কক্সবাজারে সাগর গিলছে মুষ্টিযোদ্ধা ম‍ুহাম্মদ আলীর জমি

ffttttসিটিএন ডেস্ক :
বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালোবাসি। আমেরিকা আমায় তাড়িয়ে দিলে, আমি তোমাকেই বেছে নেবো’, বাংলাদেশ নিয়ে এমন ভালোবাসার কথা বলেছিলেন বক্সিং রিঙে তিনবারের হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মুহাম্মদ আলী।
দিনটি ছিলো ১৮ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১০টা ২০ মিনিট, সময়টা ১৯৭৮ সাল। ওইদিন পাঁচদিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী।
সেই সফরেই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিলো সম্মানসূচক নাগরিকত্ব। বক্সিং স্টেডিয়ামের নামকরণও করা হয় তার নামে।

কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় দেওয়া হয় এক টুকরো জমি। ওই সময় বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট হাতে নিয়ে উদ্বেলিত আলী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে আমি এতো আদরের, তা জানা ছিলো না। এ দেশের মানুষ আমাকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে। এতে আমি আনন্দিত।’
সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ভেরোনিকা আলী, বাবা কেসিয়াস ক্লে, মা ওডেসা আলী, ভাই রহমান আলী, সচিব জন আলী, সহকারী জারমিয়া শাহবাজ ও আবদুল রহমান এবং পারিবারিক বন্ধু মিসেস মার্গারেট উইলিয়াম।

1111111120160608153255

আলীর প্রতি ভালোবাসার চিত্র ওইদিনই তেজগাঁও বিমানবন্দরে দেখেছে বিশ্ব। প্লেনের দরজা খুলে বের হয়ে এলেই মানুষের চ্যাম্পিয়ন মুহাম্মদ আলীকে স্বাগত জানান তৎকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শামসুল হুদা চৌধুরী।
তবে এর আগেই বাঁধভাঙা স্রোতের মতো আলী-ভক্তরা ছুটে যান প্লেনের কাছাকাছি।
‘ভালোবাসা’ দিয়ে বিশ্ব জয় করা আলীকে কাছ থেকে দেখতে, ছবি তুলতে কিংবা অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য কাগজ নিয়েও হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন তারা। কেউ কেউ একটুখানি স্পর্শ করে আবেগের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আলীকে।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির ল‍ুইভিলে জন্ম নেওয়া পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা আলীর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের কলাতলীতে জমিটি উপহার দিয়েছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী।
যদিও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় বর্তমানে সেই প্লটের হদিস সেভাবে পাওয়া যায়নি। এমনকি বিষয়টি এখনও স্থানীয় প্রশাসনেরও অজানা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুহাম্মদ আলীকে দেওয়া সেই জমির একটি অংশ এরইমধ্যে সাগরে বিলীন হয়েছে। যেটুকু আছে সে বিষয়েও কোনো স্পষ্ট দলিলাদি পাওয়া যায়নি।
অথচ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে ইতিহাসের এ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হারিয়ে যেতে বসেছে বলে মনে করেন স্থানীয় অনেকে।
তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, আলীকে জমি দেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতির বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি অবগত নন।
ব্যবসায়ী মো. আখতার নেওয়াজ খান বাবুল  বলেন, ছোট থেকেই আমি মোহাম্মদ আলীর ভক্ত। তিনি ওয়ার্ল্ড ফেমাস, কক্সবাজারের বিচও ওয়ার্ল্ড ফেমাস। তাই এখানে তাকে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে একখণ্ড জমি উপহার দিয়েছিলাম তাকে।
‘কক্সবাজারের সাব-ডিভিশনাল প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলীকে এখানে প্লট উপহার দেওয়ার কথা বলি। ওইদিনই এ আগ্রহের কথা জানিয়ে একটি লিখিত পত্র দিই তাকে।’
‘তিনিও তা গ্রহণ করেছেন জানিয়ে আমায় একটি ফিরতি চিঠি দিয়েছিলেন,’ যোগ করেন ওই সময়ের এই তরুণ।
বাবুল বলেন, ‘ওই সময় উচ্ছ্বসিত মুহাম্মদ আলী প্রতি বছর বাংলাদেশে আসার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই জমিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন তিনি এবং প্রতি বছর এখানে এসে দুই মাস অবস্থান করবেন। কিন্তু এটা আর কখনও হবে না।’
‘আলী বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি,’ যোগ করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারে মুহাম্মদ আলীর নামে কোনো জমির রেজিস্ট্রেশন নেই। নেই কোনো রেকর্ড কিংবা খতিয়ান নম্বরও।
তবে বাবুল বললেন, ‘জমিটি এখন নিরাপদে নেই, সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এখনও আলীর উত্তরাধিকারী কাউকে পেলে এটি রেজিস্ট্রি করে দিতে প্রস্তুত আছি।’
গত ৩ জুন অ্যারিজুয়ানার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। আসছে শুক্রবার অর্থাৎ ১০ জুন ল‍ুইভিলে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।


শেয়ার করুন