উখিয়ায় বনভূমি দখল, পাহাড়কাটা ও বালি উত্তোলন অপ্রতিরোধ্য

Ukhiya1শফিক আজাদ, উখিয়া :

কক্সবাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত উখিয়া ও সাগর উপকুল ইনানীর বনভূমি এখন লোকালয়ে পরিণত হতে চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা সহ বন প্রহরীদের উৎকোচ বাণিজ্যের ফলে মোট বনভূমির সিংহভাগ জায়গা চলে গেছে জবর দখলের আওতায়। এসব বনভূমিতে গড়ে উঠেছে শত শত পাকা, সেমি পাকা ও কাঁচা ঘর বাড়ি সহ বিভিন্ন প্রকার স্থাপনা। পাশাপাশি খাল, নদী, ছরা থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনের করাল গ্রাসের মুখে শত শত পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলী জমি বিলুপ্ত হচ্ছে। পরিবেশবাদী সচেতন মহলের অভিযোগ ভূমিগ্রাসী চক্রের সদস্যদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, উখিয়ার ঘাট বালুখালী সামাজিক বনায়নের গাছ লুটপাট করে বনভূমি দখল, উখিয়া সদর বনবিটের আওতায় পাহাড় কেটে বনভূমির শ্রেণি পরিবর্তন সহ এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবহমান খাল, নদী, ছরা থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলনের দায়ে বালুখালী বিট কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান, উখিয়া সদর বিট কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও উখিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়াকে চাকুরী থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, ইনানী বনরেঞ্জ কর্মকর্তাকে উখিয়া রেঞ্জ অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি মাসের বেশির ভাগ সময়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে বনভূমি দখল করে পাকা, সেমি পাকা স্থাপনা তৈরি ও পাহাড় কেটে মাটি পাচারের হিড়িক পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানতে চাওয়া হলে ওই বন কর্মকর্তা মির আহমদ লোকবল সংকটের অজুহাত তুলে বলেন, দায়িত্ব পালনে তিনি সচেষ্ট আছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকৃত ভূমিগ্রাসী ও বালি লুটপাটকারী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় খাল থেকে বালি উত্তোলন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে উখিয়ার ঘাট তেলীপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জানান, গত কয়েক দিন ধরে আলী হোছনের ছেলে নুরুল আমিন ভুট্টো সহ বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার তত্ত্বাবধানে তেলিপাড়া খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে এলাকার ২০ একর ফসলী জমিতে চাষাবাদ করতে পারেনি কৃষকেরা। তারা আরো জানান, সম্প্রতি বিএডিসি এ খালটি খনন করে। এমতাবস্থায়, খাল থেকে বালি উত্তোলনের ফলে খালের দু’পাশের বসত ভিটা ও ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বালুখালী, থাইংখালী খাল থেকে আওয়ামীলীগ নেতা সোনা আলীর নেতৃত্বে অবৈধ বালি উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত নুরুল আমিন ভুট্টো এবং সোনা আলী জানান, তারা খালগুলো ইজারা নিয়েছে। উখিয়া ভূমি অফিসের তহসিলদার ফিরোজ আহমদ খাল ইজারা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এ সকল খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সহ পাহাড় কেটে মাটি পাচারের সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান আসামীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


শেয়ার করুন