এক সিটিতে দুই মেয়র

Mayor_ctg_sm_235301566চট্টগ্রাম: আড়াই মাস ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চালাচ্ছেন দুইজন মেয়র।  একজন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  অন্যজন আ জ ম নাছির উদ্দিন নির্বাচিত হলেও আইনী জটিলতায় এখনো দায়িত্ব বুঝে পাননি। শুধুমাত্র ফাইলে স্বাক্ষর ছাড়া সিটি করপোরেশনের সবকিছুই চলছে আ জ ম নাছিরের নির্দেশে।

দায়িত্বপালন নিয়ে এ আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৮টি সাধারণ ও ৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও। এসব ওয়ার্ডে এবার নতুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।  আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিতে না পারলেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে করপোরেশনের কর্মকাণ্ড তদারকির প্রতিযোগিতায় পুরনোদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন নতুনরাও।

২৭ মার্চ ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন।  ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় কার্যত ক্ষমতাহীন মেয়রে পরিণত হন তিনি।  নিয়মিত অফিস করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তার।

নির্বাচনের আগে নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখা এবং উন্নয়ন কাজ চলমান রাখার স্বার্থে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সকল আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অর্পণ করা হয়।

তবে গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক ফাইলে স্বাক্ষর করার আগে ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে অবগত করতেন ও পরামর্শ নিতেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম।  নির্বাচনের পর তাও নিয়মিত করা হয় না।

আ জ ম নাছির উদ্দিন নির্বাচিত হয়ে শপথ নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন।  বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেন। সবই নগর ভবনের বাইরে। এসব বৈঠকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন তিনি। কোন কোন কর্মকর্তাকে অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তিরষ্কার করে সতর্কও করেন।

এরপর থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কর্মকর্তারা ছুটে যান আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে।  কাগজে কলমে দায়িত্ব না নিলেও মূলত তার নির্দেশে চলছে সিটি করপোরেশন।

এছাড়া ৪১ওয়ার্ডে রয়েছে ৬৯জন কাউন্সিলর। এরমধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডে নতুন-পুরনো মিলে দুইজন কাউন্সিলর। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডেও তাই।

বর্তমান কাউন্সিলররা দৈনন্দিন কাজকর্মে সক্রিয় থাকলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয় নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা।

আইন অনুযায়ী মেয়াদ থাকলেও অনেক পুরনো কাউন্সিলর দায়সারাভাবে সময় পার করছেন।  অনেকে নগর ভবনে আসাও ছেড়ে দিয়েছেন।

১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সৈয়দা কাশফিয়া নাহরিন দিশা।  নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার এলাকার সড়ক উন্নয়ন ও নালা নর্দমা পরিস্কারের বিভিন্ন বিষয় তাকেই তদারক করতে দেখা গেছে।  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশেও সরব উপস্থিতি তার।

এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত সৈয়দা কাশফিয়া নাহরিন দিশা বাংলানিউজকে বলেন,‘নির্বাচিত হওয়ার আগেও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের পাশে ছিলাম। এখনো আছি। পাঁচ বছর আমাকেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই বসে থাকলে তো আর হবে না। দায়িত্ব না নিলেও বিভিন্ন উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফেরদৌস বেগম মুন্নী।  তিনি দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজ করলেও ওয়ার্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।  বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও তেমন দেখা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে ফেরদৌস বেগম মুন্নীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।  আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব না নিলেও ওয়ার্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে নিজ খরচে জামালখান ওয়ার্ডের ডাস্টবিনগুলো সংস্কার করেছেন।  এছাড়া রমজানে ওয়ার্ডের দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এলাকার বিভিন্ন ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভা থেকে শুরু করে কাউন্সিলর পরিচয়ে সামাজিক কার্যক্রমেও তার সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

এ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে বলেন,‘কাজের জন্য দায়িত্ব লাগে না।  নির্বাচিত হওয়ার আগেও বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে আমি মানুষের পাশে ছিলাম।  নির্বাচিত হওয়ার পরেও আছি।  সামনেও থাকবো।  এসব কাজ একজন মানুষ হিসেবে করছি, কাউন্সিলর হিসেবে নয়।’

জামালখান ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী।  নির্বাচনের আগে এলাকার প্রতিটি সামাজিক কার্যক্রমে তাকে দেখা গেলেও এখন উপস্থিতি কম।  তবে ওয়ার্ডের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বছরের ১৮ মার্চ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।  ২৭ মার্চ পদত্যাগ করেন তৎকালীন মেয়র।  ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন।  ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। ফল ঘোষণার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম-ঠিকানাসহ ৩০ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

আইনে গেজেট প্রকাশের এক মাসের মধ্যে শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকায় ৬ মে শপথ নেন মেয়রসহ নির্বাচিত কাউন্সিলররা।  শপথ নিলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন আইন), ২০০৯-এর ৬ ধারা মোতাবেক করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম বৈঠকের পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারিত থাকায় নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের আরও ১৩দিন অপেক্ষা করতে হবে।

আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে আগামী ২৬ জুলাই।  এরপর নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।


শেয়ার করুন