কক্সবাজারে ঈদবাজার জমজমাট

sellশাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন :

দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর মাত্র ৬ অথবা ৭দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে এই আনন্দমুখর উৎব। এই ঈদুল ফিতরই মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ আনন্দ আয়োজন। নতুন জামা-ই এই উৎসবের মূল অনুসঙ্গ। তাই ঈদুল ফিতরে আবাল-বৃদ্ধ সকলের একটাই চাওয়া- নতুন জামা চাই চাই। তাই রমজানের একদম শুরুতে না হলেও ১০ রমজান থেকে শুরু হয় কেনাকাটাযজ্ঞ। চলতি বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সে ধারায় কক্সবাজারে জেলা শহরসহ উপজেলায় পর্যায়ে ১০ রমজান থেকে কেনাকাটা প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৫ রমজান থেকে তা একটু একটু জমতে থাকে। ২০ রমজান থেকে জমে উঠেছে ঈদবাজার। সেই থেকে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা কেনাকাটা চলছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ- সব ধরণের মানুষের পদচারণায় গমগম করছে মার্কেটগুলো। কক্সবাজার শহরসহ উপজেলার বড় বড় মার্কেটে এই অবস্থা বিরাজ করছে। ঈদ উপলক্ষ্যে শপিংমল গুলোও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাজিয়েছে নবরূপে। বিশেষ করে নানা ডিজাইনের নতুন পণ্যে সাজিয়েছে পসরা। ক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখা গেছে, আপন টাওয়ার, নিউমার্কেট, কোরাল রীফ প্লাজা, পৌরসুপার মার্কেট, এ ছালাম মার্কেট, হাশেম টাওয়ার, হাজেরা শপিংমল, ফজল মার্কেট, গোলজার টাওয়ারসহ সব শপিংমলে ক্রেতাদের ভিড় অত্যন্ত বেশি। সেই সাথে ক্যাটস আই, ব্যাংগ, নক্ষত্র, বাঙ্গালী বাবুসহ বড় বড় ব্রান্ডের দোকান গুলোতেও প্রচ- রকম ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। এসব মার্কেট ও ব্রান্ডের দোকানগুলো উচ্চ ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন। নিম্ন বিত্তের ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে হকার মার্কেটসহ চাহিদাভিত্তিক নানা ক্ষুদ্র মার্কেট গুলোতে। সেই সাথে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান গুলো থেকেও কেনাকাটা সারছেন নিন্মবিত্তের মানুষরা।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সব ধরনের লোকজন কেনাকাটা করলেও মহিলা ও শিশুদের পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটগুলোতে মহিলাদের জন্য রয়েছে, দেশি শাড়ি, ইন্ডিয়ান কাতান, জামদানি, বালুচুরি, ইন্ডিয়ান সিরিয়াল ডার্লিং তেরে লিয়ে, তোমাকে চাই, কিরণমালার শাড়িসহ কটকটি, বাজিরাও মাস্তানি, অ্যারাবিয়ান হিপ, লেহেঙ্গা-আনটিস দিলু ফোর টাচ ফ্রক বা লং ড্রেস রয়েছে। সব থেকে বেশি চাহিদায় রয়েছে দেশীয় বিনয় ফ্যাশন ক্যাটলক থ্রিপিচ, এ ছাড়াও কামিজসহ বিভিন্ন পোশাক থাকলেও মেয়েদের বাড়তি পছন্দের শীর্ষে আরো রয়েছে লেহেঙ্গা, জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি।
শহরের পানবাজার সড়কস্থ রাজ স্থানের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন জানান, ধুম বিক্রি হচ্ছে। তার শপিংমলে সব ধরণের মানুষের জন্য চাহিদা মাফিক পোশাক রয়েছে। তবে মহিলা ও শিশুদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে পাঞ্জাবিও বেশি হচ্ছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার ঈদ মার্কেটগুলোতে এই অবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি জানান, থ্রিপিচ রয়েছে ১হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের। দেশী শাড়ি রয়েছে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত, ইন্ডিয়ান শাড়ি ১হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত। রাজস্থানে স্বাভাবিক সময়ের ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে বর্তমানে দৈনিক ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন।
পুরুষদের জন্য রয়েছে, নরমাল, নবাব, প্রিন্ট, বুটিক ও হাতে কাজ করাসহ বাহারী ডিজাইনের নানা বৈচিত্রের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির পাশাপাশি তরুণদের জন্য রয়েছে ফিটিং হাফ শার্ট, ফুল শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, চায়না গ্যাবাডিন, ফরমাল প্যান্ট, টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট ও শেরোয়ানি। তবে সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি।
ফজল মার্কেটের অভিষেক প্লাস এর স্বত্ত্বাধিকারী মামুন জানান, তার দোকানে পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট রয়েছে। তবে সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাঞ্চাবি। তিনি জানান, দেশি ও ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দেশি পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি রয়েছে ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত।
শাড়ি, থ্রিপিচ আর যাই বলুন না কেন তার সাথে চাই এক জোড়া সুন্দর নতুন জুতো। তাই শাড়ি, পাঞ্জাবি ও থ্রিপিচসহ নানা পোশাক কিনেই ছুটছে জুতার দোকানে। শহরের সব মার্কেটে রয়েছে ভিন্ন আইটেমের বেশ কিছু জুতার দোকান। সেই সাথে বাটা, এপেক্সসহ নানা ব্রান্ডের জুতার শো-রুমও রয়েছে। সব মার্কেটে জুতার দোকানেও জোরসে বিক্রি চলছে। দাম বেশি হওয়ায় এপেক্স, বাটাসহ ব্রান্ডের দোকানগুলোর চেয়ে নানা আইটেমের জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেশি।
পানবাজার সড়কের মিমি সুজ’র ম্যানেজার জানান, ক্রেতারা পোশাকের পাশাপাশি একজোড়া জুতা কিনতে ভিড় করছেন। দেশিয় তৈরি নানা ঢংয়ের জুতার পাশাপাশি চায়না, ইন্ডিয়ানসহ বিভিন্ন ধরণের বিদেশী জুতার পাওয়া যাচ্ছে। ৩০০ থেকে ৫০০০ টাকার পর্যন্ত জুতা রয়েছে। ক্রেতারা চাহিদা মোতাবেক জুতা কিনছেন।
নতুন পোশাক কিনতে আসা খরুলিয়ার আহমেদ হোসেন বলেন, ‘মনে হচ্ছে পোশাকের দাম গত বছরের মতো স্বাভাবিক রয়েছে। সব কিছুতে স্বাভাবিক দাম বলবৎ আছে মনে হচ্ছে। তবে একেক দোকানে দামের কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে।’
এদিকে ঈদবাজারে নির্বিঘেœ কেনাকাটা করতে ক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য কক্সবাজার শহর, চকরিয়ার চিরিঙ্গা, টেকনাফ, উখিয়ার বড় মার্কেটগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, আনসার সদস্যসহ নানা আইনশৃঙ্খলবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার শহরে ঈদবাজারে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকেও নজরদারি রেখেছে পুলিশ। তারপরও কোন ক্রেতা যদি অনিরাপত্তা বোধ করে তাহলে সাথে সাথে টহল পুলিশ বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলা হচ্ছে।’


শেয়ার করুন