কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ দেশের সব ইউনিভার্সিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার

সুহৃদ সুগন্ধ

গতকাল ২৬ জুন ২০২০ তারিখ আমি আমার ফেসবুক আইডি থেকে একটি সংবাদ পর্যালোচনামূলক লিখা পোস্ট করেছিলাম, যা ছিল মূলত সম্প্রতি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একটি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের খবরের সাথে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিককালে সংগঠিত ঘটনার তুলনামূলক বিশ্লেষণ। আমার পর্যালোচনার ভিত্তি ছিল ‘দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে’ প্রকাশিত সংবাদ, টিটিএন এর টকশো, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র অফিসিয়াল পেইজে প্রকাশিত অফিস আদেশ ও ইউজিসি ওয়েবসাইটে প্রচারিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক্ট-২০১০। উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রের আলোকেই নিরপক্ষেভাবে আমি আমার সব বক্তব্য উপস্থাপন করেছি- আর এটাই একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য। কিছুক্ষণ আগে আমার চোখে পড়েছে, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী রেজিস্ট্রার জনাব কুতুব উদ্দীনের একটি পোস্ট। এতে তিনি আমার অন্য পয়েন্টের আলোচনা বাদ দিয়ে ‘কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইতিকথা’ শিরোনামে নাতিদীর্ঘ লিখা দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কক্সবাজারাবাসীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। আমিও এ বিষয়ে কুতুব সাহেবের সাথে সম্পুর্ণ একমত এবং আজ উনার বক্তব্য থেকে অনেককিছু জানতে পারলাম, তাই উনাকে ধন্যবাদ। উনি বলেছেন, আমি নাকি আমার লেখায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীকে এ বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছেন-সেটি অস্বীকার করেছি- এটি সত্য উপলদ্ধি নয়। আমার আফসোস, আমি উনাকে আমার বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝাতে সক্ষম হইনি। আমি নতুন ১০৬ নং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রিতার রেফারেন্স দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ; সেখানে ৬ বছর লেগেছে। নিশ্চয় সিবিআইইউ‘র ক্ষেত্রেও অন্ততপক্ষে ২/৩ বছর লেগেছে। তাইতো প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে উখিয়ার জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার ঘোষণার বহু আগেই কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু হয় আর সেক্ষেত্রে কোটি টাকা অনুদান দিয়ে ট্রাস্ট গঠন, ক্যাম্পাস ভাড়া, আসবাবপত্রসহ এফডিআরের ছাড়পত্র নেয়া সবগুলো জনাব লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান সাহেবের শ্রম ও অর্থানুকূল্যে সম্পন্ন হয়, আর এগুলো দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন বহিতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উনার নাম এসেছে আর সদ্য নিযুক্ত রেজিস্ট্রারও টকশোতে স্বীকার করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চিঠি উনার নামে তথা প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমানের নামেই ইস্যু হয়েছে। এ কথা তো স্বত:সিদ্ধ যে এটি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়- ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মালিকানাধীন, এখানে সরকারি কোন অনুদান ও একক কর্তৃত্ব নেই। এখানে সরকার তথা (প্রধানমন্ত্রী) এর আইন হল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে যত কোটি টাকা প্রয়োজন তত কোটি টাকা অনুদান দিয়ে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে আর এ ট্রাস্টই হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সর্বেসর্বা। (দেখুন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক্ট-২০১০) আর এটি তো প্রতিষ্ঠিত আইন যে অধিকাংশের মতামতের উপর ভিত্তি করে ট্রাস্টসহ পৃথিবীর যে কোন সংগঠনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন যদি প্রশ্ন উঠে টকশোতে রেজিস্ট্রারের পঠিত ১০ জন ট্রাস্টির নামের মধ্যে ৯জনই তো প্রতিষ্ঠাতা জনাব লায়ন মুজিব সাহেবের পরিবারের সদস্য আর এতে বুঝাই যাচ্ছে ট্রাস্টে আইনত ৯০% অনুদান উনার পরিবার থেকেই এসেছে। কেবল একজন ট্রাস্টি হলেন সাবেক চেয়ারম্যান জনাব সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। এখন এ একজন ট্রাস্টি ( জনাব সালাউদ্দিন ) কিভাবে যেই ট্রাস্টকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেই ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে এবং মেজরিটির সিদ্ধান্ত না মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন? প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত উপহার রক্ষা করবেন? সেটা ভাববার বিষয়!
বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের চেয়ারম্যানশিপ একটি পরিবর্তনযোগ্য পদ যেভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি/সভাপতি কিংবা কক্সবাজার-০১ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন প্রার্থীও পরিবর্তনযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্তি নয়, পার্টি এবং পার্টির চেয়ে দেশই অধিক গুরুত্বপূর্ণ- সেটা আমরা সবাই জানি। সুতরাং আমাদের কক্সবাজারবাসীকে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এ উচ্চ বিদ্যাপীঠের সামগ্রিক শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখার জন্য গতিশীল নেতৃত্ব ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর দক্ষ কারিগর দরকার রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা তাকিয়ে আছি সাবেক চেয়ারম্যান যার অবদান অনস্বীকার্য জনাব সালাহ উদ্দীন আহমদ সিআইপির গণতান্ত্রিক মানসিকতা এবং ত্যাগ ও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিকে। আর কায়মনোবাক্যে কামনা করি শীঘ্রই বন্ধ হবে ইউনিভার্সিটির পেইজে নিয়োগ ও অব্যাহতি প্রচারের অশোভন কর্মকান্ড। অবহেলিত কক্সবাজারবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত উপহার এ স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, সাধারণ শিক্ষার্থীকে কটুক্তিকারী একাধিক মামলায় অভিযুক্ত, বিতর্কিত ও চাকুরিচ্যুত কাউকে ইউজিসির নিয়োগ বিধিমালা লংঘন করে কর্মকর্তা নিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হলে সেটা কক্সবাজারবাসী মেনে নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত উপহার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রণীত আইন ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হোক। বন্ধ হোক সব রাগারাগি- ভাগাভাগি, মামলা-মোকদ্দমা-বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি। কোন ব্যবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদ নয় উচ্চশিক্ষায় অভিজ্ঞ, নীতিবান, উদার হৃদয়ের অধিকারী ও আন্তরিক মানুষের হাতে ফুলে ফলে পল্লবিত হোক সিবিআইইউ-আজ আমার এই একান্ত প্রত্যাশা।

লেখক: কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী।


শেয়ার করুন