একদিনেই জেলমুক্ত ডন কালা জমির, এলাকায় আতঙ্ক

kala jamirচীফ রিপোর্টার, সিটিএন:
সমুদ্র পথে মানবপাচারের দ্বার উন্মোচনকারী, হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ, জলদস্যুতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামী অপরাধ জগতের ডন খ্যাত কালা জমির গ্রেফতারের একদিনের মধ্যেই জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশকে মোটা টাকা দিয়ে সব মামলায় মিথ্যা জামিননামা দেখিয়ে ৫৪ ধারায় চালান হয়ে সহসাই জেল থেকে মুক্ত হয়েছে জমির। উখিয়া উপকূলের সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কালা জমির একদিনের মাথায় জেল থেকে বেরিয়ে আসায় ভুক্তভোগীদের মাঝে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ভয়ে এলাকায় ছেড়ে গেছে। অন্যান্যরা রয়েছে মুখ বুঝে।
জানা যায়, উখিয়া উপজেলার অপরাধ জগতের ডন জমির আহম্মদ প্রকাশ কালা জমিরকে ১৪ ফেব্রুয়ারী উখিয়া থানা কম্পাউন্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। লোক মুখে শোনা গেছে, গ্রেফতারের পর উখিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে সব মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা গোপন করে কালা জমিরকে ৫৪ ধারায় জেলহাজতে প্রেরণ করেন। কিন্তু একদিন পরই আদালত থেকে জামিন পান জমির। জামিন চাইতে তার লোকজন প্রকাশ্যে পুলিশকে টাকা দেয়ার কথা অকপটে বলে বেড়ায়। সূত্র মতে,
অন্যদিকে কালা জমির জামিন নিয়ে এলাকায় নানা ধরণের হাঁকাবকা করছে। সে প্রকাশ্যে বলছে ‘ওসি-টুসি এগুলো আমার জন্য কিছুই না। টাকা মারলে সব কিছু পানি হয়ে যায়। টাকা দিলে পুলিশও উল্টো সালাম করে। কালা জমিরের এসব হুমকিতে তার হাতে নিগৃহিত এলাকায় অসহায় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তারা ফের অত্যাচারিত হওয়ার আশঙ্কা করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্ট পাইনি। তাই ৫৪ ধারা দেখিয়ে চালান দিয়েছি।
সূত্র মতে, সীমান্ত দিয়ে মালয়েশিয়া মানবপাচারের দ্বার উন্মোচনকারীদের মধ্যে কালা জমির অন্যতম। তার বিরুদ্ধে উখিয়া-টেকনাফ থানায় প্রায় ডজন খানিক মানবপাচার, হত্যা, ধর্ষণ ও ডাকাতির মামলা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন মানবপাচার ও সোনার পাড়ার পড়ঁশি বাড়িতে অনাথ শিশু মহিলার ধর্ষণ মামলায় আত্মগোপনে থাকার পর রেজুখালের পাশে চলমান বিবিসি নাটকের অন্তরালে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যায়। গত বছর মিয়ানমার ফেরত ১৩৬ জনের স্বীকারোক্তিমতে ৩৪ জন দালালের যে মামলা হয়, সেখানে কালা জমির ৭ নাম্বার আসামী।
অভিযোগ মতে, উখিয়া-টেকনাফের উপকূলীয় এলাকার মাদক ও মানবপাচারের ডন খ্যাত কালা জমির দীর্ঘ দিন প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছিল। পুলিশ প্রশাসনের কিছু অসাধু লোকের সাথে তার গভীর সখ্যতা ছিল। টাকায় প্রশাসন ম্যানেজ করেই চলতো কালা জমির। এ কারণে সে এতো দিন অধরা ছিল। এবার গ্রেফতার হয়েও টাকার বিনিময়ে একদিনেই জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
সূত্র জানায়, সোনার পাড়া এলাকার কাদির হোসনের পুত্র জমির আহম্মদ প্রকাশ কালা জমির ৫ বছর আগে সমুদ্র পথে জলদস্যু চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে কাজ করতেন। সে সাগর থেকে ডাকাতি করে অনেক বড় বড় ফিশিং বোট নিয়ে আসতো। এসব ফিশিং বোটে বেশির ভাগ দেখা যেত- পিঁয়াজ, সিগারেট, চাউল তৈল জাতীয় ইত্যাদি। পাশাপাশি মানবপাচার শুরু হলে ২০১৩ ও ১৪, ১৫ সালে সমুদ্র পথে মালেয়শিয়াতে সহস্রাধিক লোক রেজু খালের মোহনা ও পড়ঁশি বাড়ির পথ দিয়ে পাচার করে তিনি রাতারাতি বিত্তবান হয়ে উঠেন। এরপর আইনশৃঙখলা বাহিনীর তালিকায় অপরাধ জগতের ডন বলে পরিচিতি লাভ করে। এমনকি তার বিরুদ্ধে উখিয়ার চাকবৈটা এলাকার একজন হাফেজ কে অপহরণ করে নিয়ে এসে রাতের বেলায় মালয়েশিয়ার নৌকায় তুলে দেওয়ার সময় ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে এক পর্যায়ে নৌকায় আঘাত পেয়ে ওই হাফেজ পানিতে ডুবে মারা যায়। পরে কালা জমিরসহ অনেক দালালদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
সূত্র আরো জানায়, ইতোপূর্বেও ২০০৮/০৯ এবং ২০১৪ সালে তিনি ডাকাতি ও চাঁদাবাজি এবং মানবপাচার মামলায় তিনবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। দীর্ঘদিন জেলেখেটে সময়িক মুক্তি পেয়ে পূরানো পেশা শুরু করে দিনদিন বেপেরোয়া হয়ে এলাকার শতাধিক লোককে ইয়াবা ও মাদকাসক্তে পরিণত করেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে এলাকার লোকজন বয়কট শুরু করেন বলে জানায় আব্দুল আলিম নামের এক জেলে।
২০১৪ সালে সোনারপাড়া এলাকার মানবপাচার কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে জাফর মাঝি নিহত হওয়ার পর জমির পাঁচ মাস এলাকার বাইরে থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে জমিরকে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করতে দেখে এলাকার ছাত্র-যুব সমাজের নিকট অতঙ্ক তৈরি হয়।
এলাকায় প্রচার আছে, কালা জমির এক পাগলকে দাড়ি গোঁফ মুন্ডিয়ে সাগরে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।


শেয়ার করুন