‘ককসবাজার’ নাম পরিবর্তন করে ‘দরিয়ানগর’ করা হোক

MONIR eমনির ইউসুফ :

দরিয়ানগর, দরিয়া তীরের পলি বালু ও ফেনা বুকে নিয়ে স্তরে-স্তরে সজ্জিত যে ভূ-তীর; তাই দরিয়ার নগর + দরিয়ানগর। সেই বালু-তীরের পলেস্তরায়, সেই মাটির বিন্দু-বিন্দু নির্যাসে, ভূ-গঠনে, বসবাস করা মানুষই দরিয়া তীরের মানুষ। অর্থাৎ দরিয়া তীরের ঘাসে, দরিয়া তীরের অরণ্যে, চরে, রাঙামাটিতে, সাগর তীরের ভাঁজে-ভাঁজে, চারণভূমিতে, সমুদ্র তীরে, বাজার থেকে নগর হয়ে ওঠা আবাসিক জন-ভবনে, মাটির গুহা থেকে ইট-সিমেন্টের গুহায়, নগ্নতার পোশাক ছেড়ে কাপড়ের পোশাক পরে ঢুকে পড়া আধুনিক নামধারি গুহাধুনিক দুঃখী ও সুখী মানুষের বাসস্থানের নামই ‘দরিয়ানগর’। অবশ্যই ‘দরিয়ানগর’ হওয়ায় কী সমীচীন নয়! বিট্রিশ কলোনির ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য একজন সামরিক অফিসার ‘হিরামকক্স’ এর নাম ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বহন করেছে তো বহন করেছে, স্বাধীন বাংলাদেশও বহন করে চলেছে। এ চিন্তাহীন অজ্ঞতায় দরিয়ানগরবাসি কত আর সময় যাপন করবে! একি এই জনপদের জন্য লজ্জাস্কর বিষয় নয়! কেন এ লজ্জা বহন করতে হবে আমাদের! আমাদের নিজস্ব চিন্তা, নিজস্ব বোধ বা স্বকীয়তা বলতে কি কিছু নেই, থাকবে না! জগতের ইতিহাসে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদ যেখানে সম্প্রসারিত হয়েছে, সেখানেই ঘটেছে ইতিহাস ধ্বংস ও পাল্টানোর লঙ্কাকা-। পেঁওয়া, পালংচি, পালঙ্কি, হলুদ ফুলের দেশ এমন কাব্যময় ও হৃদয়গ্রাহি নাম মুছে দিয়ে মানুষের স্থানিক ইতিহাস নিয়ে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদিরা যে অপরাধ করেছে তার কোন হিসেব পৃথিবীতে রাখা হয়নি। স্থানীয় মূর্ত ও বিমূর্ত লোকসম্পদ সভ্যতার ধোঁয়া তোলে তারা লুট করে নিয়ে গেছে। সে অপরাধের তারা কখনো প্রায়শ্চিত্ত তো করেনি বরং লুট-করার সভ্য অহংকারে পৃথিবীকে আলোকায়নের গর্ব নিয়ে এই বর্বর জলদস্যুরা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এখনও তা জারি রেখেছে এবং সাম্প্রচারিক মিডিয়া নিয়ে দখল করে রেখেছে মানুষের মনোভূমি। মানুষ তার ঘামে-কষ্টে, দুঃখের নিরন্তর উৎসে অর্জিত টাকা দিয়ে সে সা¤্রাজ্যের বেড়াজাল ও অর্ন্তজালে নিজের অজান্তেই বন্দী হয়ে পড়েছে। সেখান থেকে বের হওয়া তার জন্য এক-জীবনেই আর সম্ভব হচ্ছে না। সা¤্রাজ্যবাদের বৃত্তের ভেতর সে বন্দী, পুরো-পৃথিবীটাই তার জন্য শেকল। এই মনোশৃঙ্খলিত ও বন্যাধুনিকতায় শৃঙ্খলিত জীবন নিয়ে সে কী করবে, কী করবে এই পারমানবিক বারুদ দিয়ে ঘেরা পৃথিবীতে। মানুষ আধুনিক হতে চাই, স্মার্ট হতে চাইÑ মানুষের সেই মনস্তত্ত্বকে অনেক আগেই বুঝে ফেলেছে পাশ্চাত্যের আলোকায়নের উদগাতা বুদ্ধিজীবীবৃন্দ। তাই তারা পৃথিবী নিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন করছে। কেউ ধরতে পারছে না তা, এই সীমাহীন চিন্তাবৃত্তির অপরাধ নিয়ে ঘাতক সা¤্রাজ্যবাদ আমাদের নাচিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা ঝাঁকের কৈই হয়ে নাচছি তো নাচছি, নাচছি তো নাচছি। সা¤্রাজ্যের নাচনওয়ালারা তা দেখে গ্লাসে গ্লাসে পান করছে অহংকারের মদ। আমরা সে অহংকার ও মদের গ্লাসের টুনাটান শব্দে-চিয়ার্সে ভেসে যাচ্ছি, ভেসে যাচ্ছি।
দরিয়ানগরের ভূমিপুত্র-বঙ্গোপসাগরীয় সভ্যতার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ দানÑ আলাওলের উত্তরসাধক মৈনপাহাড়ের গর্ভজাত এই অঞ্চলের শ্রেষ্ঠসাধক উত্তর ঔপনিবেশিক চিন্তার তন্ময় ও মন্ময় সন্তান- সমাজ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও আবার সেই সমাজকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা কবি, হ্যাঁ একমাত্র কবিই বুঝতে পেরেছে তা, সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছে এই কবি। গতানুগতিক সমাজ যাদেরকে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে সেই সৃষ্টিশীল অবাধ্য কবিই ধরতে পেরেছে এই ঘনীভূত দূর-ষড়যন্ত্র।
সা¤্রাজ্যবাদকে চিহ্নিত করে দরিয়াতীরে বেড়ে ওঠা স্থানের নাম দিয়ে লিখে ফেলেছে আরেক মহাকাব্য ‘ দরিয়ানগরকাব্য’। ‘কক্সসাহেবের বাজার এখন দরিয়ানগর/ সেই নগরত থাইক্কুম বাঁছি হাজার বছর। ককসবাজারের নাম প্রশাসনিকভাবে বদলিয়ে ‘দরিয়ানগর’ নামেই নামকরণ করা হোক। এটাই এখন গণমানুষের প্রত্যাশা। প্রস্তাবক : মনির ইউসুফ সমর্থক : সরওয়ার আলম, সিরাজুল হক সিরাজ, মানিক বৈরাগী, কালাম আজাদ, আবদুল আলীম নোবেল, আজাদ মনসুরসহ আরও অনেকে এবং এ অঞ্চলের জনগণমন।। নামকরণে : মুহম্মদ নূরুল হুদা। (চলবে)


শেয়ার করুন