এবার ইসলামে ধর্মান্তরিত কমলাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে রিট

বিনোদন ডেস্ক

কেরালা: ভারতের বিখ্যাত নারী লেখক ও কবি কমলা দাসের বায়োপিক নিয়ে নির্মিত ‘অ্যামি’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে কেরালার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। বিখ্যাত লেখক কমলা দাস নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম মাধবিকতি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে কমলা সুরাইয়া রাখেন।

পিটিশনটি দায়ের করেন কেরালা হাই কোর্টের আইনজীবী কে.পি. রামচন্দ্র। পিটিশনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, কমলা দাসের জীবনকে বিকৃত করে চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়, তার ইসলামের ধর্মান্তর ছিল ‘লাভ জিহাদ’ -এর ফল।

আবেদনকারী তার আবেদনে উল্লেখ করেন যে, পূর্ণ শক্তি ও সমৃদ্ধিসহ তিনি হিন্দুধর্মকে ভারতের মাটিতে দৃঢ়ভাবে দেখতে চান এবং মৌলবাদী শক্তির দ্বারা যখনই কোনো হিন্দুকে অবৈধ, বেআইনি এবং জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটে, তা তাকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করে। তার মতে, কমলা দাসের ইসলামে ধর্মান্তরের মাধ্যমে কেরালায় ‘লাভ জিহাদের শুরু’।

তিনি অভিযোগ করেন যে, চলচ্চিত্রের পরিচালক কামাল মৌলবাদী ইসলামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এবং এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ‘লাভ জিহাদ’কে ন্যায্যতা দেয়ার একটি প্রচেষ্টা।

আবেদনকারী দাবী করেন যে, চলচ্চিত্রটিতে সত্যিকারের তথ্য তুলে ধরা হয়নি এবং সুতরাং এটি হিন্দু হিসাবে তার অধিকারকে ‘লঙ্ঘন’ করছে। এতে এও বলা হয় যে, চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হলে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে এবং এর ফলে আইন-শৃঙ্খলার ব্যাঘাত হতে পারে।

এছাড়াও, চলচ্চিত্রটি হিন্দু সমাজের মধ্যে ‘ভ্রান্ত ধারণা’র সূচনা করবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাই, চলচ্চিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য ভারতের ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন’কে নির্দেশ দেয়ার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়।

চলচিত্রটি আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে মুক্তির জন্য দিন নির্ধারিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি, সুপ্রিম কোর্টে সৃজনশীল চলচিত্র ‘পদ্মাবতী’ মুক্তি নিয়েও অনুরূপ আবেদন করা হলে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে।

এর আগে, চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য লেখিকা কমলা দাসের চরিত্রের জন্য বিদ্যা বালানকে নির্বাচিত করা হয়েছিল কিন্তু উগ্র হিন্দুদের হুমকির মুখে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন বিদ্যা। পরবর্তীতে বিদ্যার পরিবর্তে জনপ্রিয় মালাই নায়িকা মঞ্জু ওয়ারিয়ারকে মনোনীত করেন পরিচালক কামাল।

নায়িকা মঞ্জু ওয়ারিয়ার

কামাল দীর্ঘ দিন যাবৎ কমলা দাসের উপর একটা ছবি বানানোর পরিকল্পনা করে আসছিলেন এবং এজন্য তিনি কমলার কাজ সম্পর্কে পড়াশুনা করেন। তার (কমলার) বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। যাতে তিনি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্টে তা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন।

কমলা দাস (১৯৩৪-২০০৯) তার চমৎকার লেখা ও নারীর যৌনতা নিয়ে সরল স্বীকারোক্তির মাধ্যমে একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেন। ৪২ বছর বয়সে তিনি তার আত্মজীবনী ‘আমার গল্প’ প্রকাশ করেন। যা একটি চমৎকার মালায়ালম গদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

তিনি তার জীবনের শেষপ্রান্তে এসে নিজের প্রেমিকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। যদিও তার ভালবাসার সেই মানুষটি সম্পর্কে এখনো কেউ জানে না।

কামাল জানিয়েছিলেন যে, তার ছবিটিতে কিংবদন্তি এই লেখিকার বাস্তব জীবনের গল্প প্রতিফলিত করা হবে।

২০১৬ সালে চলচ্চিত্র উৎসবে থিয়েটারে সিনেমা প্রদর্শনের সময় জাতীয় সংগীত চলাকালে ওঠে না দাড়ানোর অভিযোগে কয়েকজন লোককে গ্রেপ্তার করা হলে কামাল তাদের সমর্থন করে বক্তব্য দেন। তাদের সমর্থন করার জন্য ক্ষমতাসীন বিজেপির উগ্রপন্থীদের দ্বারা পরে তিনি আক্রমনের শিকার হয়।

সূত্র: লাইভ ল


শেয়ার করুন