উচ্চশিক্ষা উচ্চ বেকারত্ব

1439265493-400x266সিটিএন ডেস্ক:
একটি প্রতিবেদন বছর খানেক আগের। অন্যটি প্রকাশিত হয়েছে অতিসম্প্রতি। দুটি প্রতিবেদনেই ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বেকারত্বের চিত্র। প্রতিবেদন দুটি বলছে, চাকরির বাজারে সবচেয়ে অসহায় অবস্থানে রয়েছে উচ্চ শিক্ষিতরা। তুলনামূলকভাবে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছেন স্বল্প শিক্ষিতরা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিশ্ব যুব কর্মসংস্থান প্রবণতা, ২০১৫ (গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ) শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে অতিসম্প্রতি।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মধ্যে বেকার বেশি। প্রাথমিক বা এর নিম্নস্তরের শিক্ষা নিয়েছেন এমন তরুণ সমাজের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে কম। উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতীর মধ্যে বেকারত্বের হার ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক তিন শতাংশ। এবং প্রাথমিক বা এর কম শিক্ষিতদের ৫ শতাংশের কিছু বেশি বেকার আছেন।
এর আগে বিশ্বখ্যাত বৃটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চ শিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে। যুদ্ধবিধস্ত দেশটিতে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলংকায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
এদিকে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বি আইডিএস) জানিয়েছে, ২০১০ সালে তাদের তৈরি গবেষণায় যে চিত্র দেখা গেছে তাতে বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ কোটির মতো বেকার যুবক-যুবতী রয়েছে। এ নিয়ে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান মানবজমিনকে বলেন, বেকারের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতদের সংখ্যা বেশি। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে চাকরি না পাওয়ায় এ চিত্র তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে চাকরি দেয়ার আগে এ নিয়ে সন্দেহ করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার মান বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। প্রায় অভিন্ন তথ্য জানান বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। মানবজমিনকে তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে চার কোটি বেকার দেশের জন্য হুমকি। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও অপহরণের মতো ঘটনার জন্য বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি দায়ী। এসব কারণে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক সরকারি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নিয়োগ দিলে দেড় থেকে দুই কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হবে। সরকার চেষ্টা করলেও রাজনৈতিক কারণে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বেকারত্ব এমন ভয়াবহ অবস্থায় গেছে যে বিপুল অংকের টাকা দিয়ে হলেও একটি চাকরি খুঁজছেন বেকাররা। এজন্য পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা, স্বাস্থ্যকর্মী পদের জন্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে রাজি হচ্ছেন তারা।
তিনি জানান, ২০১২ সালের প্রতিবেদনটি ছিল আমাদের শেষ প্রতিবেদন। বর্তমানে এ নিয়ে নতুন করে কাজ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব মতে প্রতি বছর বেকারের সংখ্যা বাড়ে ১৫ লাখ। এ হিসেবে গত ৩ বছরে ৪৫ লাখ বেকার বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গত বছর এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বেকারত্বের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। সংস্থাটির মতে, বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম। স্কুল টু ওয়ার্ক ট্রানজিশন সার্ভিসকে (এসডব্লিউটিএস) ভিত্তি ধরে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করে আইএলও। এসডব্লিউটিএসে মোট ২৮টি দেশের ওপর সমীক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১২ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, তারাও আছেন।
উচ্চ শিক্ষা বা স্নাতক পাস ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সম্পর্কে ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন বলা হয়, ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ লাখ ১২ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেছেন। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন ৫৪ হাজার ১৬০ জন শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে এক বছরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী বের হচ্ছেন। আর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছে ১২ হাজারের কম। এক বছরে ব্যাংক, দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরি ও বেসরকারি চাকরিতে দেড় লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। ফলে প্রায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীকেই চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে এই সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবজমিন


শেয়ার করুন