাখা যায় না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের ফিরে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে-মিয়ানমারের ৭টি কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখের মত ইয়াবা ট্যাবলেট উৎপাদন করা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি’র প্রায় অর্ধশত পয়েন্ট কখনো সড়ক পথে আবার কখনো নৌ-পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। জানা যায়-৯০ দশকের শেষের হিসেবে ইয়াবা প্রথম ধরা পড়লেও বিষয়টিকে সেসময় গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে বর্তমান সময়ে এসে তার মাসুল গুনতে হচ্ছে সকলকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়-কক্সবাজার ও বান্দরবানে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ৭৬৪ ব্যবসায়ী। আর ওই তালিকায় একজন প্রভাবশালি বর্তমান সাংসদসহ টেকনাফের ২৫১ জন, মহেশখালীর ৬ জন ও বান্দরবান জেলার ২৯ জনের নাম রয়েছে। তার সাথে মিয়ানমারের ৩৬ ইয়াবা গডফাদারের নাম রয়েছে। রয়েছে টেকনাফের আলোচিত ৭ প্রভাবশালী এবং ৭ পুলিশ কর্মকর্তার নাম। এদের নেতৃত্বে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যম আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে দেয়ার কাজ বাস্তবায়ন করছে শক্তিশালী সংঘবদ্ধ একটি চক্র। সম্প্রতি সড়ক ও আকাশ পথে নজর দারি বৃদ্ধির ফলে নিরাপদ রুট হিসেবে ইয়াবা ব্যবসায়িরা পাচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে সাগরপথকে। এর পরও ইয়াবা পাচার ঠেকাতে হাল ছাড়তে রাজী নন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন-ইয়াবাকে জিরো টলারেন্স হিসেবে মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত পাচার রোধে এবং ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। ইয়াবা পাচার রোধে সম্প্রতি সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে টেকনাফস্থ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, প্রতিদিন ইয়াবার বড় বড় চালান আটক করা হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৯ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৪১ হাজার ৫২৭ পিস ইয়াবাসহ ১৬ জনকে আটক করে ১০টি মামলা করে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ইয়াবার বিরুদ্ধে সড়ক ও নৌ পথে অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনর্চাজ এএসপি দেলোয়ার হোসেন।


শেয়ার করুন