উচ্ছেদের খবর নেই বন বিভাগের

উখিয়া-টেকনাফে বনভূমিতে ৮ হাজার রোহিঙ্গা বসতি

UK-Rশফিক আজাদ,স্টাফ রিপোর্টার ॥ 

উখিয়া-টেকনাফে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সরকারী বনভূমি দখল করে বছরের পর বছর অবস্থান করতে থাকায় দেশের জন্য এটি একটি বিষফোঁড়া হয়ে দাঁিড়য়েছে। তাই অবশেষে এসব রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরী করে উখিয়া-টেকনাফের ৮০৭৬ পরিবার সহ জেলার ১০হাজার ৬৪৬ পরিবারকে বনবিভাগ উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তা থমকে যায় । যার ফলে পাকাঁ,আধা পাকা, সেমি পাকা সহ বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে বলে স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ।
জানা গেছে, সর্ব প্রথম ১৯৪২ সালে জাপান-ব্রিটিশ যুদ্ধের সময় জাপানী সৈন্যদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে চলে আসে। ১৯৬৫ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় জাতিগত দাঙ্গার কারণে মুসলমানদের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন সীমান্ত অতিক্রম করে এ দেশে চলে আসা শুরু করে। এর পর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯১ সালে সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গার আগমন ঘটে, যা এখনও বিক্ষিপ্তভাবে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে শত শত একর খাস ও বনভূমি দখল করে রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ মাদক বিশেষ করে ইয়াবা, মানবপাচার, মহাসড়কে চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হবে পড়েছে। এলাকার অনেকে বিশেষ করে চোরাচালানের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছাত্রছায়ায় ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলীয় স্বার্থ হাসিলের কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা দক্ষিণ বন বিভাগের অধিনে উখিয়া-টেকনাফের দু’রেঞ্জের অধীনে ৮০৭৬টি রোহিঙ্গা পরিবার সহ কক্সবাজার রেঞ্জ, শিলখালী রেঞ্জ, ধোয়াপালং রেঞ্জ, পানেরছড়া রেঞ্জের ১০ হাজার ৬৪৬ টি অবৈধ রোহিঙ্গা পরিবারকে বনবিভাগ উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলি কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরাট একটি অংশ আমাদের পাহাড়ী ও বনাঞ্চল দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এদেরকে উচ্ছেদ করা আমাদের একটি চলমান প্রক্রিয়া আর এরই অংশ হিসেবে আমরা আবারো রোহিঙ্গা উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগীতা পেলেই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন রেঞ্জে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা পরিবারকে উচ্ছেদের কাজ শুরু করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে বন বিভাগের জায়গাতে জবরদখলকারী সকল রোহিঙ্গাদের আমরা উচ্ছেদের চিন্তা ভাবনা রয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে উখিয়া-টেকনাফ সহ কক্সবাজার জেলা তথা পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবৈধভাবে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে অনেকে নামি-দামি হোটেল-মোটেল, গাড়ী-বাড়ী, ধন-সম্পদের মালিক সহ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে স্থানীয়দের সাথে আত্মীয়তা ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে এ দেশে। অথচ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বসবাস করায় অজুহাতে বাংলাদেশী দাবি করে জাতীয় সনদও সংগ্রহ করে নিয়েছে। অবৈধ এসব রোহিঙ্গাদের ব্যপারে সরকার শ্রীঘ্রই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন উখিয়া রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।


শেয়ার করুন