চিরবৈরী দুটি দেশের পরমাণু বোমার জনক

একজনের বীরোচিত বিদায়, অন্যজন অবহেলায়

আরটিএনএন

ঢাকা: দু’জনের মধ্যে বহু বিষয়েই সাদৃশ্য। দু’জনই চিরবৈরী দুটি দেশের পরমাণু বোমার জনক হিসেবে খ্যাত। নামেও রয়েছে বেশ মিল।

এদের একজন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এ.পি.জে. আবদুল কালাম, যিনি সোমবার ইন্তেকাল করেছেন, এবং অন্যজন পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান।

দুটি দেশের পরমাণু বোমার কারিগর হিসেবে নিজ দেশে তারা পরম সমাদৃত।

পরমাণু বোমা বানিয়ে তারা দেশের কতটা উপকার সাধন করেছেন সে বিতর্ককে পেছনে ফেলে নিজ নিজ দেশে তারা বীরের মর্যাদায় আসীন।

দু’জন কিন্তু জন্মেছিলেন অবিভক্ত ভারতে। বয়সও কাছাকাছি। এপিজে আবদুল কালাম ৮৩ বছর পরলোকগমন করেছেন। আর আবদুল কাদির খানের বয়স এখন ৭৯ বছর।

১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারত পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশ্বকে চমকে দিতে চেয়েছিল। চমকে গিয়েওছিল বিশ্ব।  তবে তা ছিল ক্ষণিকের জন্য। এর দুই সপ্তাহ পরেই পাকিস্তানও পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

চিরবৈরী দুটি দেশের বহু লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন যাদের হাত ধরে, দেশের জনগণ তাদের বীরের মর্যাদা দিবেই, দিয়েছেও। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারত তার সন্তান আবদুল কালামকে একটু বেশিই সম্মান দেখিয়েছে। তাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ রাষ্ট্রপতির পদ দান করে সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো হয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেসের সম্মিতিতেই তিনি এ পদে আসীন হন। তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ভারতরত্ন পদকও দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বিদায় নেয়ার পরও তার প্রতি সম্মান দেখাতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি ভারত সরকার। আজীবন জ্ঞানের সাধক এই বিজ্ঞানীকে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তার ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে।

সোমবার আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করার পর তাকে নজিরবিহীন সম্মান দেখানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মহান এই বিজ্ঞানীর প্রতি জাতির পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তার সম্মানে সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল কাদির খান

কিন্তু একই গুণের অধিকারী পাকিস্তানী বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান নিজ দেশে অনেক সময় পেয়েছেন লাঞ্ছনা ও অবহেলা।

যার হাত ধরে পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু বোমার অধিকারী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, এক সময় তিনিই ছিলেন অন্তরীণ। সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ পরমাণু প্রযুক্তি ইরান, লিভিয়া ও উত্তর কোরিয়ায় পাচারের অভিযোগে কাদির খানকে গৃহবন্দী করে রাখেন। কথিত এই পাচারের কাহিনী তাকে রাষ্ট্রীয় টিভিতে এসে বলতে বাধ্য করা হয়।

অবশ্য পাকিস্তানের সাহসী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে তিনি অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। কিন্তু এখনো তিনি স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছেন না। নিরাপত্তা সংস্থার কড়া নজরদারি অব্যাহত আছে।

অনেকেই বলছেন, পতিত মোশাররফ তার গদি টিকিয়ে রাখতেই বরেণ্য এই বিজ্ঞানীকে বলির পাঠা বানিয়েছিলেন। মুশাররফের গদি তখন টলটলায়মান। তিনি বুঝতে পারছিলেন পশ্চিমাদের আশীর্বাদ ছাড়া তার গদি রক্ষা হবে না। তখনই কাদির খানের পরমাণু প্রযুক্তি পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

তবে মোশারফের শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই গদি ছাড়তে হয়েছে। আর এখন তার ভাগ্যে জুটছে লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা।

পাকিস্তানের সামরিক-বেসামিরক সরকারগুলো কাদির খানের প্রতি ধারাবাহিকভাবে যথাযথ সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হলেও বিভিন্ন সময় তিনি নিশান-ই ইমতিয়াজ এবং হিলাল-ই-ইমতিয়াজে মত তিনবার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছেন। তিনিই সম্ভবত একমাত্র পাকিস্তানী যিনি এই বিরল সম্মান লাভ করেছেন।

ভারতের রাজনীতিকদের মত পাকিস্তানী রাজনীতিকরা গুণী এই বিজ্ঞানীর প্রতি সবসময় সুবিচার করতে ব্যর্থ হলেও জনগণের হৃদয়ে তিনি মুকুটহীন সম্রাট হয়েই থাকবেন।


শেয়ার করুন