মন্তব্য প্রতিবেদন…

কক্সবাজারের মানুষ কী পর্যটন বোঝে?

polash:: মঈনুল হাসান পলাশ ::

থাইল্যান্ডের বিখ্যাত পাতায়া বীচ এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট হতে কলাতলী পয়েন্টের সমান হবে এর বিস্তৃতি। অথচ পৃথিবী জুড়ে এই বীচের নাম-ডাক। হলিউডের বেশ কিছু ব্লক বাস্টার সিনেমার শ্যুটিংও হয়েছে এই পাতায়া বীচে। সারা দুনিয়ার মানুষ আসে এইখানে। ্এমনকী বাংলাদেশের ধনাঢ্য লোকজনও যায় থাইল্যান্ডের ছোট্ট এই বীচে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বা ডিসকোভারী চ্যানেলের ডকুমেন্টারীতে সুযোগ পায় এই পাতায়া বীচ।
অথচ আমাদের কক্সবাজার? প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সৈকতের নামই জানে না বিশ্ববাসী। ডিসকোভারী চ্যানেলের বিশ্বের সেরা ১০টি বীচের তালিকাতেও স্থান পায় নি বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত।
খুব সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে আল জাজিরা আর বিবিসি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন তুলে ধরেছে অন্য কারণে। সার্ফিংয়ের নতুন জোন এখন কক্সবাজার সৈকত। এই নিয়ে এই দুটি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টিং হয়েছে।
এতোবড় বীচ নিয়ে আমরা শুধু বড় বড় কথা শুনি মন্ত্রী-নেতাদের মুখে আর সুবিধাবাদী আমলাদের বাক সর্বস্ব আলোচনায়। কেউ আসলে প্রয়োজনই বোধ করে না যে, এই সৈকত হতে পারে বাংলাদেশের প্রতীক।
আর সবচেয়ে দুঃখজনক এই শহরে বসবাসরত মানুষের মানসিকতা।
বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামানকে একবার ইন্টারভিউ নেয়ার সময় প্রশ্ন করেছিলাম, কক্সবাজারকে আদর্শ পর্যটন শহর করতে হলে কী করা উচিত? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এখানকার সব স্থানীয় অধিবাসীকে অন্ততঃ ১০ কিলোমিটার দুরে সরিয়ে নিতে হবে।
এই লেখার শিরোনামের প্রশ্নটা আবার করি- কক্সবাজারের মানুষ কী পর্যটন বোঝে?
সিরিয়াসলি বলছি, আপনি কক্সবাজারের মানুষ। আপনি বোঝেন পর্যটন কী?
আমাদের ঘরে মেহমান এলে, আমরা আনন্দিত হই। যতœ-আত্যি করি।
আমরা যারা কক্সবাজারবাসী, পর্যটকেরা আমাদের মেহমান। আমরা কী সত্যি তাদের সাথে মেহমানদারীর আচরণ করি?
বরং পর্যটকেরা এখানে পদে পদে হয়রানী-লাঞ্ছনা আর ভোগান্তির শিকার হন। রিক্সাওয়ালা,টমটমওয়ালা, হোটেলওয়ালা থেকে শুরু সবাই পর্যটকের পকেট কাটার ধান্ধায় থাকে। পর্যটক তো টাকা খরচ করতেই কক্সবাজার আসে। তাহলে কেনো জোর করে তার পকেট কাটতে হবে? কেনো তাকে “জবাই” করার চিন্তা করতে হবে?
এ যেনো, কেউ যখন প্রেম করতেই রাজী, তাকে ধর্ষণ করা!
সবচেয়ে করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয় বিদেশী পর্যটক এলে। রাস্তায় হাটার উপায় নেই। পেছন পেছন মাছির মতো টোকাইয়ের দল ঘোরে। সবচেয়ে লজ্জাস্কর ব্যাপার হয় তখন, যখন কোনো শেতাঙ্গ নারী পর্যটক খোলামেলা পোষাকে এই শহরে চলাফেরা করেন। রিক্সাওয়ালা-পথচারী-দোকানদার সবাই নির্লজ্জভাবে ওই নারীর শরীর দেখে। কেউ শীষ বাজায়। কেউ মারে টিটকারী।
টাকা খরচ করে বিদেশীরা কক্সবাজারে টিটকারী খেতে আসবে কেনো? কেনো অপমানিত হতে আসবে? কোনো একজন বিদেশিনীকে কক্সবাজারে এলে গায়ে ওড়ান পেঁচাতে হবে?
অনেকে বলতে চান, কক্সবাজার রক্ষণশীল এলাকা। এখানে খোলামেলা চলাফেরা করা ঠিক না। হেন-তেন। তিন বছর আগে দৈনিক সমুদ্রকণ্ঠে রিপোর্ট হয়েছিলো- এই কক্সবাজার জেলায় ৩ হাজারেরও বেশী পুরুষ সমকামী আছে। এতোই যদি রক্ষণশীল এলাকা হবে, এতো বিপুল সংখ্যক বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত লোক আসে কোত্থেকে?
যেটা বলেছিলাম, পর্যটন না বুঝে পর্যটন শহরে বসবাস করার দূর্ভাগ্যজনক।
আমাদের আসলে অনুভব করার ক্ষমতাই নেই যে, এই পর্যটন আমাদের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।
সবার আগে এই জেলার জনপ্রতিনিধি, কথিত জননেতাদেরকে পর্যটনের জ্ঞান দিতে হবে। এদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিদেশের আদর্শ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এদের সফরের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটন শহরে বসবাসের জন্য থাকতে হবে আলাদা নিয়ম-কানুন, নাগরিক আচরণ।
আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। নিজেদের দৃষ্টি দিয়ে নয়, একজন পর্যটকের দৃষ্টিতে দেখতে হবে, ভাবতে হবে কক্সবাজারকে।।

লেখক-সম্পাদক ও প্রকাশকঃ দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ।


শেয়ার করুন