এপিজে কালাম সমস্যাকে যেভাবে দেখতেন

Capture75সিটিএন ডেস্ক:

ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের একটি কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সমস্যাকে কখনো এড়িয়ে যেতে না করেছেন। বরং সমস্যা এলে তার মুখোমুখি দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। সমস্যাবিহীন সাফল্যে কোনো আনন্দ নেই বলেও দৃঢ়ভাবে বলতেন। জ্ঞান আহরণ থেকে কখনো বিরত না থাকার কথা বলতেন। এই জ্ঞানই অন্য গুলাবলি অর্জনে সাহায্য করবে। নিজেকে অনন্যসাধারণ করে তোলার চেষ্টার কথা বলতেন। আমাদের চারপাশের পৃথিবী সর্বদা সাধারণের কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টায় লিপ্ত। হতাশ না হয়ে নিজেকে স্বপ্নপূরণের কতটা কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারছি সেদিকে নজর রাখার কথা বলতেন। তিনি বলতেন, মানব সমাজে সমস্যা থাকা প্রয়োজন সাফল্য উপভোগের জন্য। মা, বাবা ও শিক্ষক, এই তিন স্তরের মানুষই পারেন তরুণদের যথাযথ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে উন্নত করতে। ড. কালাম রচিত ‘ইন্ডিয়া টোয়েন্টি টোয়েন্টি’ গ্রন্থে যে আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে, তা আমাদেরও আশাবাদী করে তোলে। তিনি ২০২০ সালের মধ্যে ভারতেক ‘নলেজ সুপারপাওয়ার’ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন।
কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়া মানেই বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। আর আমাদের দেশের বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৩ কোটি বেকার এ সংখ্যাটি দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। আর বেকারত্ব জীবন যুবকদের কাছে একটি অভিশাপ। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রতিটি পরিবারের কর্তাব্যক্তি মনে করে তাদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখে একটি ভালো চাকরি পেয়ে বাকি জীবনটা আরাম-আয়েশে কেটে যাবে। তরুণদের শিক্ষা প্রশিক্ষণের অভাবে স্বপ্ন স্বপ্নেই থাকে। স্বপ্নের সাথে বাস্তবের ফারাক যোজন যোজন। বেকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে দিয়ে কোন জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় না।
ডিপ্লোমা শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি অগ্রসর হতে পারে না। ডিপ্লোমা শিক্ষার টার্গেটে দিন দিন পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্বায়ন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন, সমাজের চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সংগতি রেখে ডিপ্লোমা শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। সকল দেশেই পণ্য ও পেশাভিত্তিক ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, কর্মমেধাবী, দুর্গম এলাকার তরুণদের কর্মক্ষম হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। ডিপ্লোমা শিক্ষা গ্রহণ করে ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে সম্মিলিতভাবে বড় স্বপ্নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ডিপ্লোমা শিক্ষা গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশের সুচিন্তার ফসল বিভাগীয় ডিপ্লোমা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে তরুণদের প্রয়োজনীয় ডিপ্লোমা শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া ও শিক্ষা-সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সামাজিকতার মাধ্যমে তাদেরকে সুন্দর সন্তান হিসেবে গড়ে তোলা। তাহলে একজন ছাত্র শুধু শিক্ষা জীবন পর্যন্ত নয়, সারা জীবন নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ হবে।
ড. কালাম আমাদের মধ্যে না থাকলেও তার স্মৃতি ও কর্ম আমাদের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও মানবিকতার পথে পরিচালনা করবে। মৃত্যু যে কোনো মানুষের অনিবার্য পরিণতি, মৃত ব্যক্তির স্মৃতি ও কর্ম হচ্ছে অক্ষয় সম্পদ। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছেও ‘জনগণের রাষ্ট্রপতি’ এপিজে আবদুল কালামের স্মৃতি ও কর্ম অক্ষয় সম্পদ হয়ে থাকবে। তাকে স্মরণ ও অনুসরণ করে আমরা তার স্বপ্নের পথ ধরে জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবিকতায় নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাব এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


শেয়ার করুন