উখিয়ার সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিত্যপণ্য পাচার

 

ukhiya - ctnশফিক আজাদ, উখিয়া :

কোরবানের ঈদকে সামনে রেখে উখিয়ার চিহ্নিত পাচারকারী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যার ফলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাইপণ্য আদান-প্রদানের ধারাবাহিকতা আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে বলে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সুত্রে জানা গেছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্টের সদস্যরা গত ৩মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকার চোরাইপণ্য উদ্ধার করেছে।

সীমান্তের বালুখালী বিজিবি’র সুবেদার মোজাম্মেল হক জানান, কোরবানের ঈদকে সামনে রেখে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে কাপড়জাত দ্রব্যের পাশাপাশি ইয়াবা সহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসছে। তিনি বলেন, বিনিময়ে এদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে জীবনরক্ষাকারী ঔষধের পাশাপাশি ভোজ্য তেল, জ্বালানী তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয়পণ্য সামগ্রী। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভোজ্য তেল সরবরাহ নিয়ে আসার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের দিক নির্দেশনা থাকার কারনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছেনা। তা না হলে যে পরিমাণ ভোজ্য তেল প্রতিমাসে ইউএনও’র ছাড়পত্র নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে নিয়ে যাওয়া ঐসব তেলের সিংহভাগ মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ভোজ্য তেল সরবরাহের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি তার বিজিবি’র সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিত্যপণ্য সহ সব ধরনের পাচার বন্ধে কঠোর দায়িত্বপালন করে আসছে। এরপরও কিছু অসাধূ পাচারকারী চক্র বিবিজি’র চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে পাচার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তিনি শিকার করেন।
খোজখবর নিয়ে জানা গেছে, জ্বালানী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্টান পদ্ম, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের অনুমোদিত উখিয়ায় ১২জন তেল সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রয়েছে। যেসব ব্যবসায়ীরা ইউএনও’র ছাড়পত্রের অনুবলে প্রতিমাসে হাজার হাজার ব্যারেল ভোজ্য ও জ্বালানী তেল সরবরাহ নিয়ে গুদামজাত করে। পরে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রির নামে ওসব তেল পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ায় অধিকাংশ ভোজ্য ও জ্বালানী তেল মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজ সওদাগর, খোরশেদ আলম সওদাগর উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট পাইকারী ও খুচরা তেল বিক্রি করা হচ্ছে। তারা এসব তেল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আমার জানার কথা নয়।
অভিযোগ উঠেছে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা লোকজন জ্বালানী ও ভোজ্য তেল পাচারের সময় কর্তব্যরত বিজিবি বাধা দিলে ঐ সময় ব্যবসায়ী ইউএনও’র প্রদত্ত ছাড়পত্র উপস্থাপন করেন। এ নিয়ে তেলসহ নিত্যপণ্য সরবরাহ গুলো ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। যার পরবর্তীতে সময় থেকে বিজিবি সদস্যরা তেল আটকের প্রতি নিরূৎসাহিত হওয়ায় সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বানের পানির মতো জ্বালানী ও ভোজ্য তেল পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসির অভিযোগ। বিশেষ করে পালংখালী সেলিম, উখিয়ার খোরশেদ আলম,প্রদীপ সেন, বাবুল সেন, সিরাজ সওদাগর বেশির ভাগ মালামাল সরবরাহ দিয়ে থাকে বলে লোকজনের দাবী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, তেল পাচারের ব্যাপারে সু-নিদ্ধিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই আমার পরিবর্তিতে যোগদানকৃত ইউএনও মাঈনুদ্দিন ওই সব ব্যবাসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, যেহেতু আমি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ওয়াসায় বদলী হয়ে গেছি।
সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির সভায় সীমান্তের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য পাচার প্রতিরোধের ব্যাপারে সীমান্তরক্ষীদের উদ্দেশ্যে আরো কঠোর হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রমযান ও কোরবানের ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তের ওপার থেকে ইয়াবা সহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যের চালান পাচার হয়ে আসতে পারে। বিনিময়ে এখান থেকে সার, তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয়পণ্য সামগ্রী পাচার হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যদের আরো সতর্কতা অবলম্বন করে দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ জানান তিনি।


শেয়ার করুন