কক্সবাজারের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বর্ষার কদম

DSC_0201নিজস্ব প্রতিবেদক : পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে, নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে এসেছে বর্ষা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা’।

বর্ষায় সবার আগে যে ফুলের নামটি উঠে আসে তা হলো কদম। বৃষ্টি ধোয়া বাতাসে কদম ফুলের ঘ্রাণ যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্বপ্নের কোনো প্রেমরাজ্যে। হলুদ ও সাদার মিশ্রণে কদম ফুলের পাপড়িতে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা যেন হিরের সুভাস ছড়ায়।
অথচ বাংলার প্রকৃতি থেকে “বর্ষার আগমনের বার্তা বাহক”- “কদম ফুল” যেন হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ভূবণ ভোলানো বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলের হাসি কার না ভালো লাগে। কক্সবাজারের গ্রাম কিংবা শহরের সর্বত্রই বর্ষার আগমনীতে নিজেদের মেলে ধরতো আপন মহিমায় কদম ফুল। কিন্তু কদম গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না, যে কদমকে নিয়ে এত কি^ছু আষাড়ের বার্তবাহক সেই প্রিয় ফুলের গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। কোথাও এখন আর আগের মতো । কদম এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম।

কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখলে হাতে গোনা কিছু কদম গাছ চোখে পড়বে। যার মধ্যে চৌধুরী ভবনে রয়েছে ৪টি কদম গাছ। শখের বসে চৌধুরী পরিবারের ইমরুল কায়েস চৌধুরী তার বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়েছিলেন ৪টি কদম ফুলের গাছ। যেখানে এ বর্ষায় শোভা পাচ্ছে শত শত কদম ফুল। শহরের রুমালিয়ারছড়ার চৌধুরী ভবন থেকে গতকাল ছবিগুলো তুলেছেন দৈনিক বাঁকখালীর স্টাফ রিপোর্টার ও সৌখিন ফটোগ্রাফার আরোজ ফারুক।

DSC_0104
গাছে কদম ফুটেছে, রিমিঝিমি বৃষ্টিতে থৈ থৈ চারিধারা জৈষ্ট্যের তীব্র তাপদাহে তপ্ত দেহ। মনে স্বস্তির ছোয়া নিয়ে ফিরে আগে আষাঢ় কল্পনাই করা যায় না। বাড়ির আঙ্গিনায় রাস্তায় দু’পাশে কদমগাছ ছিল চোখে পড়ার মতো । আর আষাঢ়ের পুরো সময়টাই কদমগাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকত, যা দেখে তৃপ্ত হতেন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ । এই সময়ে মানুষ প্রিয়জনকে কদম ফুল উপহার দিত। গ্রামের শিশু কিশোর সহ দুরন্ত কিশোরধারা কদমতলায় কদম ফুল নিয়ে খেলা করত কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তা একেবারেই হারিয়ে যেতে চলেছে, যেন আকাল পড়েছে কদম ফুলের সৌন্দর্যে। যান্ত্রিক যুগে মানুষ অতীত ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। বাড়ির আশেপাশে ফলমুল ও ফুলের গাছ না লাগিয়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় পাহাড়ি গাছ লাগাচ্ছে।
প্রকৃতি প্রেমীক ক’জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌদর্য্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌদর্য্য তৈরী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছগাছালী ও ফলমুল। লাভের অঙ্কের হিসাব মিলানোর জন্য মানুষ আর তার বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাইছে না। ‘কদম’ গাছের জায়গায় এখন তারা মেহেগেনি, রেইন্ট্রিসহ নানান দামি দামি কাঠের গাছ রোপণে ঝুঁকছে। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য সরকার পাশাপাশি সামাজিক ভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী।
জলবায়ু পরিবর্তনে বর্ষা যদিওবা পথ হারিয়েছে! তবু বর্ষার আগমনে কবিগুরুর ভাষায় বলতেই হয়, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,/আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,/কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।/ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’।


শেয়ার করুন