একটি মহৎ ভালোবাসার গল্প

HUMINITY-pic04-BMবাংলামেইল:

‘মানুষ মানুষের জন্য’ চিরসত্য এ কথাটার রঙ যেমন পাল্টিয়েছে তেমন পাল্টিয়েছে এর ধরনও। তবু মানুষ মানুষই। তাকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হয়। আর এজন্য মানবিকগুণ সম্পন্ন কিছু মানুষ ফিনিকসের মতো সমাজের রূঢ়তায়ও নিজের পরিচয় জানিয়ে যায়। নিরবে নিভৃতে কাজ করে যায় মানুষের জন্য।

তেমনি এক মানুষের মহৎ ভালোবাসার গল্প এটি। শামীম আহমদ, কাজ করেন যমুনা ব্যাংকে। গত নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে বান্দরবান জেলার থানচিতে কয়েকজন অফিস সহকর্মীদের সঙ্গে বেড়াতে যান। সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়েকে দেখতে পান। সবার মনে যে অনুভূতি তার মনে সেরকমই হয়েছিল। ঢাকায় আসার সময়ও সেই গাছের নিচে আবার চোখ আটকে যায় শামীম সাহেবের। মনের মানবিক ভূমিতে কিছু একটা তোলপাড় অনুভব করেন। ঢাকায় ফিরে আসেন কিন্তু ভুলতে পারেননা সেই মুখ।

তারপর ঢাকায় এসে সহকর্মী আলী সাব্বিরের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ ও ওই মেয়েটির জন্য কিছু করার তাগিদ। তারপর আরও এক মহৎ মানুষ যোগ দেন তাদের দলে হাসান ফরহাদ আজাদ। সিদ্ধান্ত হয় ওই মেয়েটিকে ঢাকায় এসে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দেয়া। তাই মার্চের পাঁচ তারিখে ফের থানচির উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা আনা হয়। শেরে বাংলা নগর এ অবস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়।

নামহীন ভাষাহীন মেয়েটির নাম রাখা হয় ‘অন্তর’। একজন আয়া রেখে তার চিকিৎসা চলে। তারপর আদাবরে এক বাসায় নিয়ে ভালো পরিবেশে রেখে থেরাপিও চিকিৎসা চালানো হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। অন্তরের মুখে কথা ফুটতে থাকে। প্রথম কথা বলে ‘চান্দুরা’ও ‘ডাকবাংলো’। সে অনুযায়ী খোঁজ নেয় হয়। পোস্টারিং করানো হয়।

সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকাল অফিসের কিছু স্থানীয় ব্যক্তির সাহায্যে বেশকিছু সহযোগিতামূলক তথ্য পাওয়া যায়। ওই এলাকায় পোস্টারিংয়ের পরে তাৎক্ষণিক কোনো পরিবারের খোঁজ না পেলেও কিছুদিন পর জানায় তার গ্রামের নাম “দায়োইরা”। জানায় সেখানেই তার বাড়ি।

শেষে ফেসবুকে, পোস্টারিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুরা ইউপি চেয়ারম্যান শামীমুল হক চৌধুরী ও শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকনের মাধ্যমে এক পর্যায়ে মেয়েটির ঠিকানা বের করা হয়।

জানা যায় তার নাম শিউলী রাণী সরকার (২৫)। সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দাউরিয়া গ্রামের সতীথ সরকারের মেয়ে। এই শিউলি আজ থেকে পাঁচ বছর আগে স্বামী ফালান সরকার, ছেলে সাফর, হৃদয় ও মেয়ে লিপির কাছ থেকে হারিয়ে যায়। মেয়েটির বর্তমানে ২ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্বামী আছে। মেয়েটি হিন্দু পরিবারের। গত ২২ মে মেয়েটির স্বামী ফালা, ছেলে সাগর, বড় ভাই তপন সরকার ও একজন খালাতো ভাইসহ মোট ৪ জন ঢাকায় এসে মেয়েটিকে সনাক্ত করে।

শিউলীর নতুন জীবন। ফালান তার প্রিয় স্ত্রীকে ফিরিয়ে ‍পায়। পরিবারের কাছে মেয়েটির হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বামী ফালান সরকার নতুন করে সিঁদুর পরিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় বন্ধুরা মিলে অন্তরা নামের সেই শিউলি রানী সরকারকে একটি সেলাই মেশিন, নগদ টাকা ও সোনার নাক ফুল দেন।

আপনাদের কাছে খুব সাধারণ একটা গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যি কি এত সহজ শামীম সাহেবের মহৎ এ গল্পটা? একজন মেয়ের সিথিঁর সিদুঁর ফিরিয়ে দেয়া। সন্তানদের প্রিয় মায়ের আচলে আশ্রয় করে দেয়া, সর্বপরি একটা সুন্দর সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেয়ার আনন্দ হয়তো শামীম সাহেবের মতো মানুষরাই বুঝতে পারে। আর শিউলীর মতো মানুষরা জীবনের মানে খুঁজে পায়।


শেয়ার করুন