কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে

উখিয়ায় অপ্রতিরোধ্য হুন্ডি ব্যবসা

download (1)শফিক আজাদ,  উখিয়া :

উখিয়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে সংঘবদ্ধ হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্রের অবৈধ হুন্ডি লেনদেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক একটি হুন্ডি সিন্ডিকেট পুরো কক্সবাজারসহ পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারেও তাদের অবৈধ টাকার লেনদেন বিস্তার লাভ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ এ হুন্ডি ব্যবসার আঁড়ালে সিঙ্গাপুর হয়ে স্বর্ণ পাচার ও চোরাচালানে নেমে পড়েছে এ হুন্ডি সিন্ডিকেট। ফলে সরকার কোটি টাকার রেমিট্যান্স বা বৈদেশিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে প্রশাসন বললেন, এধরনের তাদের কাছে কোন তথ্য উপাত্ত নেই।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সরকারের কঠোর আরোপ করার কারণে বেশ কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডি লেনদেন কমে আসছিল। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসিরা টাকা লেনদেন করায় সরকারের রাজস্ব কোষাগারে রেমিট্যান্স আয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চিহ্নিত হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানসহ নজরদারী এবং অবৈধ ব্যাংকিং লেনদেন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কড়া শর্তারোপ করায় তারা অনেকটা পিছু হটছিল। হঠাৎ করে দেশের সীমান্তবর্তী অবৈধ হুন্ডির লেনদেন বেড়ে যেতে দেখা যায়। যা কয়েক বছরের তুলনায় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন ক্রমশ: বিস্তার লাভ করেছে।

গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক রুমখাঁ গ্রামের আবদুল হাকিমের পুত্র মাহবুব আলম দুবাই ভিত্তিক আন্তর্জাতিক হুন্ডি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। দুবাইতে অবস্থানরত অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের পুরো হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে সে । মাহবুব আলম এর নেতৃত্বে পরিচালিত হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা আন্তর্জাতিক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পৃক্ততা থাকার কারণে স্বর্ণ চোরাচালানেও নেমে পড়ে। দুবাইর প্রভাবশালী চোরাকারবারীর সহযোগি হিসেবে মাহবুব আলম দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত। অনেক প্রবাসীরা জানান, সিঙ্গাপুর হয়ে স্বর্ণের চালান অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। চোরাই পথে আসা এসব স্বর্ণের বিক্রিত টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন জনকে বিতরণ করে থাকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল ইসলাম খাঁন বলেন, হুন্ডির লেনদেন বন্ধ ও এ অবৈধ ব্যবসায় যারা জড়িত তাদের দমনে কঠোর আইন রয়েছে। এ অবৈধ ব্যবসায় জড়িত এমন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

অভিযোগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক হুন্ডি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য মাহবুব আলমের ছোট ভাই বেলাল উদ্দিন পুরো কক্সবাজার জেলায় হুন্ডির টাকা বিলি করে থাকেন। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে আসা এসব টাকা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদেরও প্রকাশ্যে বিতরণ করে। মরিচ্যা বাজারে রয়েছে অবৈধ হুন্ডির টাকা বিতরণের নিজস্ব আস্তানা। ওই আস্তানায় উগ্রপন্থি রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের হুন্ডির টাকার জন্য ভীড় জমাতে দেখা যায়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও সাতকানিয়া কেরানিহাট থেকে এসব হুন্ডির টাকা কোটবাজারের অনলাইন ভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক ও মরিচ্যার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে উত্তোলন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের বিষয়ে নজরদারী ও ব্যাংক একাউন্ট এবং দৈনিক লেনদেন খতিয়ে দেখলে ভয়াবহ হুন্ডি ব্যবসার চিত্র ধরা পড়বে।

সচেতন মহলের অভিযোগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন বিষয়ে নিষেধ করা শর্তেও কি কারণে হুন্ডি ব্যবসার বিস্তার লাভ করেছে তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডি লেনদেন বন্ধ করার জন্য অনেক পন্থা অবলম্বন করলেও এসব চিহ্নিত হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৈরাত্ম বন্ধ হচ্ছে না। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকেই বলেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একটু কড়াকড়ি আরোপ ও চিহ্নিত এসব হুন্ডি ব্যবসায়ীদের গতিবিধি নজরদারীসহ আইনের আওতায় আনা গেলে এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হতো। তবে অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার হুন্ডির লেনদেন অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে বর্তমানে উখিয়ায় হুন্ডি ব্যবসা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এছাড়া ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের মৌলভী নুরুল আমিন, মৌলভী আতিক উল্লাহ, শামসুল আলম সহ অনেকেই সৌদিআরব ভিত্তিক হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা দিন দিন অপ্রীতিরোদ্ধ হয়ে উঠেছে।


শেয়ার করুন