ইসির লোক রেখে প্রশাসন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা!

Pouoshovha_Elecktion_5871309612সিটিএন ডেস্ক:
নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল থাকা সত্ত্বেও ১৭৫টি পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠপর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) অধিকাংশেরই কর্মস্থল নির্ধারিত হয় ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-সাংসদদের পছন্দ ও সুপারিশে। এ কারণে এই কর্মকর্তারা কমিশনের চেয়ে মন্ত্রী-সাংসদদের অনুরোধ-নির্দেশই বেশি মানেন।
গতকাল ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তাতে দেখা গেছে, জেলা সদরের ৪২টি পৌরসভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকেরা (সার্বিক)। কমিশন সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন ৫৯টি পৌরসভায়। বাকি ১৩৩টি পৌরসভায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউএনওদের। তবে সব কটি পৌরসভাতেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হবে।
কমিশন সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে সাত শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৪টি জেলায় একজন করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আছেন। এঁদের ১৯ জন উপসচিব এবং ৪৫ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার। সহকারী সচিব পদমর্যাদার উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আছেন ৫১৪ জন। উপসচিব পদমর্যাদার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আছেন ১০ জন।
মাঠ কর্মকর্তাদের মতে, অতীতে কমিশনের নিজস্ব জনবল ছিল না বলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সব ক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশ মানেন না। সে জন্য নিজস্ব জনবল দিয়ে নির্বাচন করার জন্য গত আট বছরে কমিশন সচিবালয়ের জনবল কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, কাজ করার সুযোগই যদি না দেওয়া হবে, তবে তাঁদের কেন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লা বলেন, কমিশনের কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থে অপপ্রচার করছেন। তাঁরা দায়িত্ব নিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে যাবে তার নিশ্চয়তা কী? সরকার আর কমিশন চাইলে নির্বাচন এমনিতেই সুষ্ঠু হবে।
তবে এর সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার জন্য যত ধরনের কৌশল আছে, সবই নেবে। সেই কৌশলের একটি অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া যেত। কিন্তু সেই সময় এখনো আসেনি। সে জন্য প্রশাসনের লোক নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কমিশনের লোক দিয়ে নির্বাচন করানো সম্ভব হবে।
সচিব জানান, ২০১০ সালের নির্বাচনে জেলা সদরের পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং অন্যান্য পৌরসভায় ইউএনওরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা থেকেই কমিশনের জনবল বাড়ানো হয়েছে। এতে সুবিধা হলো, তাঁরা কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবেন। অন্যদিকে প্রশাসনের লোকদের দিয়ে করালে নির্বাচনের মাঠ অনেক ক্ষেত্রে কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কারণ জেলা প্রশাসক বা ইউএনওরা মন্ত্রী-নেতাদের কথামতো কাজ করেন বা করতে বাধ্য হন। এর অন্যতম কারণ সরকার তাঁদের পদোন্নতি দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই বলেই এখনো এভাবে কমিশনের পরিবর্তে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ ঘটছে। প্রথম আলো


শেয়ার করুন