উন্নয়নের ফল ভোটে দেখার প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জরুরি অবস্থার সময় কারাগার থেকে মুক্তির বার্ষিকীতে রোববার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ আজ যে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, নিশ্চয়ই তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।”

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ছয় দফা দিবসের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার দল জয়ের হ্যাট্রিক করবে।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণের একটি ভবনকে কারাগার ঘোষণা করে সেখানে তাকে রাখা হয়।

পরের বছর ১১ জুন মুক্তি পান শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ এই দিনটি তার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মত বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসেন শেখ হাসিনা।
কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে রোববার সকালে গণভবনে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও শেখ হাসিনার হাতে ফুল তুলে দেওয়া হয়।

গণভবনের ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।

“বাংলাদেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে উন্নয়নটা পাচ্ছে, সেটা প্রত্যেকটা মানুষ উপলব্ধি করছে। একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যে একান্তভাবে প্রয়োজন- সেটা আজকে প্রমাণিত।”

দলীয় নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নিয়ে রাজনীতি করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “রাজনীতিবিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকা।”

জরুরি অবস্থার সময়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ক্রিস্ট্রিন ওভারমায়ারকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দেশে ফিরতে বাধা দেওয়ার কথা এই অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তার মধ্যেই দেশে ফেরার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “মামলা দেবে, ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে আর আমাকে দেশে আসতে দেবে না। এই খেলাই তারা খেলতে চেয়েছিল।… সবাই মামলার ভয়ে পালায়, আমি সেখানে যাচ্ছি মামলা মোকাবেলার করার জন্য।”

২০০৭ সালের ৭ মে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যেদিন দেশে ফেরেন, তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন হাজারও মানুষ।

সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নির্দেশ ছিল কেউ যেন বিমানবন্দরে না যায়… তারা সংখ্যা বেঁধে দিয়েছিল- ১০/২০ জন, তার বেশি যেতে পারবে না।… বাঁধা উপেক্ষা করে কৌশলে বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ ছিল।”

তিনি বলেন, “তাদের যেটা উদ্দেশ্য ছিল, হাজার হাজার মানুষ থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি।”

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়নও সইতে হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা না হলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের যে উন্নতি করা যায়, তা আমরা প্রমাণ করতে শুরু করি।”
কিন্তু এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, আসলে একটা সরকার যদি ধারাবাহিকভাবে না চলে, তাহলে উন্নয়নটা দেখা যায় না।

“আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তার কারণ, আমি দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চাইনি।”

ওই নির্বাচনের আগে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর। তিনি বলে আসছেন, সে সময় ‘গ্যাস বিক্রির চুক্তি করেই’ বিএনপি ক্ষমতায় আসে।

“বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে আর তার বিনিময়ে ক্ষমতা থাকতে হবে; এই রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে করে না,” বলেন হাসিনা।
জরুরি অবস্থার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংসদ প্রাঙ্গণে ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনের সেই সাব জেলের দিনগুলো স্মরণ করে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, “পরিত্যক্ত ঘোষণা করা একটি বাড়ি… সেখানে আমাকে রাখা হয়েছে ১১টি মাস। দোতলা বাড়ি… নিচে পর্যন্ত নামতে দিত না। এমনকি অসুস্থ হলে ডাক্তারও দেখায়নি। কিন্তু আমি কখনো মনের জোর হারাইনি।”

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের সে সময় আন্দোলনে শামিল কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেখেছি চেহারা। ভেতরে থাকলে এক চেহারা, বাইরে থাকলে আরেক চেহারা। আওয়ামী লীগ সব সময় তৃণমূলের দল, তারা কখনো সিদ্ধান্তে ভুল করে না


শেয়ার করুন