ঈদগাঁওতে মানবপাচার নিয়ন্ত্রণে বিল্লু সিন্ডিকেট

 বিশেষ প্রতিবেদক:
সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওতে মানবপাচারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জাফর আলম বিল্লু। সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে এ গডফাদার হাজার হাজার আদম সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আদম পাচারের মত জঘন্য অপরাধ করে পার পাওয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে পাচার কাজ। প্রতিনিয়ত প্রশাসনের হাতে মালয়েশিয়াগামীরা গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে দালালচক্রের উক্ত দলনেতা। সম্প্রতি কুতুবদিয়া চ্যানেলে মালয়েশিয়াগামী বোঝাই ট্রলার ডুবিতে ৭জনের মৃত্যুর ঘটনায় ৬ দালালকে রিমান্ডে নিলেও উপরোক্ত বিল্লু রয়ে গেছে ধরাছোয়ার বাইরে। সে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তলোক নিয়ে এসে পোকখালীর বাঁশখালিয়া পাড়া, উত্তর পাড়া ও চিংড়ি ঘেরের প্রহরী বাসায় রেখে সুযোগ বুঝে তোলে দিচ্ছে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে।
সূত্রে জানা যায়, জালালাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ফরাজি পাড়া গ্রামের কবির আহমদের পুত্র জাফর আলম প্রকাশ বিল্লু সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। উন্নত জীবনের প্রলোভনে ভুলে তার কথামত মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে অনেকেই সাগরে নিখোঁজ হয়ে গেছে। নারায়ানগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী ও রংপুর সহ সমগ্র উত্তরবঙ্গে রয়েছে তার বিশাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব এলাকা থেকে মালয়েশিয়াযাত্রীদের এনে উপকূলীয় অঞ্চলে জড়ো করে ও সুবিধাজনক সময়ে বোটে তোলে দিচ্ছে বলেও জানান একটি সূত্র। পোকখালী আশুমাঝির ঘাট, চৌফলদন্ডী ঘাট, গোমাতলীর বিভিন্ন এলাকা ও ইসলামপুর খালের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত পাচার কাজ চালিয়ে আসছে উক্ত গডফাদার বিল্লু। গত বৃহস্পতিবার কুতুবদিয়া চ্যানেলে ডুবে যাওয়া মালয়েশিয়াগামী যাত্রীবোঝাই ট্রলারে তার লোকজন ছিল বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় উক্ত বোট থেকে ৭ জনের মৃতদেহসহ আরো ৪৩ জনকে জীবন্ত উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবপাচার আইনের মামলায় বিল্লুর সহযোগী ৬ দালালকে পুলিশ ৫দিনের রিমান্ডে নিলেও পাচারকারী চক্রের তেমন কোন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসেনি। তবে সচেতন মহলের ধারণা, উক্ত ধৃত দালালদের কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসতে পারে বিল্লুদের মত অজানা অনেকের নাম। সম্প্রতি জালালাবাদ পূর্ব ফরাজি পাড়া থেকে বিল্লু সিন্ডিকেটের দ্বারা সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাত্রা করা ৪/৫ জনের খোঁজ মিলছে না। উক্ত এলাকার মৃত নজির ফকিরের পুত্র শাহজাহান, ছগির আহমদের পুত্র নাজেমসহ আরো অনেককে মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে সে। এখন তাদের কোন খোঁজ নেই।
এলাকাবাসি জানান, কুতুবদিয়া চ্যানেলের ডুবি যাওয়া ট্রলারে সলিল সমাধি ঘটেছে তাদের। এ নিয়ে তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ছাড়া এলাকার একটি সুত্র জানান, অপরাধ জগৎতের নায়ক বিল্লু তার সিন্ডিকেট দিয়ে মানবপাচার, চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপর্কম চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়ে।
এ ব্যাপারে জাফর আলম বিল্লুর সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানান, মানবপাচার সে একা করেনা, তার সাথে আরো অনেকেই আছে। কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার সিন্ডিকেটে পোকখালীর শুক্কুর ছেরাং, নুরুল হাকিম মেম্বার, রুবেল, রমজান আলী ও চৌফলদন্ডীর একরাম মেম্বারসহ আরো কয়েকজন রয়েছে। তবে এ আদমপাচার কাজে সুনির্দিষ্ট কোন কোন ঘাট ব্যবহার করা হয় জিজ্ঞাস করলে সে কৌশলে এডিয়ে গিয়ে বলে আমার এখন সময় নেই। কক্সবাজার জেলায় অনেক আদমপাচারকারীরা আছে তাদের বিরুদ্ধেও লেখেন আমিতো আর একা নই বলতে না বলতে মোবাইলের লাইন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে, এলাকার সচেতন মহল দাবী করে বলেন, জাফর আলম বিল্লুসহ তার অপর সহযোগিদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে গেলে বেরিয়ে আসবে আদমপাচারের হরেক রকম কূ-কীর্তি।


শেয়ার করুন