৪৬১৫জনের মধ্যে ঝরে পড়েছে ২৮৩৬জন ছাত্র/ছাত্রী

উখিয়ায় আনন্দ স্কুলের অনিয়ম,দুর্নীতিই মূলনীতি

imagesশফিক আজাদ,স্টাফ রিপোর্টার :     

বর্তমান সরকার ঝড়ে পড়া ছাত্র/ছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১১সালে এ উপজেলায় শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করেন রস্ক প্রকল্পের আওতায় ১৪৬টি  শিশু বান্ধব আনন্দ স্কুল। এতে প্রথম ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪৬১৫জন। প্রতিষ্টার পর ২/১ মাস ঠিক ভাবে পরিচালিত হলেও এরপর থেকে শুরু হয় ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম। বর্তমানে ১০৯টি স্কুল এবং ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে ১৭৭৯জন।

শিক্ষার্থী প্রাপ্য উপবৃত্তি টাকা আত্মসাৎ, স্কুল গুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মনিটরিংয়ের অভাব, শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, শিক্ষা উপকরণ, স্কুল গৃহের ভাড়া, পোশাকের টাকা থেকে কোটি টাকা লুটপাটের খরব পাওয়া গেছে। এসব লুটপাটে টাকা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তা, কতিপয় শিক্ষক নেতা, শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-ব্যক্তি এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তারাধীন পরিচালিত রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন বা রস্ক প্রকল্পের উখিয়ায় ১৪৬টি স্কুল ছিল। উখিয়ার কতিপয় শিক্ষক নেতা, শিক্ষা অফিসের কর্তা-ব্যক্তি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, পোশাক, শিক্ষা উপকরণ, ঘরভাড়া, শিক্ষকদের বেতন, সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের ৫ম শ্রেণীর সমাপনী ফি সহ প্রভৃতি খাতে বরাদ্দকৃত লক্ষ লক্ষ টাকা বিতরণে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে আতœসাতের ষড়যন্ত্র  করে আসছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

এ প্রেক্ষিতে গত অর্থ বছরের জুলাই-জুন সময়ের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১৮লাখ টাকা বিতরণ না করে কতিপয় শিক্ষক নেতা ও শিক্ষা অফিসের কর্তা-ব্যক্তিদের নিয়ে ভাগভাটোয়ারার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় আনন্দ স্কুল প্রকল্পের দায়িত্বরত প্রজেক্ট কো-অডিনেটর। এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে-আনন্দ স্কুল প্রতিষ্টার সময় যে ১৪৬টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে ৪৫১৫জন ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি ছিল।

তাদের অনুপাতে সরকার ওই প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু মাঝপথে দুর্নীতিবাজ আনন্দ স্কুলের (পিসি) জহিরুল ইসলাম বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ৩৭টি’র মতো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিলেও চুড়ান্ত তালিকা থেকে স্কুলের নামেও ছাত্র/ছাত্রীদের প্রাপ্ত ভাতা বাদ যায়নি। যার ফলে প্রতি বছর ওই সব বরাদ্দকৃত ভাতা শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্তা-ব্যক্তি এবং শিক্ষক নেতা, আর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টরা ভাগভাটোয়ারা করে যাচ্ছে। এতে সরকারের মহৎ উদ্যোগ ঝরে পড়া ছাত্র/ছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবন ফিরিয়ে আনার চেয়ে অন্ধকারে ঢেলে দিচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

বর্তমানে মোট ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ১৭৭৮জন। বাকী ২৮৩৭জন ছাত্র/ছাত্রীর শিক্ষা জীবন চিরতরের জন্য অনিচ্ছিত হয়ে পড়েছে। এতে আনন্দ স্কুল নামে প্রকল্পটির সফলতার চেয়ে ব্যর্থতায় অনেকদুর এগিয়ে গেছে বলে সচেতন এলাকাবাসির অভিমত।

হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মধ্যম হলদিয়া সিকদারপাড়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা তাহেরা বেগম, আফরোজা বেগম, ভাজেকা, রোকসানা, তামান্না সহ উপজেলার ৫০জনের অধিক ছাত্র/ছাত্রীর নামে বেনামে টাকা উত্তোলন করে প্রকল্পের দুর্নীতিবাজ পিসি মাধ্যমে আতœসাৎ করছে বলে কয়েকজন অভিভাবক সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তারা মাষ্টাররোলে ৩৫জন ছাত্র-ছাত্রীকে জনপ্রতি ১০৮০টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১০জন করে শিক্ষার্থীকে ৫০০টাকা করে বিতরণ করে বাকী শিক্ষার্থীর টাকা সহ বিতরণকৃত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকেও ৫৮০টাকা করে আতœসাৎ করার অভিযোগ করেন একই এলাকার আব্দুল গফুরের কন্যা দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়াছমিন আকতার সুমা। একই অভিযোগ রাজাপালং, জালিয়া পালং, রতœাপালং, পালংখালী ইউনিয়নের শিক্ষক/শিক্ষিকা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল শিক্ষিকা অভিযোগ করে বলেন,  অনেক দ্যান দবার করে তাদের বেতন ভাতা নিতে হয় ব্যাংক থেকে । কারণ ব্যাংকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকতাদের সাথে সংশ্লিষ্ট পিসি সখ্যতা রয়েছে। সেহেতু পিসি শিক্ষকদের নিকট থেকে টাকা না পেলে ব্যাংকে বেতন না দিয়ে বারণ করে দেয়। যার কারনে শিক্ষকেরা নানান হয়রানীর শিকার হয়ে আসছে।  শুধু তাই নয়, উপকরণ ও শিক্ষা উপবৃত্তি, পরীক্ষা ফি ও লুটপাট করছে এসব দুর্নীতবাজরা। এখন উপজেলার আপমর জনসাধারণের অভিযোগ, এই আনন্দ স্কুলের কার্যক্রমের দুর্নীতির দেখা শোনা করে কে?

অভিযুক্ত আনন্দ স্কুলের প্রকল্প কর্মকর্তা (পিসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে অনিয়ম,দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই কারণ শিক্ষকেরা চেকের মাধ্যমে তাদের বেতন উত্তোলন করে আর শিক্ষার্থীরা তাদের স্বস্ব উপস্থিতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়। কেউ যদি এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে তাহলে অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।

উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শামীম ভ্ইূয়া বলেন, এই বছর সমাপনীর মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যতদুর সম্ভব চেষ্টা করেছি সঠিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে যথাযথ পাঠদান দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার। আনন্দ স্কুলের সাথে অনেকেই সংশ্লিষ্ট তাই অনিয়ম, দুর্নীতি তারা করলেও করতে পারে কিন্তু এতে আমি নেই। কেউ যদি প্রমাণ পারে আমি একটি টাকা ও আত্মসাৎ করেছি তাহলে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে যাব।


শেয়ার করুন