এক সাথে থাকবেন শাকিব অপু

211618_197
চলচ্চিত্রের গল্পের মতোই পাল্টে গেল জীবনের চিত্রনাট্য। মাত্র এক দিন আগে টেলিভিশন লাইভে সন্তানকোলে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন, গতকাল বিকেলে শাকিব খানের মিলনাত্মক বার্তায় তা হয়ে গেল গল্পের সফল সমাপ্তির মতো। যাকে এক বাক্যে বলা যায়, অতএব ‘তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন’।
আগের দিন গণমাধ্যমে শাকিব-অপু পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা নাগাদ গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় দু’জনের সাক্ষাৱ হয়েছে। তারা একান্তে ১০ মিনিট কাটিয়েছেন। ওই সময় তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা জানা না গেলেও সম্পর্কের বরফ গলার শুরুটা ওখান থেকেই। কারণ এর পরপরই শাকিব খানের বন্ধু চলচ্চিত্র প্রযোজক ইকবাল হোসেন জয়ের কাছ থেকে জানা যায়, আগামী শুক্রবার দুপুরে শাকিব খান তার স্ত্রী অপু বিশ্বাস আর ছেলে আব্রাহাম খান জয়কে নিজের বাসায় নিয়ে যাবেন। বিষয়টি নিয়ে অপুর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম শাকিব ফিরবেই’। তিনি বললেন, ‘খেয়াল করে দেখুন, সোমবার কিন্তু শাকিবের মন্তব্যের পর আমার কাছ থেকে অনেকেই কিছু শুনতে চেয়েছিলেন। আমি শুধু বলেছি, শাকিব আজকে কী বলছে আমি সেটা নিয়ে কিছু বলব না। এক সপ্তাহ পর ও কী বলে আমি সেটাই দেখব। ব্যাপারটি নিয়ে আমি নিজেও খুব অস্বস্তিতে ছিলাম। শাকিব এটা সহ্য করতে পারবে না তা বেশ বুঝতে পেরেছি। তাই ও অনেক কিছুই বলেছে।’
এ দিকে বিষয়টি নিয়ে শাকিব বলেন, ‘সোমবার মেজাজ খুব খারাপ ছিল বলে অনেক কথাই হয়তো বলেছি। কিন্তু এখন উপলব্ধি করছি, যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, এটা আমার সংসার, আমার স্ত্রী, আমার সন্তান। আমাকে ওদের সাথেই থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, সোমবার হঠাৎ টিভিতে আব্রাহামকে তার মায়ের সাথে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। অপুর প্রতি অভিমান হয়। শাকিব খান আরো বলেন, ‘অপু আমার সন্তানের মা, আমরা একসাথে ছিলাম। ভালোই ছিলাম। তিন দিন আগেও তো একসাথে ঘোরাঘুরি করেছি। ভবিষ্যতেও আমি আমার সন্তানের মাকে নিয়ে ভালোভাবেই থাকব।’
সোমবার বিকেলে নিউজ টোয়েন্টিফোরের লাইভ অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাস ছেলে আব্রাহামকে নিয়ে হাজির হন। এই অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাস জানান, শাকিবকে বিয়ে করে তার নাম পাল্টে রাখেন অপু ইসলাম খান। ২০০৮ সালে ১৮ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। শাকিবের গুলশানের বাসায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়। দুই পরিবারের কাছের লোকজন এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। শাকিবের ভালো ও তার ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে এত দিন বিষয়টি গোপন রেখেছেন অপু। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার এক কিনিকে তাদের সন্তানের জন্ম হয়। শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের ছেলে আব্রাহাম খান জয়ের বয়স এখন ছয় মাস।
অপুর কাছে বুবলির প্রশ্ন : শাকিব-অপু ইস্যুতে বারবার উঠে এসেছে চিত্রনায়িকা বুবলির নাম। কিন্তু সোমবার তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চাননি। বারবারই বলেছেন তার কিছু বলার নেই। অবশেষে গতকাল সকালে তিনি মুখ খোলেন ফেসবুকে।
প্রায় সাত শ’ শব্দের এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বুবলি দায়িত্ব নিয়ে নিজের বিষয়ে অভিযোগ খণ্ডনের পাশাপাশি শাকিবের নানা বিষয় ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও করেছেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘ব্যাপারটি কি ইমোশন নাকি প্রফেশনাল? কোনটা? অপু কাঁদছেন, পুত্র অবাক চেয়ে… হুম, একটু ভেবে বললে ভালো (যদি সময় হয় কারণ সবাই এখন ব্যস্ত থাকেন)। জানি, আপনারা এখন অনেকেই অনেক কিছু ভাবছেন। আমাদের দেশে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু ইস্যু সবার সামনে এসে দাঁড়ায় যখন অধিকাংশ (সবাই না) মানুষ হুমড়ি খেয়ে একতরফা জাজমেন্ট করতে শুরু করে। আর এদের মধ্যে যারা একটু ভিন্নভাবে ভাবতে চায় তাদের যে কত কথা শুনতে হয়, তা না হয় নাই বললাম। একদম রিসেন্ট নিয়ে যদি কথা হয় তাহলে আমার মন্তব্য না করাটাই শ্রেয়। কারণ এটি সম্পূর্ণ যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আর আমি স্বভাবতই নিজের মতো থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু যখন সেখানে আমার কিছু ইস্যু মানুষ নিয়ে আসে তখন তো সেখানে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই জানতে চাইছে এবং অনেক ফোন কলস পাচ্ছি এসব নিয়ে যে আমি কিভাবে দেখছি এসব!
বাই দ্য ওয়ে, আমি প্রথমেই একটা জিনিস জানতে চাইÑ সোমবার কেন অপু বিশ্বাস এত দিনের আড়াল ভেঙে সরাসরি চ্যানেলে গিয়ে এসব কথা বললেন? কই এত দিন তো যাননি, কারো সামনে আসতে চাননি… কেন? কই সাংবাদিক ভাইরা তো এত চেষ্টা করেও সামনে আনতে পারলেন না, মুখ খোলাতে পারলেন না, বরং আপনারা যখন জিজ্ঞেস করেছেন তখন নানান কথা বলেছে। তার ভাষ্য মতে, ২০০৮ সাল থেকে সে বিবাহিত, তাহলে এত দিন কেন মর্যাদা চায়নি? শাকিব না হয় লুকিয়েছে, সে লুকায়নি? কেন? ক্যারিয়ারের জন্য? একজন ওয়াইফের কাছে ক্যারিয়ার এতই বড়? শাকিব ও বুবলি ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা ঠিক আছে বাট নিজের মর্যাদা আদায়ের আগে কি ক্যারিয়ার? অপু বিশ্বাস আরো বলেছেন, তার সাথে শাকিবের গত এক বছরের মতো কথা হয় না, এটা কি কোনো সম্পর্কের জন্য স্বাভাবিক? তখনো তো স্বীকৃতি চাইতে সবার সামনে এলো না। কেন? সে আরো বলল, তার ডেলিভারি হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বরে, তাহলে তখন এলো না স্বীকৃতির জন্য। কেন? শাকিব না হয় লুকিয়েছে, সে লুকায়নি? একজন মায়ের কাছে কি সন্তানের থেকে ক্যারিয়ার বড়?
কই গত পরশু দিন পর্যন্ত তো সে বাচ্চাটির স্বীকৃতি চাইল না! এবার আসি কেন এলেন সামনে… সোমবার যখন একটি পত্রিকায় নিউজ হলো ‘রংবাজ’ ছবি নিয়ে, তখন তার নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেল আমার নাম দেখে। সে চায় না শাকিব-বুবলি একসাথে কাজ করুক, সে শাকিবকে লোক মারফতে জানাল (যেহেতু সে-ই বলেছে শাকিব আর তার নাকি কথা হয় না এক বছরের মতো) তাকে নিয়ে একটি ছবির নিউজ করাতে না হয় আমাকে নিয়ে ছবির নিউজ অফ করাতে, না হলে এটার শেষ দেখে ছাড়বে সে। আজকে এখানে বুবলি না থেকে অন্য কেউ থাকতে পারত যার সাথে শাকিবের জুটি গড়ে উঠেছে; অপু বিশ্বাস যেটা আগের অনেক নায়িকার েেত্র করতে দেয়নি, যা শাকিব নিজেই বলেছে… কেন রাজ্জাক স্যার-শাবানা ম্যাডাম, রাজ্জাক স্যার-ববিতা ম্যাডাম, রাজ্জাক স্যার-কবরী ম্যাডাম জুটি ছিলেন না? রিয়াজ ভাই-শাবনুর আপু, রিয়াজ ভাই-পূর্ণিমা আপু জুটি ছিলেন না? এমন তো অনেক উদাহরণ আছে, কিন্তু অপু বিশ্বাস তার বাইরে কোনো জুটি স্ট্যাবলিশড হোক এমনটি চায়নি বলেই কি তার মর্যাদা এত দিন চাইল না আর সন্তানের স্বীকৃতি এত দিন চাইল না? তাহলে কী! সে এক্সারসাইজ করে নাকি ফিট হয়ে এসে আবার শাকিবের সাথে মুভি করত। তাহলে তার মর্যাদা আদায়ের কথা না হয় বাদ দিলাম, তার বাচ্চাটির স্বীকৃতি কোথায় যেত? এ রকম চাপাই থাকত! আজকে এই মুভি করা নিয়েই তো এত কিছু, তাকে নিয়ে মুভি ডিকারেশন আসলে কি সে বাচ্চার স্বীকৃতি চাইত? লুকিয়ে রাখত না? ধরলাম শাকিব না করেছে বলতে কিন্তু মা হয়ে সে কী করল? এখন মুভি নিয়ে প্রবলেম হলো বলে সবার সামনে এসে সব বলছে?
সে সব জায়গায় বেশ কিছু দিন ধরে বলে আসছে তার ছবি করেছি আমি। তাই আমি হতে পেরেছি। আরে বাবা, পৃথিবীর অনেক দেশেই তো অনেকের রিপ্লেসমেন্টে অনেকে মুভি করছে, বলিউড সুপারস্টার থেকে শুরু করে ঢালিউড পর্যন্ত, এমনকি অপু বিশ্বাস নিজেও অন্য অনেকের রিপ্লেসমেন্টে ছবি করেছে। তাহলে এখানে এসব অযৌক্তিক কথা বলার কী মানে? একজন মানুষকে তারকা বানায় তার দর্শকেরা, তার ভক্তরা। যার জন্য আমি আমার দর্শক এবং আমার ভক্তদের কাছে কৃতজ্ঞ এত অল্প সময়ে আমাকে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য। আর আজকে আমি বসগিরি দিয়ে এন্ট্রি না করলে প্রিয়া রে ছবি দিয়ে আসতাম, কারণ সব প্রস্তুতি সেভাবেই নেয়া হয়েছিল। যেটা ওই ছবির পরিচালক ও প্রযোজক থেকে শুরু করে অনেকেই জানেন। প্রিয়া রে তো অন্য কারো মুভি ছিল না, তখন সে কী বলত?
যা-ই হোক, যে-কেউ ভিউয়ার হিসেবে যেকোনো মন্তব্য করতে পারেন সহজে কিন্তু একমাত্র তারাই ভালো বলতে পারেন সব কিছু যখন যারা যেসব সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে যান। আর আমাকে নিয়ে কেউ যখন সারাণ কথা বলে তখন আই হ্যাভ রাইট টু কিয়ার সামথিং অ্যান্ড আই জাস্ট ট্রাইড টু ডু দ্যাট।
আর হ্যাঁ, সহশিল্পীদের সবার সাথে সবার ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে যেটা আমার সাথে শাকিবের আছে এবং থাকবে। তাকে অনেক শ্রদ্ধা করি যেটা এক দিনে তৈরি হয় না যে এক দিনে কমে যাবে। বিকজ, শাকিব খান ইজ আওয়ার প্রাইড অ্যান্ড অলওয়েজ উইল বি।
চাপা পড়েছিল গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ : সোমবার বিকেল পর্যন্ত মানুষের আলোচনায় ছিল তিস্তাচুক্তি না হওয়া এবং ভারতের সাথে সামরিক সহযোগিতা স্মারক। আরো অনেক বিষয় ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কিন্তু টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাসের বক্তব্য আসার পরমুহূর্তেই বদলে গেল দৃশ্যপট। গণমাধ্যমেও অন্য সব খবর চাপিয়ে এসে পড়ল অপু বিশ্বাস ও অভিনেতা শাকিব খানের ঝগড়ার খবর। এমনকি দেশের শীর্ষ কাগজগুলোর শীর্ষ খবর ছিল অপু ইস্যু।
এভাবে সব খবরকে কেন হটিয়ে দিতে পারল অপু-শাকিবের ঝগড়া? গণমাধ্যম বিশ্লেষক, মনোবিদ এবং সমাজতত্ত্ববিদেরা এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ড. নাসরীন ওয়াদুদ একটি অনলাইন পোর্টালকে এ প্রসঙ্গে বলেন : আমরা আসলে অস্থির জাতিতে পরিণত হয়েছি। সমাজে যা-ই ঘটুক আমরা সেগুলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। হয়তো বিষয়গুলো নিয়ে অবগত নই, তবুও নিজের মতামত ফেসবুকে দিই। তিনি বলেন : ‘ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিক্রি করা’ নিয়ে অনেক মাতামাতি হলো। এখন আবার দেখছি শাকিব খান ও অপুর কেলেঙ্কারি নিয়ে সবাই মেতে উঠেছে। এখন যেখানে তিস্তাচুক্তি ও ভারতের সাথে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কথা সেখানে সব ছুড়ে ফেলে শাকিব-অপু! ‘ফেসবুকে এ নিয়ে যা হচ্ছে সেটা এ রকম হওয়া উচিত ছিল না। এটা কোনোভাবেই কোনো জাতীয় ইস্যু না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বলেন : বরাবরই মানুষের শোবিজ অঙ্গন নিয়ে একটু আগ্রহ বেশি থাকে। সেখানে যদি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের মতো নামকরা সেলিব্রেটি হন তাহলে তো কথাই নেয়। ‘তবে তাদের দু’জনের আলোচনা নতুন মাত্রায় উঠেছে শুধু তাদের নাটকীয় জীবনের জন্য।’ মনোবিদ ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব সারা যাকের বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনপ্রিয় সেলিব্রেটির ব্যক্তিগত জীবন যখন প্রকাশ্যে চলে আসবে তখন আলোড়ন সৃষ্টি হবে এটি স্বাভাবিক।
‘কারণ মিডিয়া অঙ্গনের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি সাধারণ জনগণ এই প্রথম দেখল। তবে এই বিষয়টি নিয়ে যে সবাই মাতামাতি করবে সেটিও নয়। এগুলো যার যার রুচির ওপর নির্ভর করে।’


শেয়ার করুন