এত বন্দুকযুদ্ধের পরও বেড়েছে মাদক কেনাবেচা

প্রথম আলো

ঢাকঢোল পিটিয়ে সাঁড়াশি অভিযান আর কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর অনেকে ধরে নিয়েছিল, দেশে মাদকের পাচার ও কেনাবেচা কমে যাবে। কিন্তু ফলাফল উল্টো। অভিযান শুরুর এক বছরের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে, মাদকের আমদানি ও কেনাবেচা কমেনি, বরং বেড়ে গেছে।

পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে, অভিযান শুরুর পর গত এক বছরে বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে ৫ কোটি ১৪ লাখ ইয়াবা বড়ি এবং ১০ মণ হেরোইন উদ্ধার হয়েছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এর আগে কোনো বছরেই ৪ কোটির বেশি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, স্থলপথ ও জলপথ দুই দিক থেকেই মাদক আসছে। এক বছরে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার তারই বড় প্রমাণ।

এ ধরনের অভিযানের পরও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন—প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, এটা অভিযানেরই সুফল। এটিকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। এখন মানুষ সচেতন হয়েছে, তারা খবর দিচ্ছে। সে কারণে এসব উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে।

মাদকের ভয়াবহতা রোধে গত বছরের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী অভিযানের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে অভিযান শুরু হয় ১৫ মে থেকে। এই অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩৫৮ জন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৬৯ জন, র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১০৬ এবং বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২ জন নিহত হন। বাকি ৭১ মাদক ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার জেলাতেই নিহত হয়েছেন ৯৫ জন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদক এখন আর অত সহজলভ্য নেই। তা ছাড়া যাঁরা এই ব্যবসায় যুক্ত, তাঁরাও প্রকাশ্যে নেই। এখন মাদক কেনাবেচা হলেও তা খুব গোপনে ও সীমিত পর্যায়ে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে চলমান অভিযানের কারণে।

তবে অভিযানে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো বলছে, মাদক প্রতিরোধে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ঘোষণা করা হলেও এই অভিযানের ব্যাপারে শুরু থেকে সব মহল আন্তরিক ছিল না। আবার অভিযান নিয়ে বাহিনীগুলোর ভেতরে কোনো সমন্বয়ও নেই। সে কারণে অভিযান করে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, এমনটা আশা করছেন না কেউই।


শেয়ার করুন