উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৩৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ শুরু

ae3faada1bcbc2cc388073c96bee61a0-1-400x224সিটিএন ডেস্ক:
নবম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম ধাপের সহিংসতা-অনিয়মের রেশ কাটতে না কাটতে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন। চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ৮টা শুরু হওয়া এ ভোট গ্রহণ একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ভোটের আমেজ বিরাজ করছে। একইসঙ্গে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্দলীয় প্রতীকেই লড়ছেন। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থীও মাঠে রয়েছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে নেমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো। ভোট গ্রহণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় পৌনে দুই লাখ সদস্য মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের পাহারায় রয়েছেন ২০ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনিয়ম ঠেকাতে ‘চরম ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ধাপে ব্যাপক সহিংসতা ও ভোটের আগের রাতে অন্তত ১৪টি কেন্দ্রে ব্যালটে সিল মেরে বক্সে ঢুকিয়ে রাখার ঘটনায় এবারের নির্বাচনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোনো কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটলে, ওই কেন্দ্রের নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিরোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে পক্ষপাতের দায়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার ওসিকে প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় ১১ জন পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড এবং একজন এসপি ও পাঁচজন ওসিকে শাসিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, যদি অনিয়ম হয়, তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অর্থাৎ কেউ দায়িত্ব এড়ালে বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য যে কোনো আইনসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে আমরা সহযোগিতা করব। আমরা বলেছি, কোনো দুষ্কৃতকারী দুষ্কৃতি করার চেষ্টা করলে তাদের কোনো রকম ছাড় দেয়া যেন না হয়। একই সঙ্গে আইনসঙ্গত যে ব্যবস্থা নেয়া যায়, যেন সব ব্যবস্থা তারা নেয়।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউপিতে ২ হাজার ৬৬২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২১ হাজার ২৫৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৬ হাজার ৪৯৮ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে ১ হাজার ৪৯৩ জন ও স্বতন্ত্রভাবে ১ হাজার ১৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অর্থাৎ প্রতি ইউপিতে গড়ে প্রায় দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে বেশিরভাগ স্থানে আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংসতা ঘটেছিল। এবারই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশংকা করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ ধাপে ৩৩টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব ইউপিতে সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট হবে।
এদিকে বেশ কয়েকটি এলাকায় জয়ে মরিয়া প্রার্থী ও সমর্থকরা এরই মধ্যে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ নিয়ে শংকার সৃষ্টি করেছে। ভোট গ্রহণের আগ থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জেলার নির্বাচনী পরিবেশ। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও সহিংস ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে চলছে আচরণবিধি লংঘন। কোথাও কোথাও প্রার্থী ও ভোটারদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ জমা পড়ছে নির্বাচন কমিশনে। এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে শুধু কাগজে-কলমে নির্দেশনা পাঠিয়ে ইসি দায় সারছে বলেও অভিযোগ প্রার্থীদের।
কমিশনের নেয়া পদক্ষেপে সুষ্ঠু ভোটে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং বেশিরভাগ প্রার্থীরা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে হারে অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, কারচুপির ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগেই প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রার্থীদের এলাকায় থাকতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রার্থীদের এজেন্টদের বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর করেছে। ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। এসব বিষয় কমিশনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন (ইসি), সরকার, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির জন্য এক ধরনের পরীক্ষা। প্রথম ধাপের ব্যাপক সহিংসতার কারণে সমালোচনার মুখে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে সহিংসতার পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায় দলটি। অপরদিকে দলীয় কাউন্সিলের পর বিএনপি এ নির্বাচনে সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষা দিতে চায়। তারা প্রমাণ করতে চায়, জনগণ তাদের ওপর আস্থা রয়েছে। অপরদিকে প্রথম ধাপের ব্যাপক সহিংসতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করাই ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।


শেয়ার করুন