কক্সবাজার শহরের ২০ পয়েন্টে কিশোর গ্যাং’র দৌরাত্ম্য

ডেস্ক নিউজঃ

কক্সবাজার শহরের অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কিশোর গ্যাং এর উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে স্কুল কলেজ শুরু এবং ছুটির সময় কিশোর গ্যাং নামের বখাটেরা উক্ত পয়েন্ট সমুহে প্রতিদিন ভিড় করছে। তাদের উৎপাতের কারণে অনেক অভিভাবক উৎকন্ঠায় সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না। আবার অনেক কিশোর গ্যাং আধিপাত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে খুন খারাবিতে। তাদের দমনে প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও শহরের কোথাও না কোথাও ঘটছে তাদের উৎপাতজনিত অপরাধ।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মুনিরুল গিয়াস বলছেন-তাদের দমনে সদা সক্রিয় থেকে মাঠে কাজ করছে পুলিশ এবং ৬ মাসে ২ শতাধিক কিশোর অপরাধীকে আটক করে বাছাই শেষে আদালতে পাঠিয়েছেন। বয়স কম থাকার কারণে অনেক কিশোরকে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি কিশোর অপরাধ দমনে অভিভাবকদের সচেতনতা এবং পারিবারিক, নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়- শহরের অভ্যন্তরের শিক্ষা প্রতিষ্টান কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জাব্বারিয়া একাডেমী, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসার সম্মুখ এলাকা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, কক্সবাজার সিটি কলেজ এলাকার সামনে, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাস্প, গোলদিঘীর পাড়, বায়তুশ শরফ সড়ক, সিকদারমহল এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সামনে, কালুর দোকান ও বার্মিজ মার্কেট এলাকার দু’একটি কোচিং সেন্টারে সামনে, শহরতলির ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেইট, মেডিকেল কলেজ এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন ছদ্মবেশে নানা কৌশলে উৎপেতে থাকে কিশোর অপরাধি ও বখাটেরা। তারা স্কুল এবং কলেজগামি ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে ইভটিজিং করছে। অনেক ছাত্রী লজ্জায় কিংবা বখাটেদের ভয়ে তা কাউকে জানাতে ও পারছেনা। অনেক কিশোর গ্যাং বিভিন্ন নাম ধারন করে ছদ্মবেশে সন্ধা হলেই শহরের র্নিজন পয়েন্টে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে সক্রিয় হয়ে পড়ে। শহরের কলাতলির সুগন্ধা পয়েন্ট, জাম্বুর মোড়, সী ইন পয়েন্ট, লাবণি মোড়, হাসপাতাল সড়ক, বৈদ্যঘোনা,লাইটহাউজ এলাকা, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, চন্দ্রিমা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং এর আর্মস টিম। র্পযটকদের টার্গেট করে এসব টিম ভোরে এবং সন্ধ‍্যা নামলেই মাঠে নামে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। কিশোর গ্যাং নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কে কেন্দ্র করে বৃদ্ধি পেয়েছে মারামারি, কিশোর অপরাধ। ফলে প্রতিদিনই অগোচরে পর্যটকসহ কারো না কারো মা, বোন, স্ত্রী অথবা মেয়ে লাঞ্চিত হচ্ছে তাদের হাতে। অনেকে হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এদিকে এ সব কিশোর গ্যাংদের অধিকাংশের বয়স ১৪-২২ বছরের মধ্যে । বেশিরভাগই প্রায় সচেতন, অনেক নামকরা পরিবারের সন্তান অথচ তাদের প্রতিদিনের কাজ হচ্ছে ছিনতাই, মাদক গ্রহন, শহরের স্কুল কিংবা কোচিং সেন্টার গুলোর পাশে দাড়িয়ে পড়তে আসা মেয়েদের উত্যক্ত করা ।

এদিকে কিশোর গ্যাং এর উৎপাত বৃদ্ধি এবং তাদের দমনে পুলিশের ভ’মিকা সম্পর্কে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মুনিরুল গিয়াস বলেন- শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সমুহে কিশোর গ্যাং এর উৎপাতরোধে আমাদের নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। গেল ৬ মাসে আমরা ২ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করেছি। তাদের বিভিন্ন অপরাধ, আগে মামলা আছে কিনা যাছাই করে ,গুরুতর অপরাধী এবং আসামি হলে আদালতে সোর্পদ করেছি। অনেককে অভিভাবকদের ডেকে মুচলেকা নিয়ে জিম্মানামা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। অনেক কিশোর তাদের অপরাধ বড় কিন্তু বয়সের কম থাকায় আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের নিয়ে অনেক সময় আমাদের ও বিপাকে পড়তে হয়।
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রনে পুলিশের কার্যক্রম জোরদার আছে এবং একাধিক টিম প্রতিদিনই টহল দেয় জানিয়ে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান- আমরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমুহে টহল জোরদার করেছি। একাধিক কিশোর গ্যাং আমাদের নজরদারিতে আছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারে এবং পর্যটকদের ভ্রমন র্নির্বিগ্নে আমরা সর্বদা সজাগ আছি। তিনি কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবক, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, ইমামদের ভুমিকা রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপশি নৈতিক শিক্ষাকে সামনে আনার আহবান জানান।
এদিকে কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষাবীদ মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন- ইদানিং শহরের আনাচে কানাচে কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ব্য বেড়েছে। প্রশাসনকে আরো সক্রিয় করা না গেলে উৎকন্ঠা বাড়বে অভিভাবকদের। কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশকে , সমাজের যুবকশ্রেণিকে, সর্বোপরি সকল অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাদের সন্তানদের বিষয়ে অভিভাবকদের অবহিত করা, কাউন্সেলিং করে বুঝানো এবং কে কার সাথে মিশে তার নজরদারি রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ইভটিজিং প্রতিরোধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
কিশোর অপরাধ, ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজিক, পারিবারিকভাবে অভিভাবকদের সচেতনতা দরকার বলে মনে করেন শিক্ষক, প্রশাসন ও বিজ্ঞমহল। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরো অগ্রনী ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন সচেতনমহল।


শেয়ার করুন