নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকায় জনসভা করার ঘোষণা দেওয়ার পর গুলশানে নিজের কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সময় কাটছে।
গোলাপী রঙের যে শিফন শাড়িটি পরে খালেদা শনিবার রাতে কার্যালয়ে এসেছিলেন, ২৪ ঘণ্টা পরও সেটি বদলানোর সুযোগ হয়নি বলে তার ব্যক্তিগত কর্মীরা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী রাতে ঘুমিয়েছেন ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার নিজের কক্ষে চেয়ারে হেলান দিয়ে। রোববার সকালে তার নাস্তায় ছিল কলা, পাউরুটি।
দুপুরে অভুক্ত থেকে সারা দিন টেলিফোনে দলের নেতাদের সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন খালেদা। এর মধ্যেও তিনি বিএনপিপন্থি এক সাংবাদিক নেতার মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছেন- সোমবার নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন তিনি রাস্তায় নামবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে এরশাদের রোষানলে পড়ে তিন দিন ম্যাডামকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। বর্তমান সরকারের আমলেও তাকে নিজের বাসায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তবে দলীয় কার্যালয়ে এভাবে তার রাত্রীযাপন এটাই প্রথম।”
বিএনপি নেতাদের মধ্যে কেবল যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকেই গত দুদিন দলীয় অবস্থান জানাতে গণমাধ্যমের সামনে আসতে দেখা যাচ্ছিল। সেই রিজভীও শনিবার রাতে হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন এবং পুলিশ তাকে নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রাতেই বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয় থেকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তার পথ আটকায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে খালেদা বাসায় যাওয়ার জন্য পুলিশকে ব্যারিকেড সরাতে বলেন। কিন্তু তা না সরানোয় কিছুক্ষণ গাড়িতে অপেক্ষা করে ফের কার্যালয়ে যান তিনি। এরপর সেখানেই তার রাত কাটে।
গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি নেত্রীর কার্যালয় ঘিরে রোববার সকালে পুলিশি নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়। সড়কের দুই মাথায় বসানো হয় দুটি তল্লাশি চৌকি।
সকালে ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছে। পাশাপাশি কার্যালয় থেকে ১০ গজ দূরে বড় আকারের দুটো গাড়ি আড়াআড়ি রেখে আটকে দেওয়া হয়েছে বের হওয়ার পথ। কাছেই রয়েছে র্যা ব; পুলিশের সাঁজোয়া যানও প্রস্তুত।
বিএনপি অফিসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই কার্যালয়ে ঘুমানোর কোনো বন্দোবস্ত না থাকায় রাতেই লেপ, কম্বল, তোষক ও খাবারসহ বিভিন্ন সামগ্রী আনানো হয়।
তবে মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই রাত পার করে দেন খালেদা জিয়া। টেলিফোনে কয়েক দফা কথাও বলেন। শেষে ফজরের নামাজ পড়ে দোতলায় নিজের চেম্বারে চেয়ারে হেলাল দিয়ে কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নেন।
তার ব্যক্তিগত কর্মীদের একজন জানান, ‘ম্যাডামের’ জন্য রাতে পিকআপের করে একটি খাটও আনা হয়েছিল। কিন্তু আকারে বড় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেটি আর পাতা যায়নি। তবে রোববার দিনে স্থায়ী কমিটির সভাকক্ষে সেটি পাতা হয়।
গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকায় খালেদার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা সকালে ঘুম থেকে ওঠেন বেশ বেলা করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদার বাসা থেকে সকালের নাস্তার জন্য কার্যালয়ে পাঠানো হয় কলা, পাউরুটি, ডিম ও ফলের রস।
ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে খালেদা জিয়া প্রায় সারাদিনই টেলিফোনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। দুপুরে তিনি খাননি বলেও একজন ব্যক্তিগত কর্মী জানান।
বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বেলা ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তিও হয়।
দুপুরের পর থেকে মহিলা দলের নেত্রী রাজিয়া আলীম, আরিফা জেসমিন, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, লাইলী বেগম, এলিজা খাতুন ও নাসরিন আখতারসহ অন্তত ১৯জনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সকাল থেকে সাংবাদিকদের ওই কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলেও বিকালে খাবারের জন্য তারা ভেতরে ঢোকার সুযোগ পান।
এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী ও সাংবাদিক ইউনিয়নের বিএনপিপন্থি নেতারা খালেদার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান।
বিকালে ওই কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (খালেদা) বলেছেন, ‘আমি এই অবৈধ সরকারের কোনো আদেশ মানি না। আমি কাল বেরুব, আমি রাস্তায় নামব।”