এখনো শত শত হাজি নিখোঁজ

fp03_big-400x300সিটিএন ডেস্ক:

সৌদি আরবের মিনায় পদপৃষ্ট হয়ে শত শত হাজির মৃৃত্যুর পর এখনো অনেক হাজি নিখোঁজ রয়েছে। এর পাশাপাশি মৃত হাজিদের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে তবে তা হচ্ছে ধীরগতিতে। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে তাদের মৃত হাজিদের পরিচয় ঘোষণা শুরু হয়েছে। মিনায় ওই ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও সৌদি কর্তৃপক্ষ মোট কতজন হাজি মারা গেছে, নিখোঁজ রয়েছে কতজন বা আহতদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো দিতে পারছে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। প্রথমে আফ্রিকার হাজিদের দোষারোপ করার পর এখন সৌদি আরব ইরানের হাজিদের দোষারোপ করতে শুরু করেছে।
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মিনার ঘটনা নিয়ে ইরান রাজনীতি শুরু করেছে। ইরান বলছে, সঠিক তদারকি করতে ব্যর্থ হচ্ছে সৌদি আরব। তাই হজ ব্যবস্থাপনা মুসলিম দেশগুলো বা ওআইসির ওপর হস্তান্তর করা উচিত। গ্রান্ড মুফতি বলেছেন, হাজিদের পদপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু তাদের নিয়তি মাত্র।
এমন প্রেক্ষাপটে হাজিরা যার যার দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। তাদের অনেক পরিচিত হাজিদের নিখোঁজ রেখেই। সৌদি গেজেট বলছে, ইন্দোনেশিয়া মৃত হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৪১’এ। বাড়ছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত সহ অন্যান্য দেশের মৃত হাজিদের সংখ্যাও। ইন্দোনেশিয়ার ১০ জন হাজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আর এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৮২ জন। বাংলাদেশের ৯৮ জন হাজি এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া হজ কর্মকর্তারা বলছেন, পদপৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার পর তাদের লাশ এমনভাবে রাখা হয়েছে যে তাতে অনেকের মুখমন্ডল সহ শরীর বিকৃত হয়ে গেছে। তাদের জামাকাপড়, পরনের কোনো ব্রেসলেট, চেইন, ঘড়ি বা অন্যকোনো চিহ্ন দেখে শনাক্ত করা সত্যিই কঠিন। একমাত্র ভরসা আইডি কার্ড। যা লাশের সঙ্গে পাওয়া গেলে তাদের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া সহ অন্যান্য দেশের হজ কর্মকর্তারা তাদের নিখোঁজ নাগরিকদের এভাবেই খুঁজে ফিরছেন হাসপাতাল, মর্গ সহ বিভিন্ন স্থানে।ভরষব-২৮-১৪৪৩৪৬৫৩৮৭৮৯৭৮৬৬৪০০
পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের কর্মকর্তারা এখনো ২১৭ জন নিখোঁজ হাজিকে খুঁজছে। পাকিস্তানের হজ কর্মকর্তা সরদার মুহাম্মদ ইউসুফ জানান, ৩৬ জন পাকিস্তানি হাজি মারা গেছে, আহত হয়েছে ৩৫ জন এবং এখনো ৮৫ জনের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।
মিসরের ধর্মমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোখতার গোম্মা মিডিল ইস্ট নিউজ এজেন্সিকে জানান, অন্তত ৫৫ জন মিসরীয় হাজি মারা গেছেন। ২৬ জন হাসপাতালে থাকলেও ১২০ জন মিসরীয় হাজির কোনো খোঁজ মিলছে না। ভারতের নিহত হাজির সংখ্য আরো ১০ বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৪৫’এ। তবে ভারতের ৫০ জন হাজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
সৌদি আরবের কিং ফয়সাল হাসপাতালে ৩, মক্কায় কিং আব্দুল্লাহ মেডিকেল সিটিতে ৫, আল-নূর হাসপাতালে ৭, মিনা ই আর হাসপাতালে ৬, হিরা হাসপাতালে ১, নিমরা হাসপাতালে ১.আল-জাসর হাসপাতালে ৫, মিনা আল-বাদি হাসপাতালে ২, আল-জা“ি হাসপাতালে ২, শেশা হাসপাতালে ৫, মিনা ডিসপেন্সারিতে ১, সিকিউরিটি ফোর্স হাসপাতালে ১০ ও কিং আব্দুল আজিজ ন্যাশনাল গার্ড হাসপাতালে ২ জন হাজি চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি হাজি মারা গেছে ইরানের। ইরানের ১৬৯ জন হাজি মারা গেছে। এখনো ৩ শতাধিক হাজি নিখোঁজ বলে দাবি করছে দেশটির সরকারি টিভি। ইরানের শতাধিক হাজি আহত হয়।
জেদ্দা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বিভিন্ন দেশের ১৬১ জন হাজি। জেদ্দা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মুবারক আল-আসির জানান, ৮৯ জন আহত হাজিকে কিং আব্দুল আজিজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিং আব্দুল্লাহ মেডিকেল কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে আরো ৪০ জন হাজিকে। কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ১৫ জন হাজিকে। কিং ফাহাদ আর্মড ফোর্সেস হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ১০ জন হাজিকে। ডা. বখশ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ২ জন হাজিকে। আল-জেদানি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ১ জন হাজিকে।
এর আগে সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ জানান, নিহত হাজিদের স্বজনদের কাছ থেকে মৃতদের সৌদি আরবে দাফন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা বলছেন, মক্কার মত পবিত্রভূমিতে হাজিদের দাফন করার ইচ্ছা শুধু যে পরিবারের তা নয়, এমনকি অনেক হাজিও তা মনে মনে লালন করে থাকতেন।
এদিকে ইরান দাবি করছে তাদের মৃত হাজির সংখ্যা ১৬৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২২৬‘এ দাঁড়িয়েছে। ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানায়, ২৪৬ জন ইরানি হাজির কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি।
নাইজেরিয়ার জাতীয় হজ কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহি মুখতার বলেছেন, তার দেশের ৫৬ জন হাজি মারা গেছে ও ৭৭ জন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ মর্গে রাখা ১১’শ হাজির লাশের ছবি বিভিন্ন দেশের কাছে সরবরাহ করেছে। তবে এদের মধ্যে সবাই পদপৃষ্ট হয়ে নয়, অনেকে মারা গেছেন, হিটস্ট্রোকে, হৃদরোগে বা বাধ্যর্কজনিত কারণে।


শেয়ার করুন