এবার আন্দোলনের হুমকি নয়, পুনর্গঠনে মনোযোগ

বিগত কয়েক বছর দুই ঈদের পর মাঠে নামার হুংকার দেয়া প্রায় রুটিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। তবে এবার আর সেটি দেখা যায়নি। এবার আন্দোলন নয়, বিএনপির মূল চিন্তা দল পুনর্গঠন নিয়ে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের অনেকে তৃণমূলের সার্বিক চিত্র জমাও দিয়েছেন কেন্দ্রে।

ঈদের পর পুনর্গঠন কার‌্যক্রম জোরালোভাবে শুরুর আভাস দিয়েছেন বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা। তারা টিম আকারে তৃণমূলে সফর করতে পারেন বলে জানা গেছে।

দেলীয় সূত্র জানায়, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলায় বিএনপির নিয়মিত কমিটি হয়নি। অনেক জেলা চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। কোথাও আবার ভারপ্রাপ্তের মাধ্যমে চলছে সাংগঠনিক কাজ।

বিএনপির নেতারা বলছেন, এ কারণে নতুন নেতৃত্ব যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমনি জেলার দলীয় কার‌্যক্রমও আছে থমকে। এরই প্রভাব পড়ছে আন্দোলন কর্মসূচিতে। তাই আন্দোলনে নামার আগে এবার দল গুছিয়ে নিতে চান বিএনপি-প্রধান।

গত বছর মে মাসে তৃণমূল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। কেন্দ্র থেকে এ জন্য দুই মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের জাতীয় কাউন্সিলসহ বেশ কিছু কারণে সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়। তবে কাউন্সিলের আগে ১৫টির মতো জেলায় নতুন কমিটি দিতে পেরেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

সবশেষ ঢাকা জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়েছে। আগের মতোই এ ক্ষেত্রে সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান।

এদিকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যাতে আবার থমকে না যায় তার জন্য ইতিমধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মোহাম্মদ শাহজাহান। গত আগস্টে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার শাহজাহানকে সমন্বয়ক করার কথা জানানো হয়।

মোহাম্মদ শাহজাহান এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন,দলের পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলো আবার। পুনর্গঠন কাজ দ্রুত করতে খুব শিগগির বিভাগ ওয়ারি বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।

তবে দল গোছাতে মাঠে নামার আগে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ নিজ বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বিশেষ করে কোথায় মূল দল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটির কী অবস্থা তার বিস্তারিত চিত্র তুলে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়।

বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলসিক জাহান শিরিন এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘কেন্দ্রের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমি আমার বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমার বিভাগের আট জেলার মধ্যে ঝালকাঠি, পিরোজপুর ছাড়া বাকিগুলোতে দ্রুত কমিটি করার বিকল্প নেই। এই দুই জেলায় যেকোনো সময় সম্মেলন করা সম্ভব।’

বিলকিস বলেন,‘শুধু মূল দল নয়, বেশির ভাগ জায়গায় অঙ্গসংগঠনের কমিটির অবস্থাও নাজুক। সেসব বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ঈদের পর এসব নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করা হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের গুম, খুন, আহত, নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের তালিকা দ্রুত কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কিশোরগঞ্জ ও শেরপুরের অবস্থা ভালো আছে। তা ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগ হওয়ায় দক্ষিণ-উত্তরের বাইরেও এবার মহানগরের আলাদা কমিটি করতে হবে। ঈদের পর এ নিয়ে জোরালোভাবে কাজ শুরু হবে। কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা দেয়া আছে।’

—–ঢাকাটাইমস


শেয়ার করুন