উপকূলে শুটকি উৎপাদনের ধুম

2015_06_30_11_07_19_EwlYaCeFSzDFB92q87FDKLQGfg5V8M_originalএম.এ আজিজ রাসেল :

কক্সবাজারের উপকূলে এখন চলছে শুটকি উৎপাদনের ধুম। ভাল শুটকি উৎপাদনের জন্য রাত দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। বছরের এ সময়ের আবহাওয়া শুটকি তৈরির জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে সুত্র জানায়। সাগর থেকে ধরে এনে নানা পদের মাছ শুকিয়ে তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের শুটকি। শ্রমিকরা কেউ লবণ দিয়ে ধুঁয়ে নিচ্ছেন, কেউ মাছগুলো কাটছেন আবার কেউ মাছ রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। শীত মৌসুম সামনে তাই ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে উপকূলীয় এলাকা গুলোতে। শুটকি উৎপাদনে নিয়োজিত আছেন প্রায় ত্রিশ হাজার শ্রমিক।
গফুর নামে এক জেলে বলেন, এই সময় মাছ পাওয়া যায় ও শুকায় বেশি। তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয় আমাদের। মহেশখালীর জেলে ছবুর বলেন, এখানে ছুরি, লইট্টা, বুলেট, গরু, ফাইসাসহ ২০-২৫ ধরণের মাছ সাগর থেকে এনে শুকানো হয়। নাজিরারটেক ছাড়াও নতুন বাহারছড়া, মগছিতা পাড়া, ফিশারিঘাটসহ মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে শুটকি তৈরি হয়। বর্ষার কয়েক মাস বাদে বছরের বাকি সময় মোটামুটি হলেও সবচেয়ে বেশি শুটকি তৈরি হয় শীতকালে। আর এসময় তৈরি শুটকির মানও হয় ভাল। নাজিরারটেক এলাকার শুটকি শ্রমিক টোকেন বলেন, শীতকালের শুটকি অনেক দিন ভাল থাকে। বর্ষাকালের শুটকি গাঁদ পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। আরেক শ্রমিক অনিল বলেন, এবার আবহাওয়া ভাল, তাই শুটকির মান ভাল হবে। আর এ সময় যে শুটকি উৎপাদন হয় তার ভাল দাম পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মৌসুমে শুধু নাজিরারটেক শুটকি মহালে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন বিভিন্ন জাতের শুটকি উৎপাদন করা হয়। যার বাজার মুল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। উৎপাদিত এসব শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে।
তবে উদ্বেগের বিষয়, পোকা মাকড় থেকে রক্ষা এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য এসব শুটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক। যা স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর খুবই ক্ষতিকর।
নাজিরারটেক শুটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শাহাদাত উল্লাহ জানান, প্রায় একশ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এ শুটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ত। দেশের সবচেয়ে বড় শুটকি মহাল এই নাজিরারটেক। এখানে ব্যবসায়ীও আছেন প্রায় দুইহাজার। এ মহাল থেকে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুটকি। যার বাজার মূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। এসব শুটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক।
জেলা মৎস্য কর্মকতা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষ করে ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুটকি উৎপাদন করা হয়। দেশের মানুষের প্রোটিনের বড় একটি অংশ কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকি থেকে পূরণ হচ্ছে। এমনকি,শুটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।
কীটনাশক ব্যবহারের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন,আমরা নিশ্চিত হয়েছি এখানে উৎপাদিত শুটকির স্থায়িত্ব বাড়ানো এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। কোনো খাদ্য যদি জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর হয়,তাহলে তা ভাবনার বিষয়। নিরাপদ শুটকি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা ইতিমধ্যে নজিরারটেকে ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারীদের নিয়ে বড় একটি সভা করেছি। কয়েকটি এনজিও সংস্থার সহযোগিতায় সেখানে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সারা দেশে এ শুটকি বিক্রির জন্য চলে যায়। শুটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত উপকূলের কয়েক হাজার পরিবার। তবে এবছর বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পরেছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে প্রতি বছর শুটকির চাহিদা প্রায় ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় ৩০ হাজার টনের মত। যার ৩০ শতাংশই উৎপাদন হয় কক্সবাজারে। এখান থেকে শুটকি যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ।


শেয়ার করুন