একুশ তারুণ্যের প্রেরণা

12746365_825111257599513_1500706118_nমা আরা ক’টা দিন,
ওরা না আমার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়,
আমি ফিরব মা ,আর কটা দিন
কথার ঝুড়ি নিয়ে।
একুশে ফেব্রুয়ারির রফিক, শফিক, সালাম ও নাম না জানা অনেকের তেজদীপ্ত রক্তের শ্রোত বাঙাালি জাতিকে গড়িয়ে গড়িয়ে পৌছেঁ দিয়েছিল একাত্তরে। একুশ আমাদের প্রেরণা দিয়েছে। আমদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। একুশে বৃক্ষের সূচনা হয়েছে। ফল পেয়েছি আমরা একাত্তরে। ঘটনার শুরু ১৯৪৯ সালের ২১এ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক সমাবেশে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা দেন” “উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা”। এর পর থেকে হাটিঁ হাটিঁ পা পা করে আন্দোলন চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেঁ। রাঙ্গালীর অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার জন্য, তৎকালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারি ছাত্রজনতার সাহসী ভূমিকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে পূর্বে বাংলা আইন পরিষদের দিকে রওয়ানা হওয়া মাত্রই পুলিশ সহ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। ঘটনাস্তলেই শাহাদাৎ বরণ করেন আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন ও আবদুল জাব্বার। অহি উল্লাহ নামক ৯ বছরের এক শিশুও সেদিন পুলিশের গুলিতে মারা যায়। পরের দিন ২২শে ফেব্র“য়ারি শহীদদের জানাযার পর শান্তি পূর্ণ শোক মিছিলে আবারো গুলি করে শফিউর রহমান সহ ৪জনকে শহীদ করা হয়। এভাবে অনেক তাজা প্রানের বিনিময়ে শেষপর্যন্ত আমরা আমাদের মায়ের ভাষাকে রক্ষা করি। শুধুমাত্র ভাষার জন্যই আন্দোলন করতে হয়েছে বাঙ্গালীদের? না! গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অধিকার, কি নেই বাঙ্গালীদের ইতিহাসে। মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি এই তিনের বেলায় ভালবাসার কোন পরিমান হয়না। মাকে ভালো না বেসে কোন মানুষ যেভাবে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারে না। ঠিক তেমনি কোন মানুষ যদি মাতৃভাষাকে ভালো না বাসে, তাহলে তাকে ও মানুষ বলতে ক্ষুদ্রতম বিবেক সমর্থন করে না। ভাষা আন্দোলন আমাদের সাহিত্য- সংস্কৃতির আন্দোলন। অথাৎ আজ আমরা বিদেশীদের নকল করতে করতে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছিয়েছি যে, অনেকেই বিদেশী পণ্য বা কালচারকে আধুনিকতা মনে করে। ১৯৫২ সালের তরুন সমাজ, ১৯৭১ সালের তরুন সমাজ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল আন্দোলন সংগ্রামে। তারুণ্যের তেজদীপ্ততা একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্রের পরিবর্তনের মূলভিত্তি। তাই স্বাধীনতার এত বসন্ত পর আবার সময় এসেছে, বাঙ্গালীর ইতিহাস ঐতিহ্য ও চেতনার অংশ একুশকে জাগ্রত করা। ২১ শুধু বাঙ্গালী নয়, ২১ এখন সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য ন্যয় সঙ্গত অধিকার আদায়ের অনন্ত প্রেরনার উৎস। যে মুর্হুতে বাঙ্গালী জাতির গৌরবের ইতিহাস পৃথিবীর কোনায় কোনায় বর্ণনা করা হবে, সেই মুহুর্তে আমরা কি? আমাদের কথাগুলো কি আমরা স্বাধীনভাবে ব্যক্ত করতে পারি। যেখানে বিশ্বের প্রান্তরে প্রান্তরে নতুন স্বপ্ন বুনছে সেই মুহুর্তে আমাদের মাঝে বৈষম্যের, প্রতিহিংসার দাবানল দাউদাউ করে ঝলছে। একুশের চেতনায়, ১৯৫২ সালের মত দেশের জন্য আমরা কি এক হতে পারিনা রফিক, শফিক, সালামদের ————–কাতারে ???

মিনার হাসান
সাধারণ সম্পাদক
নদী পরিব্রাজক দল, কক্সবাজার জেলা।


শেয়ার করুন