ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল সেফহোমে!

ইমাম খাইর :
বহুল আলোচিত সীমান্তের শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিমকে অবশেষে সেফহোমে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার (২৫ মে) দিবাগত রাতে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তবে, এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রবিবার সন্ধ্যায় হাজি সাইফুলের এক ভাগ্নেকে ফোন করলে বলেন, মামা দেশে এসেছেন, শুনেছি। আজ কক্সবাজার আসার কথা। এর চেয়ে বেশি জানিনা। আর যাই হোক, একজন আলোচিত মাদক কারবারিকে প্রশাসনের কব্জায় আনতে পারাটা বিরাট সফলতা মনে করছে সচেতন মহল।

দেশে ইয়াবা বিরোধী অভিযানের পর গা ঢাকা দেয় মোস্ট ওয়ান্টেড হাজি সাইফুল করিম। বিশেষ কৌশলে আশ্রয় নেয় সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমারে। মাসখানেক সময় ধরে ওখানে বেশ নিরাপদে ছিল সরকারের মাদক কারবারির তালিকার শীর্ষ স্থানীয় এই ব্যক্তি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, হাজী সাইফুলের স্বজনসহ ৩ থেকে ৪ জনের একটি টিম দুদিন আগে মিয়ানমারে যায়। আত্মসমর্পণ বিষয়ে তার সাথে খোলামেলা কথা বলে। তারাই শনিবার রাতে সাইফুলকে নিয়ে এসে বাংলাদেশের প্রশাসনের কাছে তুলে দেয়।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের ছেলে সাইফুল করিম মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই ব্যবসাক্ষেত্রে সফল হন। ২০১৭ সালে খেতাব পান ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) পদবী।
মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সিআইপি শিল্পপতি সাইফুল এখন শত কোটি টাকার মালিক। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর এই ফুলে-ফেঁপে ওঠা আলাদিনের চেরাগের নাম ইয়াবা।
সুত্র জানায়, টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির পাঁচ ভাই ও আত্মীয়দের বাইরে একমাত্র সাইফুলেরই রয়েছে নিজস্ব ইয়াবা সিন্ডিকেট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএসসি) ও গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার ডিলার এই সাইফুল করিম।
জানা গেছে, কক্সবাজারের ব্যায়বহুল এলাকা কলাতলী পয়েন্টে হোটেলও নির্মাণ করেছেন তিনি। রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বিস্তৃত তাঁর ব্যবসা। টেকনাফের বাসিন্দা হলেও বাস চট্টগ্রামে। ‘এস.কে. ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। গার্মেন্ট, আমদানি-রপ্তানি, কার্গো ও জাহাজের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। চট্টগ্রাম শহরের কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে রয়েছে তাঁর একাধিক অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডুর প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে দেশে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসা এবং চট্টগ্রামে নিয়ে পাচার করার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে সাইফুলের। তাঁকে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারিও বলা হয়।
২০০৭ সালেও সাইফুল করিম স্বল্প বেতনে একটি আড়তে কাজ করতেন। সেই সাইফুল এখন অঢেল সম্পদের মালিক। প্রতিষ্ঠা করেছেন এস কে জি গ্রুপ নামে কোম্পানি।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর টেকনাফে ইয়াবাবিরোধী শক্ত অভিযান শুরু করে পুলিশ। সেই অভিযানে হাজী সাইফুল করিমের রম্য অট্টালিকাসহ ইয়াবা কারবারিদের সুরম্য অট্টালিকাগুলোতে (ইয়াবা বাড়ি হিসাবে পরিচিত) আঘাত হানা শুরু করে। ওই সময় দুইদিনে পুলিশ টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা ডন সাইফুল করিমের বাড়িসহ তিনজন ইয়াবা কারবারির অট্টালিকা বুলডোজার দিয়ে আংশিক ভেঙ্গে দেয়া হয়।


শেয়ার করুন