কক্সবাজারে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস সময়ের দাবী

ssssস. ম. সালমান, সিটিএন :

সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজারে নানা সংকটের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছে কক্সবাজারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছোট অগ্নিকান্ড নেভানো ছাড়া বড় ধরণের অগ্নিজনিত দুর্ঘটনায় মোকাবেলায় এ বাহিনী দূর্বল। আনুষাঙ্গিক আধুনিক সরঞ্জামের অভাব, লোকবল সংকট, শহরে পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকা, অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ বেশ কিছু এলাকার দূরত্ব বেশি হওয়া এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে এলাকার বিশালতার কারণে সময়মত অগ্নিকান্ডস্থলে পৌছাঁতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শহরে পানির উৎস একেবারেই অপর্যাপ্ত। অগ্নি নির্বাপনের জন্য পানির উৎস হিসেবে গোলদীঘি, বাজারঘাটা পুকুর, উপজেলা পুকুরই ভরষা।
দরকার মাত্র দুই একর জমি। যেখানে হবে আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা সম্বলিত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। থাকবে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের সর্বোত্তম সুবিধা। কক্সবাজার শহরে প্রায় কয়েক হাজার একর খাস জমি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের জমি। জেলা প্রশাসন চাইলেই সেখান থেকে দুই একর জমি বরাদ্দ ফায়ার সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ দিতে পারে।
কক্সবাজার সদর ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ১টি ৬৫০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার পানিবাহী সচল গাড়ি, ১টি টিবি টুইন নিশন গাড়ী, ১টি এম্বুলেন্সগাড়ী, মনিটরিং এর টিভি আছে একটি। বহনযোগ্য এ্যাংগাছ পাম্প ২৩০০, এ্যাংগাছ পাম্প ২২৭৫ ও গার্ডিভা পাম্প আছে একটি করে। অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টার্ন টেবল লেডার (উচুঁ দালানে আটকে পড়া লোকজন উদ্ধারে সহায়ক। যেটি সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ ডিগ্রি কোনে ঘুরতে পারে), কেমিক্যাল টেন্ডার, স্নোরকেল, ওয়াটার টেন্ডার, লাইটিং ইউনিট, ফোম ক্যানন, ফোম টেন্ডার ও ইমারজেন্সি টেন্ডার নেই।
কক্সবাজার শহর ও শহরতলীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বাড়ছে। এসব অগ্নিকান্ডে সর্বস্থ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। শুধু তাই নয় এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। এ অবস্থা চলে আসছে দীর্ঘ দিন যাবত। সম্প্রতি শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে কয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে দোকান, কাপড়ের গুদাম, বসতবাড়ীসহ আসবাবপত্র পুড়ে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজার সদর ফায়র সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সকে একটি আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রতিষ্টান হিসেবে গড়ে তোলা অত্যান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি জেলায় প্রতিটি উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে। এবং বর্তমান ফায়ার ষ্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও অগ্নিনির্বাপনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংযোজন করে আধুনিক ভাবে গড়ে তুলা হলে প্রতি বছর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে জেলাবাসীকে রক্ষা করা যাবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি প্রফেসর আব্দুল বারী জানান, পর্যটন শহর কক্সবাজারে নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই নেই। এরমধ্যে আধুনিক ফায়ার স্টেশন অন্যতম। এখানে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করাটা জরুরি।
এদিকে, কক্সবাজার শহরের বেশিরভাগ বহুতল ভবন এবং আবাসিক বাড়িগুলোতে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নেই বল্লেই চলে।কক্সবাজারে আবাসিক অনাবাসিক ভবন এবং হোটেল মোটেল মিলে হাজারের অধিক ভবন রয়েছে। আর এসব ভবনের শতকরা ৭০ ভাগে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নাই। এছাড়া অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতির দাম একটু বেশি হওয়ায় ভবনের মালিক এসব যন্ত্র ক্রয় করতে অনীহা প্রকাশ করে।
অন্যদিকে, শহরের ঘনবসতি ও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর দূরত্ব এবং এলাকাগুলোতে যাতায়াত সমস্যা। অধিকাংশ ঘনবসতি ও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দমকল বাহিনীর পানি ও অন্যান্য সরঞ্জামবাহী গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না সংকীর্ণ রাস্তার কারণে।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারী পরিচালক মো: জসীম উদ্দীন বলেন, কক্সবাজারের একটি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরীর পরিকল্পনা বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে এখানকার দুর্ভোগ অনেককাংশে লাঘব হবে।
গত পাঁচ বছর ধরে নতুন করে ফায়ার স্টেশন করার মতো কোনো জায়গাই খুঁজে পাচ্ছে না কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। পাঁচ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বরাবরে বেশ কয়েক দফা আবেদন করা হয়েছে। প্রতিবারেই জবাব মিলেছে, কক্সবাজার শহরে ফায়ার সার্ভিস করার মতো খাস জমি নেই।
কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজাহারুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারে খাস জমি নেই। যা ছিল সবই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখনো জমি বরাদ্দের জন্য শতাধিক আবেদন ভূমি অফিসে জমা রয়েছে। তারপরও ফায়ার সার্ভিসের জমির জন্য চেষ্টা চলছে।
কক্সবাজারের রেভিনিউ ডেপুটি কালেকক্টর (ভারপ্রাপ্ত) এম এম মাহামুদুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিসের জমির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্ব্বোচ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত জমির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যার হাউস ইন্সেপেক্টর আব্দুল মজিদ জানান, ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয় কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান স্টেশনটি।
কিন্তু বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভবনটি। নানা স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। খসে পড়েছে ছাদের বিভিন্ন জায়গায়। রয়েছে লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট। ফলে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির এই স্টেশনের মাধ্যমে পর্যটন শহরকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
বিষয়টি উপলদ্ধি করে পাঁচ বছর আগে থেকেই নতুন করে বড় পরিসরে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এজন্য প্রয়োজনীয় দুই একর জমির ব্যবস্থা করা যায়নি গত পাঁচ বছরেও।
শহরে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। এতে করে বিভিন্ন সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী যেতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। নিবার্পনে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই তাছাড়া আধুনিক অযন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রতিকুল পরিবেশে কক্সবাজার বিমান বাহিনীর পানিবাহী গাড়ীর সহযোগিতা চাওয়া হলে পাওয়া যায়না। অথচ, কক্সবাজার বিমান বাহিনীর নিজস্ব ২টি আধুনিক পানিবাহী গাড়ী রয়েছে।
শহরে আরেকটি ফায়ার সার্ভিস প্রয়োজন। তবে প্রতি বছর অগ্নিকান্ডের ফলে জেলায় প্রায় ১০/২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাড়ায় বলে তিনি ধারনা করেন। শীত মৌসুমে তুলনামূলক অনেক বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকে বলে তিনি স্বীকার করেন।


শেয়ার করুন