ঈদগাঁওতে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী শ্রমিক


ঈদগাঁও প্রতিনিধি :
সদর উপজেলার ঈদগাঁওতে প্রতিনিয়ত নারী শ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারে গৃহকর্মী হোটেলগুলোতে ধোয়ামুছার কাজসহ বিভিন্ন কাজে মহিলাদের কাজ করতে দেখা গেছে। আবার একটি অংশকে ভিক্ষা করতেও দেখা যায়। বৃহত্তর ঈদগাঁওতে ৭টি ইটভাটায় প্রায় ৩শ নারী শ্রমিক কাজ করছে। আবার ক্ষেত মজুরের সংখ্যা প্রায় ৫শ’র ও বেশি। এদের মধ্যে অনেকে এমন, একদিন কাজ না করলেই না খেয়ে থাকতে হবে। জীবন-জীবিকার তাগিদে কেউ মাটি কাটছেন, আবার কেউ ইটভাটার মত কঠিন কাজ আর আগুনের সাথে সংগ্রাম করছে। লক্ষ্য একটাই, সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর পর একমুঠো চাল-ডাল নিয়ে বাড়ী ফেরা। বৃহত্তর ঈদগাঁওতে আসলে কতজন নারী শ্রমিক আছে কারো কাছে কোন পরিসংখ্যান নেই। তাদের বেশির ভাগই বিধবা, না হয় স্বামী পরিত্যাক্তা। এলাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নারী শ্রমিকদের সাথে আলাপে বেরিয়ে আসে তাদের দুঃখ দুর্দশার কাহিনী। ঈদগাঁওর ৭টি ইটভাটায় রয়েছেন ৩ শতাধিক নারী শ্রমিক। পুরুষের পাশাপাশি ইটভাটায় নারীরাও কাঠ ফাটা রোদে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছেন প্রতিদিন। তাদের অভিযোগ, তারা পুরুষ শ্রমিকদের সমান শ্রম দিলেও তাদের মজুরী কম। নারী বলেই পুরুষের তুলনায় ন্যায্য মজুরীও জুটছে না তাদের কপালে। তার পরও এ বিষয়ে কিছু বলার সাহস তাদের নেই। বলেই বা কি হবে? একদিন কাজে না গেলে বাড়ির সবাইকে উপোষ থাকতে হবে। এমন হতাশার কথা সবার মুখে। নারী শ্রমিক হাজেরা, মাবিয়া, গোলজার, ফরিদার মত ১২জনের সাথে কথা হয়। তাদের একজন মাবিয়া খাতুন। বয়স ৪০ এর কাছাকাছি। সদর উপজেলার ঈদগাঁও ভাদিতলার জহিরের মেয়ে। মাবিয়ার স্বামী ছৈয়দ ৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সন্তানদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে। কখনো মাটি কাটার কাজ, কখনো ইটভাঙ্গার কাজ, আবার কখনো বন জঙ্গল থেকে লাকড়ি সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকেন। তার দুঃখ কষ্টের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলে সে। আঁচল দিয়ে পানি মুছার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন শুধু। জাগির পাড়া গ্রামের ফরিদা জানান, ৩ সন্তান বাড়িতে রেখে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেছে। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করতে হয়। তারা শুধু জানালেন, একদিন কাজ বন্ধ থাকলে সেদিন না খেয়ে থাকতে হবে। তাদের একটাই কামনা, এমন কপাল যেন আর কারো না হয়। আর জীবন সংগ্রাম করে অনেকটা পথ পার করতে হয়েছে তাদের। জীবনের শেষদিকে এসেও কষ্ট তাদের পিছু ছাড়ছে না। যেখানে ১০ বছর আগে পুরুষ শ্রমিকেরা বিভিন্ন মিল-কারখানায় কাজ করতেন। আজ সেসব প্রতিষ্ঠানে নারীরা পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি শ্রম দিচ্ছে অভাবের দায়ে। বৃহত্তর ঈদগাঁওতে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি। এসব পরিবার সারা বছরই অভাব অনটনের সাথে লড়াই করে আসছে। সংসারের অভাবের কারণে ১৫-১৬ বছরের মেয়েরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে গার্মেন্টস মুখী প্রতিবছর অসংখ্য নারী। আজকাল নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করতে গেলে নানা ধরণের হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমনও অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত কাজ দেয়া সত্ত্বেও আপত্তিকর প্রস্তাব দেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট লোকজন। উল্লেখ্য, সাধারণত শহরাঞ্চলে অথবা গ্রামাঞ্চলে কোথাও নারীদের কোন শ্রমিক সংগঠন নেই।


শেয়ার করুন