পে-স্কেলে বেতন বৈসম্য

ঈদের পর শিক্ষকদের লাগাতার কর্মসূচি

Government120150909094610সিটিএন ডেস্ক :

ঈদের পর লাগাতার কর্মবিরতি এবং ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অষ্টম পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের সিনিয়র সচিবের সমান বেতন-ভাতা ও মর্যাদা প্রদানসহ চার দফা দাবিতে তারা এই কর্মসূচি দেবেন বলে জানা গেছে। খবর যুগান্তর।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এসব কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে শিক্ষকরা সরকারকে আলটিমেটাম দেবেন। এছাড়া ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছোটখাটো কর্মসূচি পালন করা হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আজ রোববার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এছাড়া আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরও কর্মবিরতির কর্মসূচি রয়েছে শিক্ষকদের। পে-স্কেল ঘোষণার পর এটা দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি। এর আগে অবশ্য পে-স্কেলে বেতন বৈষম্য দূর করার দাবিতে আরও ৩ দফা কর্মবিরতিসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা আগে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার অনুরোধ করছেন। কিন্তু আমরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসব না। কর্মসূচিও প্রত্যাহার করব না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। কেননা তিনি বলেছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করবেন। আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরে নেবেন। আসলে তিনি (অর্থমন্ত্রী) আমলাদের প্রতিনিধি হয়ে গেছেন, সরকারের নয়। আমলারা যেভাবে বলছেন, তিনি তা-ই আওড়াচ্ছেন। তাই তার সঙ্গে বসা সম্ভব নয়। দেশে বর্তমানে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা শিক্ষক সমিতিও আছে। তবে পে-স্কেলের ইস্যুতে সমিতিগুলো ফেডারেশনগতভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এটির নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
জানতে চাইলে ফেডারেশনের মহাসচিব বলেন, পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতন ও মর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান করাসহ ৪ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। দাবি আদায়ের জন্য আমরা ঈদের পর বিগ কর্মসূচিতে যাচ্ছি। সেটা ধারাবাহিক কর্মবিরতি হতে পারে। আমরা ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার কথাও ভাবছি।
তবে শিক্ষকদের এই আন্দোলন স্থগিত করার লক্ষ্যে আড়ালে সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। আন্দোলনের অগ্রভাগে আছেন আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের শিক্ষকরা। এই বিষয়টিকে বাড়তি সুবিধা হিসেবে নিয়েই ওই সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে। নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের এমন সিনিয়র কয়েকজন নেতা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬-৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে নানাভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বরফ গলানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্যও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে রাজি হননি বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একজন নেতা জানান, তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সৃষ্ট সমস্যার সমাধান কেউ দিতে পারবে না। আরেকজন সিনিয়র শিক্ষক নেতা জানান, অর্থমন্ত্রী ৭ সেপ্টেম্বর অধ্যাপকদের পদোন্নতি নিয়ে কটূক্তিকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণের কথাও বলেছেন। এমন ব্যক্তির সঙ্গে বসাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। আজকের সংবাদ সম্মেলনে তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে না বসাসহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষকরা কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মহাসচিব অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা আগেই বলেছি আমাদের কর্মবিরতি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নয়। এটা আমাদের বেতন-ভাতা আর মর্যাদার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি বলেন, আমরা জানি রাষ্ট্রীয় আর্থিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমাদের দাবি সামান্য। তা পূরণে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। শেখ হাসিনা এখন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের যে দাবি তা কেবল তার পক্ষেই পূরণ করা সম্ভব। অন্য কোনো সরকারের কাছ থেকে আমরা এটা পাব না। তাই একটু চাপ হয়ে গেলেও আমাদের আন্দোলনটা করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পে-স্কেল ঘোষণার পর প্রথম কর্মবিরতি পালিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিনই অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অধ্যাপকদের পদোন্নতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এতে ওইে দিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলে। এই অবস্থায় ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বৈঠকে বসে। ওই দিন তারা আজ ও ১৭ সেপ্টেম্বর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এ দুদিন ক্লাস বন্ধ থাকলেও পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকবে।
এর আগে আন্দোলনে সমর্থন আদায়ের জন্য ফেডারেশন ৫ সেপ্টেম্বর ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে। ভিসিরা ফেডারেশনের কর্মসূচি সমর্থন করেছেন বলে ওই দিনই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ওই দিনের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর পে-স্কেল মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুটি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ফেডারেশনের মহাসচিব জানান, অনুমোদিত পে-স্কেলের দলিল পর্যালোচনা শেষে প্রস্তুতিসহ তারা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।


শেয়ার করুন