এক লৌকিক পারলৌকিক ধ্যানী

220937_11‘যদি আর বাঁশি না বাজে- আমি কবি বলে বলছি না, আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি। আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি- আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম- সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম। …যদি আপনাদের প্রেমের প্রবল টানে আমাকে একাকিত্বের পরম শূন্য থেকে অসময়েই নামতে হয়- তাহলে মনে করবেন না আমি সেই নজরুল। সেই নজরুল অনেক দিন আগে মৃত্যুর খিড়কিদুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে। সেদিন আমাকে কেবল মুসলমানের বলে দেখবেন না- আমি যদি আসি, হিন্দু-মুসলমানের সকল জাতির ঊর্ধ্বে যিনি একমেবাদ্বিতীয়ম তাঁরই দাস হয়ে। আপনাদের আনন্দের জুবিলি উৎসব আজ যে পরম বিরহীর ছায়াপাত বর্ষাসজল রাতের মতো অন্ধকার হয়ে এলো, আমার সেই বিরহ-সুন্দর প্রিয়তমাকে ক্ষমা করবেন, আমায় ক্ষমা করবেন- মনে করবেন- পূর্ণত্বের তৃষ্ণা নিয়ে যে একটি অশান্ত তরুণ এই ধরায় এসেছিল অপূর্ণতার বেদনায় তারই বিগত আত্মা যেন স্বপ্নে আপনাদের মাঝে কেঁদে গেল।’ ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ও ৬ এপ্রিল কলকাতার মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রজত জুবিলি উৎসব অনুষ্ঠানে কবিকে সভাপতি রূপে আহ্বান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে কবি তার এই শেষ ভাষণটি প্রদান করেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির জাতীয় কবি। এটুকু পরিচয় কিংবা বিদ্রোহী কিংবা প্রেমের কবি বলেই প্রাধান্য সর্বত্র। কিন্তু গভীরতা অর্থাৎ জীবনবোধের মধ্যে নানান বোধ এভাবে মিশে গিয়েছিল তাঁর অন্তর্লোকে। যা ইহলোক বা পরলোকের মধ্যেও যেন সুন্দর স্বাভাবিক একটা জীবন-গ্রাহ্যতা সৃষ্টি করে দেখায়। মানুষের মনের ভেতরে যেন এই দুই জগতের ব্যবধানবোধ ঘুচিয়ে দেয়। তিনি কি এমন সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন যখন তাঁর সমস্ত সৃষ্টিশীলতা, পাগলামি, অশান্ত যৌবন তাঁকে নতজানু করিয়েছিল কোনো অবশ্যম্ভাবী পারলৌকিক ধ্যানের কাছে, যা তাকে পেয়ে বসেছিল। বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটে, গানে, ঘটনায় এসব প্রমাণিত হয়ে আছে। অনেক গানেও তাঁর এই আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও পারলৌকিক বোধের প্রমাণ আছে।
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিয়ো ভাই।
যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
তাঁর বিভিন্ন ধরনের গানের মধ্যে এই পারলৌকিক ভাবনার ছায়া স্পষ্টভাবে রয়ে গেছে। তিনি এইসব কথা তার গানে, কবিতায়, ভাষণে বার বার করেই ভাবিয়েছেন :
আমার যাবার সময় হলো / দাও বিদায়। /
মোছো আঁখি দুয়ার খোলো / দাও বিদায়।
এ গানটিকে বিরহের গান নাকি শুধু গজল গান কোনটা বলা হবে। যেটাই বলা হোক, সেখানেও কিন্তু একটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার আছে। একটি গানের কথা বলছি,
গানগুলি মোর আহত পাখির সম
লুটাইয়া পড়ে তব পায়ে প্রিয়তম।
…মৃত্যু আহত কণ্ঠে তাহার
একি এ গানের জাগিল জোয়ার
মরণ-বিষাদে অমৃতেরই স্বাদ
আনিলে নিষাদ মম।।
এ গানগুলোতে আরো গভীর রহস্যজ্ঞান লুকিয়ে আছে তাঁর। কিছু গানে ভরে আছে ভক্তিভাবরসের সাথে সুংঃরপ বা আধ্যাত্মিক ভাবনা।
তুমি লহো প্রভু আমার সংসারেরই ভার
লহো সংসারেরই ভার
আজকে অতি ক্লান্ত আমি বইতে নারি আর
এ ভার বইতে নারি আর।
সেদিন রোজ হাশরে আল্লাহ আমার
কোরো না বিচার
এমনকি বিখ্যাত গজল গান বলে জানি আমরা যেটিকে :
যেদিন লব বিদায় ধরা ছাড়ি প্রিয়ে
ধুয়ো লাশ আমার লাল পানি দিয়ে।
শুধুই কি গজল। সেখানেও একই ধরনের রহস্যভরা আধ্যাত্মিকতার বিভিন্ন ধরন খুঁজে পাওয়া যায় :
পেয়ে কেন নাহি পাই হৃদয়ে সম
হে সুদূর প্রিয়তম।
আরো একটি গান :
খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু
আনমনে খেলিছ।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
নিরজনে প্রভু নিরজনে খেলিছ।
এই গানে খুবই স্পষ্টভাবে সেই মহান ও এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিশীলতা যেন কোনো শিশুর খেলা বলে কী অসাধারণ উপমার বিশেষত্ব দান করেছেন। সবারই সে রকম একটা ভাবনার জানালা খুলে যাবে। মনে হবে সত্যিই তো তিনি তো সৃষ্টির খেলায় নিয়ত মেতেই আছেন। ভাঙা-গড়া, জন্ম-মৃত্যু, রূপ-অরূপ সবই তাঁর হাতে। এই চিরন্তন বিশ্বাসে আমরা সবাই বিশ্বাসী। ধ্যানের জগতে অনেকে হয়ত সেই বিরাট শিশুর খেলনা হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন। এই জায়গাটিতেই কাজী নজরুল ইসলামের Mystic চরিত্রের প্রকাশ। যেমন- ১৯৪১ সালের ১৬ মার্চ বনগাঁ সাহিত্য সভার চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম সভাপতি ছিলেন। সভাপতির ভাষণে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা উল্লেখ্য :
‘আমায় সাহিত্য সম্মেলনে ডেকেছেন সাহিত্য সম্বন্ধে আমার বক্তব্য শোনার জন্য-Mystic তত্ত্ব শোনার জন্য নয় কিন্তু আপনাদের দেরি হয়ে গেছে- দু-দিন আগে যেমন করে যে ভাষায় বলতে পারতাম সে ভাষা আজ আমি ভুলে গেছি। এই মিস্টিসিজম বা মিস্ট্রির মাঝে যে মিষ্টি, যে মধু পেয়েছি, তাতে আজ আমার বাণী কেবল মধুরম, মধুরম, মধুরম। … আজ আমার সকল সাধনা, তপস্যা, কামনা, চাওয়া, পাওয়া, জীবন, মরণ তাঁর পায়ে অঞ্জলি দিয়ে আমি আমিত্বের বোঝা বওয়ার দুঃখ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আজ দেখি অনন্ত আকাশ বেয়ে যেন আমার সেই পরম সুন্দরের পরমাশ্রু ঝরে পড়ছে- অনন্ত ভুবন ধরতে পারছে না সে পরমা শ্রীকে- অনন্ত নীহারিকা লোক থেকে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড ছুটে আসছে উন্মাদ বেগে সেই পরমা শ্রীর প্রসাদ লোভে।
আজ আমার মনে হয়, এই নিত্য পরমানন্দময়ী, প্রেমময়ী পরমা শ্রীই আমার অস্তিত্ব- আমার শক্তি। … এই প্রেমই যেন আমার অস্তিত্ব। এই অস্তিত্ব, এই প্রেমকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলেই যেন আমি অভিমানে সংহারের পথে চলেছিলাম।’
আমরা যারা কাজী নজরুল ইসলামকে কমবেশি চর্চা করি। গান, সাহিত্য বা তাঁর জীবনী জেনে পড়ে জানতে চাই, বুঝতে চাই তাঁরা বুঝতে পারি যে তিনি শব্দ নিয়ে যেমন খেলেছেন, মেতেছেন বিভিন্নভাবে স্যাটায়ারের মধ্য দিয়েও আসল বিষয়ে কটাক্ষ করতে তেমনি একইভাবে সবকিছুর মধ্যে তাঁর এই Mystic আকর্ষণটিও তাঁকে বিরাট একটা রহস্যময়তায় ফুটিয়ে রাখে। এগুলোই তাঁর সামগ্রিক চরিত্রসমষ্টি বলা যায়। আর সেই বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে গানে, সাহিত্যে। হয়ত ংঢ়রৎরঃ spirituality এবং Mystic গুণাবলির সমন্বয়ে তাঁকে সেই ধ্যানী বা সাধকের আসনে অধিষ্ঠিত থাকতে দেখা যায়, তাহলে তা অস্বীকার কিংবা দ্বিমত বা বিতর্কের কোনো অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।
যে কবি ফি জনমে একমেবাদ্বিতীয়মের দাস হয়ে ফিরতে চান তাঁর একটি কবিতার উল্লেখ করছি :
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে বাঁচাও, প্রভু, উদার! / হে প্রভু! শেখাও নীচতার চেয়ে নীচ পাপ নাহি আর।।
ক্ষুদ্র কোরো না হে প্রভু, আমার হৃদয় পরিসর, / যেন- হৃদয়ে আমার সম ঠাঁই পায় শত্রু-মিত্র-পর। / নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো / অন্যের সুখে সুখ পাই আরো / কাঁদি তারি তরে অশেষ দুখী / ক্ষুদ্র আত্মা যার!!
কাজী নজরুল ইসলাম শুধু সাধারণ তাড়না সংবলিত একজন মানুষ ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাধারণের বৃত্তের বাইরে অথবা একজন অসাধারণ বোধের মানুষ। মানবজীবন দর্শন ছিল তাঁর চেতনা এমনকি অবচেতনার সঙ্গে, আজন্ম- এক অনন্য খেলা। তিনি যেন দেখতে পেতেন অনেক দূর, খেলতে খেলতে, হাসতে হাসতে- পাগলামি করতে করতে। এই পরিক্রমার মধ্যেই তিনি মনের কথার স্বতঃস্ফূর্ত স্ফুরণ ঘটাতেন, যা কখনো কখনো অন্যের কাছে বোধগম্য হতো না কিংবা দির্বোধ্যই থেকে গেছে। না হলে তিনি কথায় কথাই তো বলেছেন, ‘যদি বাঁশি আর না বাজে…’
উপস্থিত সকলেই মনে করেছিলো, সেটা ছিল কবির অভিমানের কথা- আসল কথা নয়। তাই তো উপস্থিতদের মধ্যে ড. কালিদাস নাগ দাঁড়িয়ে বললেন, ‘না, না, এ হতে পারে না- কবির এই বাঁশিকে বাজাতেই হবে।’
সেই বাঁশি তো আর বাজেনি। আর আগেই স্তব্ধ মৌন হয়েছিলেন তিনি।
কাজী নজরুল ইসলামের ভেতরে ইহলোক- পরলোক ভাবনা যে কতখানি প্রভাব বিস্তার করে রাখতÑ তা তাঁর কথা বলার কায়দা বা সার্বক্ষণিক আচরণ, সবার কাছেই মজাদার রূপ পেত। ভঁহ- জর্দা পান এসব নিয়েই তো তাঁর সময় কাটত। কিন্তু ভঁহ-এর আরেক পিঠ ছিল জীবনের অন্তর্গত একান্ত জীবনদর্শন। অসীমতাকে সীমার মধ্যে খুঁজে ফেরা। অথবা সীমার মধ্যে অসীমতাকে অনুভব করা। কথার পেছনে কথা জুড়ে দিয়ে অন্য ধরনের শব্দ-যোজনা তৈরি করতে তো তাঁর জুড়ি ছিল না। অথচ সে-সবের মাঝেও তিনি বুভুক্ষুর মতো অণ্বেষণ করেছেন সেই অসীমকে। যাঁর প্রতি তাঁর অভিযোগ এবং বিশ্বাস, দাবি এবং সমর্পণ। সেখানেও দর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। আধ্যাত্মবাদ উল্লেখযোগ্যভাবে চোখে পড়ে।
কাজী নজরুল ইসলাম সম্বন্ধে নেতাজি বলেছিলেন, ‘নজরুল একটা জীবন্ত মানুষ।’ যেমন অনেকেই তাঁর কাছে এসে নালিশ করেছে, ‘অমুক আপনার গানের লাইন চুরি করেছে’ শুনে তিনি হেসে বলেছেন, ‘ভালোই তো- উনি একটা ভালো বিদ্যা অর্জন করেছেন- জানো না? চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা’- সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রাণখোলা হাসিতে ঘর ভরে যেত।
এই লৌকিক কবির ভেতরে আরেক জগৎ অর্থাৎ সেই অতিজাগতিক কিংবা সেখানে উদারতা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের বাস হয়েছিল তা অস্বীকার করা কি যায়? ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’তেও এই ধরনের কথা বারবার বলেছেন, ‘আমি তাঁর হাতের বাঁশি। সে যেমন সুরে বাজায় তখন সেই সুরে বাজি। আমার এতে নিজের গৌরব করবার কিছু নেই। আমার রচিত সাহিত্য কতখানি মূল্য পাবে তা আমি জানি না, তবে বাংলার সঙ্গীত ক্ষেত্রে আমি কিছু দান করেছি।’
‘মুসলমানরা যে একদিন দুনিয়াজোড়া বাদশাহি করতে সমর্থ হয়েছিল-সে তাদের ইমানের বলে। আজ আমরা ইমান হারিয়ে ফেলেছি। ইমানের প্রকৃত অর্থ পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ।’
…‘তোমার আমার কি শক্তি আছে? যারা ঘুমালে আর জাগবার মতো শক্তি রাখে না তাদের গর্ব করা বাতুলতা মাত্র। এই যে আমাদের জীবন এ তো জীবনমৃত্যুর খেলা। নিশ্বাসে আমাদের জীবন, প্রশ্বাসে মৃত্যু। মানুষ আমরা তাঁর হাতের যন্ত্রপুত্তলিকা মাত্র। চাওয়ার মতো চাইলেই যা চাও তা-ই পাবে। খোদা হচ্ছেন বাঞ্ছাতরুকল্প। তিনি আগুনের মতো- তাঁকে দিয়ে যা করতে চাও তাই করতে পারবে। আগুন দিয়ে ইচ্ছা হয় তাঁকে পাক করে খাও। ইচ্ছা হয় ঘর পোড়াও- অবশ্য ঘর পোড়ালে তার মজা তুমিই পাবে।’
…আমি পথে পথে ঘুরেছি- গান গেয়েছি কবিতা লিখেছি- যেখানে তারা বুঝেছে সেখানে তারা কেঁদেছে। যেখানে বুঝতে পারেনি- সেখানে মুখ ফিরিয়েছে। আমার কওম যেখানে যে অবস্থায় আছে- তাকে সেভাবে সেই অবস্থায় ভালোবাসতে হবে, তার সঙ্গে মিশতে হবে- তার দুঃখে কাঁদতে হবে।
মানুষ সৃষ্টি হবেই- আমি বরাবর বলেছি- আসছে সেই অনাগত বিরাট পুরুষ- যাঁর আগমনি ফুটছে আমার কণ্ঠে- তাঁর মুখ দেখলেই আমি চিনতে পারব।
..‘আমি আমার নিজকে খুঁজছি। তার সন্ধান না পেলে কোনো কিছুই হবে না। তার হুকুম ছাড়া কারো কথা কেউ শুনবে না।’
তাঁর সেই শক্তিশালী বর্ণিল সঙ্গীত ভাণ্ডারের মধ্যে প্রবেশ করতে গেলে এই বিষয়গুলো আরো তাক লাগিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে একটি গনের কথা এ রকম :
অন্তরে তুমি আছো চিরদিন ওগো অন্তর্যামী
বাহিরে বৃথাই যতো খুঁজি তাই
পাইনে তোমারে আমি
কাজী নজরুল ইসলাম মৃত্যুকেও পরম শান্তিময় জগৎ বলে ভাবতেন। তিনি বলতেন ‘সুন্দর মৃত্যু’, তিনি নিজে মৃত্যুঞ্জয়ী কবি। এক নীলকণ্ঠ-কবি। তাই এত লৌকিক নির্মোহ মনে তিনি বলতে পারেন মৃত্যুর উৎসবকে :
কে গো আমার সাঁঝ-গগনে গোধূলির রং ছড়ালে
মিলনের বাজে বাঁশি আজি বিদায় লগনে
…ডেকেছি মিঠুর মরণে এতদিন কেঁদে কেঁদে কেঁদে
আজি যে কাঁদি বঁধু বাঁচিতে হায় তোমার সনে।।
হুগলি জেলে কারাবাসের সময় একটা বুলবুলি পাখি তাঁর সঙ্গী ছিল। পরবর্তীকালে করুণ একটা সমাপ্তি ঘটেছিল সেই বুলবুলি পাখির সাথে। তার স্মৃতি প্রবাহিত হচ্ছিল পুত্র বুলবুল-এ। কিন্তু এই বুলবুলিই তাঁকে একদিন মর্মান্তিক কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে গেল। যাহোক, ধ্যান-স্তিমিত হওয়ার কথা তিনি আগে থাকতেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কি? যদি তা না-ই হতো তবে এই ধরনের আর্তি তাঁর লেখায় ফুটে উঠত না।
ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে / আমার গানের বুলবুলি
কিংবা :
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না
কোলাহল করি সারাদিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না
নিশ্চল নিশ্চুপ / আপনার মনে পুড়িব একাকী / গন্ধ-বিধূর ধূপ।।
তাঁর কবিতা, গান, গল্প এবং অন্যান্য লেখায় শুধু এই ধরনের ভাব কি অসাধারণ অভিমান অথবা বিদ্রোহী, কিংবা প্রেম-বিরহের কথা বলে মনে হয়? না তিনি হয়ত পারলৌকিক জীবনকেও জীবনের কাছে দেখতে পেতেন। যা ছিল শুধু অনুভব করার, হয়ত লেখারও না। কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত সেই গান ধ্বনিত হচ্ছে-
সুন্দর মৃত্যু এলে বরের বেশে শেষ জীবনে/
কে গো আমার সাঁঝ-গগনে গোধূলির রং ছড়ালে।
মিলনেরই বাজে বাঁশি/
আজি বিদায় লগনে।


শেয়ার করুন