ইয়াবা উঠছে ‘ক’ শ্রেণিতে, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, তা হলে ইয়াবা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচার রোধের কাজকে আরও ফলপ্রসূ করতে সরকার আইন ও বিধি বিধান যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এতে মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞা আধুনিক করা হচ্ছে।

ইয়াবা এতদিন ‘খ’ শ্রেণিতে থাকলেও এখন এই নেশার বড়িকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বর্তমান আইনে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত মাদকদ্রব্যের তালিকায় রয়েছে হেরোইন, কোকেন, প্যাথেডিন, মরফিন, অপিয়াম ইত্যাদি। এই মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সর্বনিম্ন শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড।

‘খ’ শ্রেণিভুক্ত মাদকের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ক্যানাবিস ইত্যাদি। এই মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৫ বছর কারাদণ্ড।

অনুষ্ঠানের সভাপতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাদকের তালিকায় সীসাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এখনকার আলোচিত মাদক ইয়াবা মূলত মিয়ানমার সীমান্ত দিয়েই আসে। এজন্য টেকনাফ উপজেলায় একটি শক্তিশালী ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জামাল জানান।

মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার এখন বেশি
মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার এখন বেশি

কক্সবাজারে এমন ইয়াবা ধরা পড়ছে নিয়মিতই
কক্সবাজারে এমন ইয়াবা ধরা পড়ছে নিয়মিতই

মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি জেলায় ৫০ শয্যার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের পাশপাশি মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা সংশোধন করা হয়েছে।

মাদকমুক্ত দেশ গড়তে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে জনবল বাড়ানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় একজন করে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার নেতৃত্বে অফিস স্থাপন এবং যানবাহন-ওয়্যারলেস দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, মাদকদ্রব্যের ক্রমাগত বিস্তারের কারণে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে পরিণত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী যে সব দেশে মাদক উৎপাদিত হয়, বাংলাদেশ তাদের একটি চক্রের মধ্যে অবস্থিত। ফলে মাদক প্রবেশ ও সমাজের সর্বস্তরের কিশোর যুবক বয়স্কদের মধ্যে মাদকের অপব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

দেশে মাদকাসক্ত নারীর সংখ্যা বেড়ে তা এখন মোট আসক্তের প্রায় ২০ শতাংশ বলেও তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য এডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার এবং ড. অরূপ রতন চৌধুরীও ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মাদক নির্মূলে অবদানের জন্য পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে মাদক নির্মূলে অবদানের জন্য পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৮৭ সালে ২৬ জুনকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।

এবার ২৬ জুন ঈদুল ফিতর হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ২৬ জুলাই এই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়কে মাদকবিরোধী মানববন্ধন হয়। এরপর একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানস্থল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যায়।

অনুষ্ঠানে বার্ষিক মাদক প্রতিবেদন-২০১৬ প্রকাশ এবং স্যুভেনিরের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণে অবদানের জন্য, চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে মাদক বিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নে অবদান রাখার জন্য ‘ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন’কে প্রথম, ‘বাংলাদেশ ইউথ ফাস্ট কনসার্ন’কে দ্বিতীয় এবং ‘এসকাস’ নামে সংগঠনকে তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়।

ঢাকা আহছানিয়া মিশন ১৯৯০ সাল থেকে মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০০৪ সাল থেকে মাদকাসক্তদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। বর্তমানে গাজীপুর এবং যশোরে পুরুষ এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালনা করছে।


শেয়ার করুন