মিয়ানমারে সরকারী ফলাফলে সুচি’রকে বিজয়

উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে আনন্দ-উল্লাস

imagesশফিক আজাদ, স্টাফ রিপোর্টার :

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিরোধী নেতা অং সান সুচি নেতৃত্বাধীন এনএলডিকে সরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে দেশটির নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশন জানায়, পার্লামেন্টের ২ কক্ষে প্রয়োজনীয় ৩২৯ আসনের বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছে এনএলডি। সংসদের উভয় কক্ষই দলটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই অবশ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রধান সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আগামী রবিবার মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট থান শোয়ে। সেনা প্রধান মিন অং হেইংও এনএলডিকে সরকার গঠনে সহযোগিতার পাশাপাশি দলটির সঙ্গে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটিতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৪৪০ ও উচ্চকক্ষের ২২৪ টিসহ মোট ৬৬৪ আসনের মধ্যে গত রবিবার ৪৯১টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী মোট আসনের ২৫ শতাংশ বা ১৬৬ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। গত ২৫ বছরে মধ্যে দেশটিতে এটিই প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। নির্বাচনে বৈধ ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি। এদের ৭০ শতাংশই ভোট দিয়েছেন। এ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সাড়ে ১০ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন, যাদের মধ্যে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের পর্যবেক্ষকরাও ছিলেন। তারা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন, সুত্র বিভিন্ন মিডিয়া।

এদিকে মিয়ানমারের সরকারী ভাবে ঘোষিত ফলাফলে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী সুচি’র বিজয়ের খবরে তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দ-উল্লাস পরিলক্ষিত হতে দেখা গেছে। পাশাপাশি নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে উখিয়া-টেকনাফ শরনার্থী শিবিরের অবস্থানরত বৈধ অবৈধ ২লক্ষাধিক সহ ছড়িয়ে ছিঠিয়ে অবস্থানরত আরো দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে। কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের আনরেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা হাফেজ জালাল, রাকিব উল্লাহ, নুরুল ইসলাম জানান, মিয়ানমারে দীর্ঘ ২৫ বছর পর গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।

এতে আমরা যারা নির্যাতিন,নিপিড়ীত রোহিঙ্গা রয়েছি, তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছি, দেশে ফেরার ব্যাপারে। যদি এ সময়ে আমাদের দেশে ফেরা সম্ভব না হয়, তাহলে আজীবন আমাদেরকে শরনার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে হবে। একই ভাবে টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের ক্যাম্পের মোঃ আলম বলেন, সুচি হচ্ছে মুসলিমদের নেত্রী, তাই তার কাছে আমাদের অনেক চাওয়া আছে। এ সময়ে যদি আমাদের দুঃখ, দুর্দশা লাগব না হয়, তাহলে আর কখনো সম্ভব নয়। এ ধরনের আরো অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ মন্তব্য করে বলেন, এবার হয়তো মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আসবে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

সুত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৮০ দশকে ১ম দফা, ১৯৯১সালে দ্বিতীয় দফায় প্রায় সাড়ে ৪লক্ষাধিক রোহিঙ্গার এদেশের আগমন ঘঠে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে  তারা আশ্রয় গ্রহন করে। পরবর্তীতে দু’দেশের সফল কুটনীতিক তৎপরাতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো হলেও টেকনাফের নয়া পাড়া শরণার্থী শিবিরে ১ হাজার ৭৭৫ পরিবারের ১৪ হাজার ৪৩১জন রোহিঙ্গা এবং উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ১ হাজার ১৯৪ পরিবারে ৯ হাজার ৮৫০ জন সহ প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা দুই ক্যাম্পে অবস্থান করে রেজিষ্ট্রার্ডভুক্ত হয় বাকী গুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

যা এখনো পর্যন্ত  বিদ্যমান রয়েছে। এতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার জরীপমতে, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবিরে ২লক্ষাধিক বৈধ-অবৈধ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে  এবং পার্শ্ববর্তী বান্দরবান জেলায় আরো দেড় লক্ষাধিক মিলে প্রায় সাড়ে ৩লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। বিজিবি’র কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়েও অনুপ্রবেশ অদ্যবধি চলমান রয়েছে।


শেয়ার করুন